
কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ১৬ তম পর্ব
রূপশ্রী ঘোষ
অভয়া বলুন বা তিলোত্তমা, ধর্ষিত এবং নিহত হল প্রকৃতপক্ষে মানুষের অস্তিত্ব। শুধু এ রাজ্য নয়, সারা দেশেই কান পাতলে শোনা যাবে এমন ধর্ষণ এবং নিষ্ঠুর হত্যার খবর। আবার পাশাপাশি, ভুবনায়নের তিরিশ বছর অতিক্রান্ত। ভুবনায়নের সংস্কৃতি, ভোগবাদের রাজনীতি, অবদমিত যৌনতার এবং পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদের সংমিশ্রণের পাশাপাশি আমরা দেখতে পাচ্ছি এক ছদ্ম-আধুনিকতাকে প্রগতিশীল বলে প্রচার করার পুঁজিবাদী সংস্কৃতি। আবার তার সঙ্গে সঙ্গে এও দেখতে পাচ্ছি, যারা এই রাজনীতির বিরোধিতা করছে, তারাই জীবনে এই রাজনীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এই নোংরা সংস্কৃতিকে জীবনে অনুসরণও করছে। এক সামগ্রিক অবক্ষয় এবং অধঃপতন আমাদের সামাজিক জীবনে। নৈতিক অবক্ষয় আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। আমরা এই অবক্ষয়কেই জীবনের উৎসব ভেবে নিচ্ছি। আর তলিয়ে যাচ্ছি এক ভয়ংকর হেজিমনির মধ্যে। লিখলেন রূপশ্রী ঘোষ।
সমসময়ের দিকে তাকালে মনে হয় শুধুই অবক্ষয়। এ কথা আমরা শুনি এবং বলিও যে এত বেশি অবক্ষয় কি আগে কখনো ছিল? ছিল নিশ্চয়, কিন্তু কীভাবে ছিল? তার রূপবদল হয়েছে। আঙ্গিকের বদল হয়েছে। কিন্তু চোরাস্রোতের মতো লুকিয়ে থাকা এই অবক্ষয়ের বীজ একইরকম ভাবে রয়ে গেছে। বরং বিশ্বায়ন পরবর্তী আমাদের এই সমাজব্যবস্থায় ভোগের দর্শনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের নৈতিক অবক্ষয় যে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এই তো আমরা প্রত্যেক দিনই খবর পাচ্ছি বিভিন্ন জায়গায় ধর্ষণের, খুনের, আধিপত্যবাদের। এই আধিপত্যবাদের সঙ্গে মিশে গেছে অবদমিত যৌনকামনা। জীবনানন্দ দাশ যেভাবে ‘যৌনএকাগ্র’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন, এই সময়ের দিকে তাকালে, যেন এই শব্দটির কথাই প্রথম মনে আসে। আর আশ্চর্যের কথা, এই অবক্ষয়কে প্রগতিশীলতার মোড়কেও দেখা হয়। প্রকৃত আধুনিকতা, প্রকৃত প্রগতিশীলতা, প্রকৃত রোম্যান্স, প্রকৃত যৌনতা যে সৌন্দর্যের সত্য ও সত্যের সৌন্দর্য নিয়ে আসে, তা আমাদের সমাজ থেকে, আমাদের জীবন থেকে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে।
বাচ্চাদের রিলস দেখা, বাচ্চাদের নিয়ে রিলস বানানো, তাদের কটু কথা বা ইত্যাদি প্রভৃতি শেখানো নিয়ে পরচর্চার একটা পর্ব আগে লেখা হয়ে গেছে। এখন একটু বড়োদের রিলস দেখা নিয়ে লেখা যাক। আমার এক সহকর্মী এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, ধুর এখন তো ফেসবুক খোলাই যায় না। খুললেই কি সব বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি মহিলাদের রিলস দেখা যায়। তাদের সব যেমন চেহারা তেমন রুচিও বটে। জামাকাপড় প্রায় না পরা, এদিক দেখা যাচ্ছে ওদিক দেখা যাচ্ছে সব ইয়াআআ বড়ো বড়ো মোটা মোটা বলে, কথাটা আর শেষ না করেই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। বাকি সহকর্মীরা হই হই করে উঠে তাঁর পিছনে লাগলেন সবাই। দেখতে তো তোমার ভালোই লাগে, না ভালো লাগলে দ্যাখো কেন? আর যদি না দেখে থাকো তাহলে বর্ণনা দিচ্ছ কীভাবে? এইসব বলতে থাকলেন। তিনি একটু অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করেই বললেন, আরে না না ভালো করে ওসব দেখতে হয় না, ফেসবুক খুললেই ওসব বৌদিদের দেখা যায়। তিনি কারো বৌদি কিনা জানা নেই। তবে খুব চেনা পরিচিত মুখ এসব রিলস বানিয়ে অমন পাবলিক করবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু কিছু মহিলা আছেন তাঁরা কারো বৌদি, কারো বউ কারো বা বন্ধু, বোন, দিদি সবই তাঁরাও এমন ভিডিও বানান, কিন্তু ওপেন প্লেসে দেন বলে মনে হয় না। তাঁদের পছন্দের মানুষদেরই পাঠান। কিন্তু খুব সত্যি কথা ছেলেরা (সবাই নন, মাফ করবেন) এমন মেয়েই পছন্দ করেন। ন্যাতপেতে, প্যাতপেতে ভেতো বা ভীতু বাঙালি মার্কা মেয়ে কেউ পছন্দ করে না। কেউ কেউ ভুল করে যদি বিয়ে করেও ফেলেন তারপর আফসোস করতে করতে লুকিয়ে লুকিয়ে ওই নিম্ফোম্যনিয়াকদের কাছেই যান আবার। এই ধরনের নিম্ফম্যানিয়াক মেয়ে নাহলে নাকি চলে না। এই মেয়েদের যাঁরা পছন্দ করেন বা একাধিক মহিলার সঙ্গে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত থাকেন সেসব পুরুষদের কী বলে জানা নেই। কিন্তু সেইসব মেয়েরা যদি পার্মানেন্ট প্রেমিকা হয়ে যায় মুশকিলটা তখনই ঘটে। খুব পরিচিত একটা ঘটনা, এরকমই এক নিম্ফোম্যানিয়াক মহিলা একজনের প্রেমিকা ছিলেন। এবার প্রেমিক জানতে পেরেছেন তাঁর প্রেমিকা অজস্র ছেলের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকেন। এটা জানতে পেরে তিনি প্রচণ্ড রেগে যান। প্রেমিকাকে গালাগাল দিয়ে বসেন, কেন তাঁর এত যৌন খিদে বলে তুলনা দিয়ে এবং যোনিতে নাকি লাথিও মেরেছেন। ব্যাস! এবার যায় কোথায়, তিনি তো বেশ দজ্জাল এবং জাঁদরেল মহিলা, প্রেমিককে বলেছেন, আমার যোনি আমার স্তন বেশ করব আমি সবার সঙ্গে শেয়ার করব তোর বাবার কী? তোর বাবার সঙ্গেও করতে পারি দেখবি? ডাক তাকে (যোনি আর স্তনটা আপনারা খুবই চাঁচাছোলা ভাষায় পড়বেন, কারণ আমার লিখতে আপত্তি আছে। যাঁরা এসব বলতে পারেন তাঁরা যেভাবে বলেছেন সেভাবে তাদের ভাষাতেই পড়ে নিন)। বলেই ছেলেটিকে একেবারে চারশো আটানব্বইএর এ। ব্যাস! বেচারা প্রেমিক পজেসিভ হতে গিয়ে একেবারে কেস খেয়ে গচ্চা-টচ্চা দিয়ে নাকানি চোবানি হয়ে ল্যাজে গোবরে অবস্থা। এখন সেই প্রেমিকার নামটি পর্যন্ত মুখে আনতে ভয় পায়। অতএব মহিলা হলে এমনই নাকি হতে হবে। ওসব মিনমিন করে ভয় পেলে হবে না। তাহলে আর জি কর অবস্থা হয়ে যাবে কথায় কথায়। ওই মহিলার নাকি এক বাচ্চাও আছে। তিনি এতজনের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত থাকেন যে বাচ্চাটির বাবা কে জানা নেই। বাচ্চাটি নাকি বিক্রি করেছে বলেও বাজারে রটনা। তবে এটা নিন্দুকদের রটনা। কিন্তু কেউ কেউ আবার বলেন, ‘আমি নিশ্চিত বাচ্চাটি বিক্রি করা হয়নি। এটা কারণ আমার পরিচিত একজনকে একদিন খুব উদ্বিগ্ন হয়ে বলেতে শুনেছি, তিনি আদর যত্নসহকারে সেই বাচ্চার দেখভাল করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন’। অতএব এ থেকে বোঝা যায় সেই বাচ্চা বহাল তবিয়তেই গোকুলে বাড়ছে। এবং ওই মহিলা সম্পর্কে নাকি এও শোনা যায় কলকাতার র্যান্ডাম কয়েকটি ছেলেকে যদি জিজ্ঞেস করা যায় ওই মহিলার সংগে যৌন সঙ্গম হয়েছে কিনা তাতে প্রতি কতজনে একজন ‘হ্যাঁ’ উত্তর দেবে, সেটা আর জনসংখ্যার অনুপাতে অংক করা দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়। সবথেকে বড়ো কথা সেই মহিলা নিয়ে পুরুষমহলে রীতিমতো চর্চা চলে তার শরীরের প্রতিটি অংশ নিয়েও। এবং যৌন সঙ্গমে কে কতটা মজা পেয়েছেন তা নিয়েও। কারণ তিনি একটা সময় এক বান্ধবীর বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন একজন করে বন্ধু নিয়ে গিয়ে যৌন সঙ্গম করে আসতেন। এখন কলকাতায় নিজের ফ্ল্যাট আছে দু চারটে। এবং তিনি নাকি এই যৌন সঙ্গমের সময় ভিডিও করে ছেলেদের ব্ল্যাকমেল করে করে টাকা নিয়ে দু একটা ফ্ল্যাটও বাগিয়েছেন। তাই এখন আর সেই বান্ধবীর বাড়িতে যেতে হয় না ছেলে বন্ধুদের নিয়ে। তিনি যেমন একইসঙ্গে সিগারেট ও গাঁজাতে সিদ্ধহস্ত তেমনি অন্যদিকে আধুনিক কবিতাতেও। এমন রমনী কে না চায় বলুন? সবথেকে বড়ো কথা তিনি ন্যাতপেতে ভেতো বা ভীতু বাঙালি পুরুষদেরও সিগারেট, গাঁজা এবং আধুনিক কবিতা বুঝিয়ে পোক্ত করে নিজের উপযোগী করে নিতে পারেন। এমন গুণবতীদের কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন তো? এমন বহু বিবাহিত পুরুষ তাঁর সঙ্গে সমানতালে যৌন সঙ্গম, ঘোরা, বেড়ানো আড্ডা সব সামলেও ঘর সামলান বলে শোনা যায়। এ হেন বিবাহিত পুরুষও নাকি বহুজন আছেন ওনার। ওই মহিলার কয়েকজন প্রেমিক গরগর করে তাদের নাম ঠিকানা দিয়ে দেন সবাইকে। তিনি তাঁর সমস্ত পছন্দের পুরুষদের কথা মাথায় রেখে যার যেমন ভিডিও দরকার সেসবও খেয়াল রেখে নাকি ভিডিও করে পাঠান। যেমন ধরুন কারো ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে কিছু তথ্য দরকার। সে বিষয়েও তিনি ভিডিও করে পাঠিয়ে দেন। বা ধরুন আপনি নেক্সট কোথাও একটা ঘুরতে যেতে চান, ওই মহিলার কাছে জানিয়ে দিলেই তিনি সমস্ত তথ্য দিয়ে সুন্দর সুন্দর ভিডিও করে আপনাকে পাঠিয়ে দেবেন। বা ধরুন আপনার যৌন ভিডিও দরকার তিনি তাও তাঁর পছন্দের বন্ধুদের কথা ভেবে খাটাখাটুনি করে পাঠিয়ে দেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই ধরনের শতগুণা মহিলার যেমন পুরুষদের জব্দ করতে দরকার, তেমনি আবার সঙ্গমের জন্যও দরকার। এদের দেখে ছুটেও যাবে যেমন অনেকে আবার খুব বুদ্ধি থাকলে সাবধানে মিশতেও হবে, ওই রেগে গিয়ে লাথি টাথি দিয়ে দিলে মুশকিল আর কী, তা নাহলে কোনো সমস্যা নেই। কারণ এমনি এমনি তো কেউ আর চারশো আটানব্বইয়ের এ দিতে পারে না। একটু বুঝেসুঝে সাবধানে যেটুকু দরকার সেটুকু কাজ মিটিয়ে এলেই আর ভয় থাকে না। তবে এই মহিলার সঙ্গে কোনো পুরুষ নিজের এলাকায় দেখা করতে গেলে মাথায় হেলমেট পরে নেন। না না, মহিলার হাত থেকে মাথা রক্ষে করতে না। পাছে এলাকার মানুষ চিনে ফেলে সেই ভয়ে। কিন্তু কেউ অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে এই ধরনের মহিলাদের পার্মানেন্ট করতে গেলে চাপ খেতে পারেন আবার ওই আগের প্রেমিকের মতো। ক্ষণিকের আনন্দ করতে গিয়ে, টেম্পোরারি প্রেমিক বানিয়ে তাদের জন্য যে মহিলারা আজ খেটেখুটে নগ্ন ছবি বা ভিডিও বানান বা প্রেমিকের নির্দেশ অনুযায়ী যেমন পোজে দরকার তেমনটা পরিশ্রম করে বানিয়ে পাঠাচ্ছেন তা আদৌ গোপন থাকছে তো? তিনি তাঁর বা তাঁদের সম্ভ্রম রক্ষা করছেন তো? এ ভিডিও তো আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে বলেই শোনা যায়। বা তিনি না ছড়ালেও এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড লেখা থাকলেও সে প্রাইভেসি কিন্তু রক্ষিত হয় না।
ফেসবুকে যারা রিলস বানিয়ে দেয়, এবার তাদের কথায় আসা যাক। তারা কি সত্যিই এমন কোনো তথাকথিত শিক্ষিত মহিলা? নাকি পেশার দায়ে, পেটের দায়ে তারা এটা করে থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো তাদেরই জানা। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি শিক্ষিত মেয়েরা এসব করে পাবলিক করতে পারতেন তাহলে তথাকথিত শিক্ষিতরা এমন লুকিয়ে লুকিয়ে পাঠান কেন বন্ধুদের? আর যদি যুগের দোহাই দেন, যে এখন এটাই যুগের চল হয়েছে। এখন রোম্যান্স মানে ভার্চুয়াল ভিডিও করে পাঠানো। তাহলে সেটা গোপন করার দরকার কেন? সমাজে বিয়ে তো ঢাকঢোল পিটিয়েই হয়, আর বিয়ে হলে যে যৌন সঙ্গম হবে তাও তো সবার জানা। বিয়ে না হলেও হয়, সেগুলো লুকিয়ে। ব্যাপার হল বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক যেমন ঘোষিত তাহলে ভার্চুয়াল বা বিবাহ ছাড়া যৌন সম্পর্ক সবাইকে জানিয়ে করতে ভয় কিসের? বন্ধ করে স্বামী-স্ত্রী কীভাবে কী করেন সেটা যেমন কেউ জানেন না, ওটুকু গোপনীয়তা রক্ষা করে কীভাবে ভিডিওগুলো বানানো সেগুলো না জানালেই তো হয়। কেবল কোথায় কার সঙ্গে ডাইরেক্ট এবং কোথায় কার সঙ্গে ভার্চুয়াল সেটুকু জানলেই মনে হয় বাড়ির লোকেরা নিশ্চিত হয়ে যাবেন। নাহলে অভিভাবকরা মিছিমিছি ভাবেন আমার ছেলে বা মেয়ের নামে এমন বদনাম দেওয়া কেন বাপু? অন্তত নিজের বাড়ির লোকের কাছে তো বলে দিলে বাইরে থেকে শোনা লোকেদের প্রতি সন্দেহটা দূর হয়, কার কার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত। কেউ কেউ হয়তো বলতেই পারে চুরি করলে তো লুকিয়েই করব। নিশ্চয়ই চুরি লুকিয়েই করা উচিত, যারা সমাজ মানে তাদের। যারা সমাজকে পাত্তা দিই না বলে কিছু প্রগতিশীলতার বুলি কপচায় তাদের ক্ষেত্রে এ চুরি মানায় না। তাদের বক্তব্য এটাই উচিত, ‘হ্যাঁ, আমি যা করছি বেশ করছি, একশোবার করব তাতে সমাজের কী এসে যায়’। চুরি আর প্রগতির বাণী দুটো পাশাপাশি যায় না। আধুনিক, শিক্ষিত যুগ বলে এডস হচ্ছে না, অশিক্ষিত হলে এডস হয়ে ধরা পড়ে যাচ্ছে। তখনই ফাঁস হবে এছাড়া নয়? বিশেষ করে যারা সমাজ মানি না, সমাজ কী বলল আমার কিছু এসে যায় না টাইপের কথা বলে তারা তো অন্তত তাদের বাড়ির কাছে স্বীকার করতে পারে। অন্যদের নামে উল্টোপাল্টা দোষ না দিয়ে। যারা সমাজ মানে তারা তো বিবাহিত সম্পর্কে অত্যাচার সহ্য করে চারশো আটানব্বইয়ের এ না দিয়েও কাটিয়ে দেয়। তাদের কথা আলাদা, তারা তো প্রগতিশীলতার প্র’টুকুও ছুঁতে পারেনি। কিন্তু যারা প্রগতি মানে একাধিক উদ্দাম যৌন সম্পর্ক, সিগারেট, গাঁজা আর ফটফট মার্কসসিজমের নামে ভেকধারী নিজেকে মার্কসিস্ট বলে দাবি করে একটা দলের প্রতিনিধি হিসেবে কিছু বুলি কপচায়, তারা অমন লুকিয়ে বাঁচে কেন? কে জানে। লুকিয়ে বাঁচাতেই হয়তো আনন্দ আর উদ্দীপনা অনেক বেশি। তাই মুখ দেখায় না। মুখবইতেও নাকি তাদের মুখোশ লাগে শোনা যায়। তাহলে আর নিজেদের প্রগতিশীলতার প্রতীক বলে চিৎকার করে কী হল? এ তো কেবল ঘোষণা ছাড়া কিছুই নয়। যাহোক যার যেভাবে ইচ্ছা রিলস বানাবে, যার যাকে ইচ্ছা উলঙ্গ ভিডিও বা ছবি পাঠাতে ইচ্ছে করলে করবে, যার যতখুশি যৌন চাহিদা মেটাতে ইচ্ছে করবে তো করবে। আপনি এসব দেখে মশাই শুধু শুধু রাগ করবেন না। রাগ তখনই করুন যখন আপনাকে ওই সমস্ত লোকেরা মিথ্যে দোষ চাপিয়ে দেবে। আর সোজা সেই মহিলাকে নকল করে চারশো আটানব্বইয়ের এ দিন, তাহলে আর টুঁ শব্দটি করবে না। ওই মহিলার প্রেমিকের মতোই ল্যাজে গোবরে হয়ে চুপ করে, শেষে থেমে যাবে। আর আপনার ইচ্ছে হলে রিলস দেখুন, লুকিয়ে লুকিয়ে, তাতে ওদের একটু আয় বাড়বে। ওটা হয়তো তারা আয়ের মাধ্যম হিসেবেই বেছে নিয়েছে। যেভাবে লাইক, শেয়ার, কমেন্ট বাড়লে আয় বাড়ে আর কী সেভাবেই। আর এযুগে ওরাই বা এইসব মাধ্যম ব্যবহার করবে না কেন। হাড়কাটা গলিতে কেবল বসে না থেকে যদি এভাবেও আয় বাড়ানো যায় তাহলে সেটা তো চেষ্টা করাই উচিত। ভদ্র, সভ্য ভিডিও হলে রোজগার বাড়াতে অসুবিধা নেই আর ওরা এভাবে রোজজগার বাড়ালে দোষ? দোষ কিছুই না। আপনার ইচ্ছে হলে দেখুন, নিন্দে করবেন না। তাতে হয়তো ওদের আয় সামান্য হলেও বাড়বে। তা থেকে ভাত, পুজোর একটা দুটো পোশাক, বাচ্চার খরচ চালাতেও সুবিধা হবে। কে বলতে পারে কেন এসব করতে হয়? আর যাই হোক এরা এভাবে সখের জীবন চালায় বলে মনে হয় না। সখের জীবন, উদ্দীপনা জীবন, এখন তো বেঁচে নিই জীবন হলে তা লুকিয়েই চালাতে হয়।
অবক্ষয়ের দর্শন এভাবেই মনে হয় একটি সমাজকে এবং একটি জাতিকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কারো কাছে এই অবক্ষয়ের দর্শন মনের গোপন ইচ্ছা মেটানোর রাস্তা, কারো কাছে আয়ের পথ, কারো কাছে ভোগের বিলাসিতা আবার কারো কাছে আধুনিকতার উল্লাস। কিন্তু এই সবকিছুই যে ক্রমশ আমাদের শ্মশানের নীরবতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা কি আদৌ ভেবেছি? মানুষ ধীরে ধীরে নিজেদেরই মনের অবদমিত কামনার দাস হয়ে পড়ছে। এ এমন এক শিকল, যার থেকে মুক্তির উপায় আমাদের নিজেদেরই খুঁজে বের করতে হবে। শিক্ষা, পড়াশুনো, দর্শনহীন শুধুই তথ্যের ভিড় যে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, যে সমাজে প্রজ্ঞা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, যে সমাজ নিজেকেই নিজের খাদ্যবস্তু ও ভোগ্যবস্তুতে পরিণত করে ফেলে, সে সমাজ আর কোনদিকেই বা এগোতে পারে? মনে হয়, সম্পূর্ণ ধ্বংসের আগে আমাদের এবার সচেতন হতে হবে। প্রকৃতই আধুনিক হতে হবে, ছদ্ম-আধুনিকতা নয়। আর যাই হোক, কোনকিছুরই দাস হয়ে নিজেকে স্বাধীন ও প্রগতিশীল ভাবাটা কোনও শিক্ষিত এবং স্বাধীন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।