বেবী সাউ-এর দীর্ঘ কবিতা

বেবী সাউ-এর দীর্ঘ কবিতা

মেয়েজন্ম

মা, তুমি বলেছ ঘরে ফেরবার কথা—

তুমি বলেছ মা, একবার যেন এসে লিখে দিয়ে যাই শৈশবের জিজ্ঞাসার অতৃপ্ত উত্তর—
ওপাশ থেকে ভেসে আসা অতীত
এপাশে জন্ম নেওয়া বিরাট জিজ্ঞাসা চিহ্ন
আর যা হতে চেয়েছিলাম,
সারাটা জীবন ধরে
যা হতে চায় একটা মেয়ে—
একটা ঘর, একটা সুখ দুঃখময় সান্ত্বনার সংসার
পরিপূর্ণ এক নারী কিংবা শৈশবের
মেয়ে নয়, ছেলে নয় এমন এক সন্তান।

যেন আরেকবার এসে দেখে যাই জন্মস্থান, জন্মভূমি—
পরিযায়ী পাখিদের মতো আরেকবার ছুঁয়ে আসি ঔপনিবেশিক সভ্যতার মায়া…

মা, তোমার ডাক মানেই তো
তোমাকে ছুঁয়ে থাকা গ্রীষ্মের দুপুর
তোমার সস্তা পাউডারের গন্ধ
তোমার বিনিদ্র রাত্রের ফুঁপানো নিশ্বাসের শব্দ
সকালে উঠে কিছু না হওয়া একটা স্বাভাবিক জীবন
ভাতের গন্ধ, হলুদের দাগ
ক্ষতের চিহ্নটি মরা মাছের চোখের মতো
হা হা করে হেসে ওঠা…সব… সব

পুরনো, শ্যাওলাময় দেওয়ালের গায়ে হাত দিয়ে যেন দেখে নিই, আরেকটিবার
সেইসব মেয়েজন্ম
যুগ যুগ ধরে চলে আসা মেয়েজন্ম
নির্যাতনের, নিপীড়নের, সহ্যের এবং
এবং উপেক্ষার

তোমার ডাক মা
আমাকে বার বার
বারবার আমাকে
সীতার মতো পবিত্র অথচ অসহায় করে তোলে
বারবার আঙুল তুলে শাসনের শব্দ শোনায়
শোনায় ক্ষেত এবং খামার
এই নদী
বনভূমি
লোধাশুলি জঙ্গলের অধিকার,মা-টির দায়িত্ব
কোনটাই আসলে মেয়ের নয়, আমার নয়
এই জ্যোৎস্না মণ্ডিত ফুলডুংরির রহস্য
সুবর্ণরেখার জলে সাঁতারের অধিকার
কোনটাই আমার না…
আমি শুধু অন্যের সম্পদের গর্বটুকু নিয়ে চলে যেতে পারি।
আমি শুধু মরে যেতে পারি এসবের অধিকার চেয়েছিলাম বলে!

আমার ঘর নেই
বাড়ি নেই
এতবড় পৃথিবীর সামান্য স্থানের অধিকারী নই আমি
আমার নিশ্বাস, প্রশ্বাস
জলবায়ু, বৃষ্টি
অন্যের কুক্ষিগত

এ রূপ আমার না
এ শরীর আমার না
আমার অনিচ্ছে ইচ্ছে
আমার অপ্রাপ্তি প্রাপ্তি
সবেতেই জুড়ে যায় কোনো না কোনো সম্রাটের নাম
আর আমি তাঁর আজ্ঞাবাহী নারী মাত্র

আমি চালিত বোটের মতো
স্রোত কেটে শুধু
ভেসে যেতে পারি
আমি পুরুষের প্রেমে মরে যেতে পারি
আমি আজন্ম উপেক্ষা নিয়ে তৈরি করে দিতে পারি সৃষ্টি এবং প্রজন্ম

প্রকৃতিকে নারী বলে ভেবেছিল যারা,
যারা ভেবেছিল—ফুলে ফলে শস্যে ভরে ওঠা এই পৃথিবীর জলবায়ু —সবটাই আসলে নারী—
তারা চেয়েছিল আসলে শুধুই
ভোগ আর ভোগ আর ভোগ—

জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো তাদের চোখ,
বেগবান ব্রহ্মপুত্রের মতো তাদের লালসার স্রোত
জঙ্গলের শ্বাপদের মতো তাদের নখ, থাবা, মুখ
ভয় পাই
কুঁকড়ে উঠে আমার জরায়ু
আমার জন্ম ঘিরে তৈরি হয় লাঙলের দাগ, মাটির শরীর

আমার লুকানো মুখ
আশ্রয়লোভী তোমার আঁচলে, মাগো
চেনা গন্ধ পেলে মৃত্যু যেমন লাফিয়ে পড়ে জীবনের কোলে
চেনা গন্ধ পেলে হতাশার প্রদেশ থেকে বেরিয়ে আসে আনন্দের পৃথিবীতে
ঠিক সেভাবেই মা,
আজ এতদিন পরে
তোমার আঁচল
তোমার আঁচলের নুন হলুদের মিশ্রণ আমাকে বারবার বেঁচে উঠতে সাহায্য করে
অনাকাঙ্ক্ষিত এই পৃথিবীর বুকে মনে হয় লিখে রাখি কিছু অব্যক্ত অক্ষর
শব্দ দিয়ে গড়ে তোলা প্রপিতামহদের কাব্য এবং মৌলিক নিয়ম
ভেঙে জেগে উঠি আরেকবার তোমার
শুধু তোমার ফসল হয়ে;
মেয়ে হয়ে —
এই বিরাট পৃথিবী
আর তুমি আর আমি…
কেউ আমার পিতা নয়
ভাই নয়
কোনো পুরুষের প্রেম আমাকে দগ্ধ করতে পারেনি এই রৌদ্রস্নাত সকালের পথে

আর তখনই আমার মৃতদেহ নিয়ে গুলি ডাণ্ডা খেলা শ্বাপদের দল
হাতে পরিয়ে দিচ্ছে মোটা শেকলের চাবি
আমার জরায়ু পথে ঢুকে যাচ্ছে তপ্ত শলাকার রং
সেটাকেই গয়না ভেবে,
নারীর ভূষণ ভেবে,
চিরন্তন প্রেমের লোভে আমিও কেমন ঝাঁপিয়ে পড়ছি আগুনে

দেখো মা, আমার এই দেহ
আমার এই বস্ত্র
চুনবালি ইঁট সর্বস্ব গৃহ
ধ্বসে পড়া নিদ্রাহীন রাত
এবং একটা আশঙ্কাময় সকাল
কাটাতে কাটাতে
আমি উড়ে যাচ্ছি বহু বহু শতাব্দীর কুণ্ডলী পাকানো অশ্রুস্রোতে

আজ এই ঘরের ফেরার ডাক
শৈশব কৈশোর খুঁজে পাওয়ার আরেকটি উপলক্ষ
আমাকে লোভী এবং জীবনের প্রতি লোলুপ করে তুলছে
মনে হচ্ছে শরীর ভুলে
গোপনীয় ক্ষত ভুলে
দিনমান আলোর বৈরাগ্যে
আরেকবার স্বপ্ন দেখি পরী হওয়ার
দেখি তেল নুন হলুদের দাগে
আরেকবার কেমন মা হয়ে ওঠে সময়ের ধারা

আর গর্বিত আলোর মত
একা
আর
একা
আর
একা
বোঝার চেষ্টা করি
তোমার চোখের নীচে কালি আর
অসংখ্য নিদ্রাহীন রাতের কাহিনিগুলি…

রাত ফিসফিস করে বলে—
চন্দ্রাহত পথ চিৎকার করে বলে—
ঝাঁপাও ঝাঁপাও ফিনিক্সের ডানা
সশব্দে আরেকবার
নিজেকেই লিখে ফেল নিজে…

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar

    সবগুলোই অসাধারণ কবিতা। চেতনা জগতকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes