কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ১৭ <br />  নারীবলিপ্রথা <br /> রূপশ্রী ঘোষ

কিঞ্চিৎ পরচর্চা – ১৭
নারীবলিপ্রথা
রূপশ্রী ঘোষ

'এত রক্ত কেন'- এ প্রশ্ন যেন আজও এই দেশের আকাশেবাতাসে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রতিদিন ছোটো ছোটো বালিকার, কিশোরীর অথবা যে কোনও বয়সের নারীকে গণধর্ষণ করার খবর। গণধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করার খবর। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের প্রতি দোষারোপ করছে। ক্ষমতাদখলের রাজনীতি চলছে। এলাকায় এলাকায় গ্রামে গ্রামে আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য গণধর্ষণ করা হচ্ছে। হত্যা করা হচ্ছে। আবার কোথাও বা, যৌনতৃষ্ণা মেটানোর জন্য মানুষ মেতে উঠেছে উল্লাসে। যেন বা ধর্ষণ এক উত্তরাধুনিক ভাইরাস, যা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মানুষের মধ্যে। ছ বছর, সাত বছরের বাচ্চা থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত চলছে এই নৃশংস হত্যালীলা। আমাদের অজান্তে এক এক করে ধর্ষণই হয়ে উঠেছে এক আধুনিক জেনোসাইড। হায়! আধুনিক শব্দটাকে বর্বরতার সঙ্গে এভাবে জুড়ে দিতেও খারাপ লাগে। কিন্তু আধুনিকতা কি সত্যিই নিজের রূপ দেখাচ্ছে না এই মারাত্মক হিংসার মধ্য দিয়ে? যৌনতাকে হিংসা এবং হত্যার মধ্য দিয়ে সামাজিক ভাবে ব্যক্ত করাটা যেন আদিম নরবলির মতো। নরবলি না, যা চলছে, তা হল নারীবলি। লিখলেন রূপশ্রী ঘোষ

কালিকাপুরাণের ৫৫ তম অধ্যায়ের শুরুতে শিব বলছেন-
“ ভগবান বলিলেন, তাহার পর দেবীর প্রমোদজনক বলি প্রদান করিবে, কেননা শাস্ত্রে উক্ত হইয়াছে মোদক দ্বারা গণপতিকে, ঘৃত দ্বারা হরিকে, নিয়মিত গীত বাদ্য দ্বারা শঙ্করকে, এবং বলিদান দ্বারা চণ্ডিকাকে নিয়মিত সন্তুষ্ট করিবে।“ (৫৫/১-২)
দেবী চণ্ডিকা যেহেতু বলি দ্বারাই সন্তুষ্ট হন, তাই এরপরেই বিভিন্ন রকমের বলির পশুর তালিকা দেওয়া হয়েছে-
“১/ পক্ষী, ২/কচ্ছপ,৩/ কুম্ভীর, ৪/ নবপ্রকার মৃগ যথা- বরাহ, ছাগল, মহিষ, গোধা, শশক, বায়স, চমর, কৃষ্ণসার, শশ, ৫/ এবং সিংহ, মৎস্য, ৬/ স্বগাত্র রুধির, ৭/ এবং ইহাদিগের অভাবে হয় এবং ৮/ হস্তি এই আটপ্রকার বলি শাস্ত্রে নির্দিষ্ট হইয়াছে।“(৫৫/৩-৪)

ছোটো থেকেই নরবলি প্রথার চল ছিল এমন ঘটনা কিংবদন্তি গল্প হিসেবেই শুনে এসেছি। দেখিনি কখনো। উমুক ব্রিজ তৈরি করতে, তুমুক মন্দির বানাতে, উমুক বাড়ির ওই বড়ো পুজোয় ইত্যাদি প্রভৃতিতে নরবলি দেওয়ার গল্প অনেক শুনেছি। এখন মনে হচ্ছে উৎসবের মরশুমে নরবলির জায়গায় আবার নারীবলি ফিরে এল। আজকের আনন্দবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদনে আবার এমনই একটি খবর, ‘সাতের পরে সাড়ে ছয়। ফের এক বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল আলিপুরদুয়ারে’। লেখার বয়ান যতই কাব্যিক হোক না কেন ঘটনা তত কাব্যিক তো নয়। এমন নৃশংস ঘটনা কেবল আমরা দেখেই যাব? ২২ অক্টোবর ৪৫ বছরের লোক একটি সাত বছরের শিশুকন্যাকে? যাকে দেখে গাছের ফুলের মতো আদর করা উচিত তাকে জিলিপি দেওয়ার নাম করে পাশের বাড়ির দোকানি কাকু…। অবশ্য আমার কাছে আজ যে ফুল তা সবার কাছে ফুল মনে হবে কেন? বা সব পুরুষের কাছেই বা কেন ফুল মনে হবে? স্কুলের ব্যাকরণ বইয়ের নতুন সিলেবাসে ‘নারী’র সমার্থক শব্দ হিসেবে এবার মনে হয় ‘যোনি’ মুখস্থ করাতে হবে বাচ্চাদের। উৎসবের মরশুমে যে হারে ‘ধর্ষণ উৎসব’ শুরু হয়েছে এ শব্দও খুব স্বাভাবিক শব্দ হিসেবে ব্যাকরণ বইতে নির্ঘাত নিজের স্থান করে নেবে। এই শব্দের গায়ে যে নৃশংসতা, হত্যা, যন্ত্রণা, বিকৃতি, শাস্তি, অত্যাচার, তার কিছুই শব্দের গায়ে লেগে থাকবে না। বলি দিয়েই তো মনে হয় কিছু কিছু উৎসব সম্পূর্ণ হয়। আমার মামাবাড়ির দুর্গাপুজোয় পাঁঠাবলি হত, চালকুমড়োও। আমি দেখিনি কখনো। বলি দেখেছি ভোরবেলা ঘুম চোখে দৌড়ে গিয়ে গ্রামের কালীপুজোয়, আত্মীয়স্বজনদের গ্রামের কালীপুজোতেও। আজও মনে আছে ভোরবেলা বকুলতলায় লোক থিকথিক করত। গ্রাম, পাশের গ্রাম মিলিয়ে সব লোক ঝেঁটিয়ে চলে আসত বলি দেখতে। চলে যেত, যারা ভালোবাসে দেখতে। সবাই নয়। আর আমাদের ছোটোদের ঘুম থেকে তুলে বলি দেখতে পাঠানো হত। আমরাও চোখ কচলাতে কচলাতে চলে যেতাম। যখন এর কোনো মানে বুঝতাম না, যতদিন না এ দৃশ্য কষ্ট দিয়েছে, ততদিন যেতাম। দেখতাম তখন যাঁরা পুরোহিত ছিলেন, ঘন্টা বাজিয়ে বাজিয়ে মন্ত্র বলতে বলতে প্রথমে যেতেন বেনে পুকুরে, পিছনে একের পর এক সবাই তাদের বলির পাঁঠা নিয়ে, সঙ্গে আরও অনেক লোক এবং ঢাকির দল। ঢাক, কাঁসি বাজত। পুকুর ঘাটে গিয়ে একটা করে ছাগলকে জলে নামানো হত, চান করিয়ে তারপর পুরোহিত মন্ত্র বলতে বলতে ছাগলের গলায় শোলার সরু মালা আর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিতেন। এক এক করে সব ছাগলের চান পর্ব সারা হলে গাড়ুতে করে জলের ঝারা দিতে দিতে আবার একইভাবে ফেরা হত কালী ঠাকুরের চালায়। এসে আবার একটা পুজোর পর্ব থাকত সেখানে কামারের খড়্গ (আমরা কাত্যান বলতাম) এবং তাকেও কিছু মন্ত্র টন্ত্র বলিয়ে তার কপালে সিঁদুর, কাত্যানেও সিঁদুর ফুল লাগিয়ে দেওয়া হত। হাঁড়িকাঠেও একইভাবে পুজো করে তাতে সিঁদুর, ফুল আর তার গোড়ায় ধূপ দেওয়া হত। পুজো পর্ব সারা হলে সেই হাঁড়িকাঠ ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়ে থাকত গ্রামের মানুষ। এবার এক এক করে পাঁঠা আনা হত বলি দেওয়ার জন্য। ছাগলের গলা থেকে পটু হাতে শোলার মালাটা বাঁহাত দিয়ে ছিঁড়ে মাথাটা হাঁড়িকাঠে গলিয়ে দিত শীতল কামার। পরে তার ছেলে। মাথাটা দিয়ে হাঁড়িকাঠের ফুটোয় সরু একটা লোহার শিক ঢুকিয়ে আটকে দেওয়া হত মাথাটা। ছাগল তার আগে থেকেই চিৎকার শুরু করত। ছাগলের পা দুটো টানটান করে ধরে থাকত একজন আর সামনে মুখটা চেপে একজন ম্যাঁয়াম্যাঁয়াহ ব্যাঁব্যাঁহ চিৎকার বন্ধ করে দিত। এরপর কামার দুহাতে কাত্যান ধরে উপর দিকে তুলে জয় মা বলে চিৎকার করে এক কোপে নামিয়ে দিত গলাটা। সঙ্গে সব দর্শক জয় মা চিৎকার দিত। ছাগলের চিৎকার থেমে গিয়ে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসত রক্ত। হাঁড়িকাঠ থেকে মুখ আর ধড় আলাদা করে জমা করা হত এক জায়গায়। পাগুলো জিভটা কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতে থেমে যেত শেষে, এভাবে একের পর এক। রক্তে ভেসে যেত বকুলতলা, হাঁড়িকাঠের গোড়া। কামারের গায়েও থাকত রক্তের দাগ। আজও থাকে। আর ছাগলের গায়ে খুঁত বা পুজো প্রথায় কোনো খুঁত যেন না থাকে সেদিকে নজর দেওয়া হত। এরপর যাদের যাদের ছাগল তারা ঠিক ওই ভিড়ের মাঝ থেকে বেছে নিতে পারত নিজেদের কাটা ছাগল। কটা ছাগল বলি হবে তা আগে থেকেই জানা থাকত। যাদের বার্ষিক মানত, তাদের প্রতিবছরই ফিক্সড। এছাড়াও থাকে কিছু এককালীন মানত। সবমিলিয়ে এগারো বারো বা আর একটু বেশি। বড়ো গ্রাম হলে সংখ্যাটা পঞ্চাশ একশোতেও পৌঁছে যায়, যেতও। যাদের বার্ষিক মানত তাদের বাড়িতে নিয়ম করে আত্মীয়স্বজন আসে প্রতিবছর। আর যাদের মানত থাকে না তারা বারোয়ারী পুজোয় চাঁদা দেওয়ার জন্যও মাংস পায় চার পাঁচ পিস করে। এটা প্রত্যেক বাড়িই পায়। কারণ এটা চাঁদার টাকায় কেনা উপরন্তু মায়ের প্রসাদ। ফলে আমাদের বাড়িতেও আসত ওই চার পাঁচ পিস। আমাদের কেউ কোনোদিন মানত করেনি ওই কালী ঠাকুরের কাছে। কিন্তু ছোটো ঠাকুমাদের একটা বার্ষিক মানত থাকত মনসা পুজোয়। সেটা আরামবাগের কাছে মনসাতলা বলে একটা জায়গায়, আমার জানা নেই জায়গাটা। তবে মাংস দিয়ে যেত ঠাকুমারা। কোনো কোনো গ্রামে মোষ বলির গল্পও শুনেছি, দেখিনি কখনো। তবে একটা সময়ের পর এত রক্ত দেখতে কখনো আর ইচ্ছে করেনি, আমার ঠাকুমার কোনোদিনই করত না তাই সে বলি কখনো দেখত না। ঠাকুর-ভক্ত আবার পশুপ্রেমী দুটো সত্তার মধ্যে পশুপ্রেমটাই প্রাধান্য পেত। এখনকার পুজো, বলি এসবের ছবিটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়, তবে পু্রোপুরি বন্ধ হয়েছে বলে মনে হয় না। বলি এখনও হয়। আমার কেবলই মনে হচ্ছে সেই নরবলির মতো নারীবলি চালু হবে এবার মানত করেই। কিন্তু তাকে আর পুজো করে হাঁড়িকাঠে মাথা দিতে হবে না, জিলিপি, লজেন্সের লোভ দেখিয়েই নিয়ে যাওয়া হবে শিশু হলে। বড়ো হলে কোনো অন্ধকার নির্জন স্থান। ‘বিসর্জন’ নাটক সেই কবে লেখা হয়ে গেছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ‘এত রক্ত কেন?’ এই প্রশ্ন করলেও উত্তর পাওয়ার আশা এখন কম। যেখানে নারীবলির রক্তে মঞ্চ ভেসে যাচ্ছে, সেখানে পশুবলির ভয়ানক রূপ আর মনের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করে না। কারণ দেবীকেই এখানে বলি দেওয়া হচ্ছে। বরং এই ভাবনাই ভাবা উচিত যে, দেবীকে বলি দিয়ে আমরা দেবীকে কি তুষ্ট করতে পারব, নাকি স্বয়ং আদিশক্তি এখন আর অশুভের দমন করেন না? এক নবকালিকাপুরাণ কি লিখতে হবে আমাদের, যেখানে রক্তপিপাসু এই ইন্দ্রিয়সর্বস্ব মানবসভ্যতার হিংসাত্মক যৌনলালসাকে আমরা বলি দিতে পারব?

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes