মহালয়া  <br /> রূপশ্রী ঘোষ

মহালয়া
রূপশ্রী ঘোষ

“অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে
অরুণবীণায় সে সুর বাজে—
এই আনন্দযজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ।।”

মহালয়ার দিন ভোরবেলাতেই ওঠাটা যেন একটা নিয়ম। সবাই বেশ পালনও করতো। আগেরদিন থেকেই আমার মতো সব ছোটদেরই মনেই চলতো একটা চাপা উত্তেজনা। এই তো রাত পোহালেই মহালয়া, তারপরেই স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে যাবে। একমাস ছুটি কি আনন্দ। পরীক্ষার আগে ভোরবেলা উঠে লেপ মুড়ি দিয়ে পড়তে বসেছি দু-একবার। আলাদা করে ভোরের আকাশ দেখা হয়নি কখনো, মহালয়ার দিন ছাড়া। আবির ছড়ানো ভোরের আকাশ। হালকা শীত শীত ভাব। টিনের চালে শিশির পড়ার টুপটাপ। শব্দ বলতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণের গলা।

একদম ছোটবেলায় বাবা রেডিও চালিয়ে দিয়ে তুলে দিতো। গান আর কথাগুলোর মানে কিছু না বুঝলেও শোনাটা যেন একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শুধু তাই নয় মহালয়াটা এতোটাই পরিচিত যে ঘুম ভাঙার পর বলে দিতে পারতাম সবে শুরু, নাকি আরও অনেক বাকি। ভোরের হালকা আলোয় শুনতে ভালোও লাগতো। পরদিন সকালে চায়ের আসরে – কে কখন উঠেছে, কে পুরোটা শুনেছে, কেউ আদৌ শুনেছে কিনা তাই নিয়ে চলতো বিস্তর আলোচনা।

একটু বড় হয়ে রেডিওরটা শোনা শেষ হলে, চলে যেতাম মেজোমার বাড়ি। টিভিতে মহালয়া দেখার জন্যে। গ্রামে তখন দুটো টিভি। একটা ক্লাবে, আর একটা মেজোমাদের। দুটোই সাদা-কালো। ক্লাব একটু দূরে। তাই মেজোমার বাড়ি। ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে একটা ঝামেলা হওয়ায় তাদের টিভিটা বন্ধও ছিলো বহুদিন। তাই মেজোমার বাড়িতে ভিড়টা যেতো বেড়ে।

পাশের গ্রাম থেকেও অনেকে আসতো। টিভির একদম সামনে বসা দরকার। শুরুর অনেকটা আগে গিয়ে সেজদাকে তাড়া দিতাম, ঘর থেকে টিভিটা বারান্দায় বের করে দেওয়ার জন্যে। বিশাল বড় ফাঁকা বারান্দার এদিক থেকে ওদিক লোক থিক থিক করতো। পরে ক্লাবের টিভি আবার চালু হওয়ায় ভিড়টা কমে গেছিলো।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে সাদা-কালো টিভির ভিড় বাড়লো। কিছুদিন পর আমাদের বাড়িতে এলো টিভি, একেবারে রঙীন। পাশাপাশি দু তিনটে গ্রামের মধ্যে প্রথম। তাই ভিড়টাও বেশ দেখার মতো থাকতো। রঙীন টিভি হওয়ার ফলে দুর্গা ঠাকুরকে সত্যিকার ঠাকুরের মতো দেখতে লাগলো। ছোটঠাকুমা মহালয়া শুরুর আগে টিভির সামনে ধূপ দিয়ে প্রণাম করে বসে যেতো। সব লোক হই হই করে হাসতো। সবার হইহই নিমেষে পরিণত হয়ে যেত ছোটঠাকুমার উপেক্ষায়।

সেজদাদু প্রতিবছর মহালয়ার দিন বলতো – “আগে আমাদের বাড়িতে কলের গান চালানো হতো, তখনো প্রচুর লোক ভিড় করে বসে শুনতো।” আমি এখন মোবাইলে গান চালাতে শিখে গেছি, কলের গান কখনো চালাইনি। শুধু জিনিসটা দেখেছি। সেজদাদু, ছোটঠাকুমা, কলের গানের ঠিকানা আজও বদলায়নি।

এখন বাড়িতে কারো রেডিও আছে কিনা জানিনা। সাদা-কালো টিভি তো নেই। আমাদের বাড়িতেই চারটে টিভি। দোতলায় দুটো, একতলায় দুটো। তারমধ্যে একটা এল-সি-ডি। ভোরের আকাশ কেউ দেখে কিনা জানি না, তবে টিভিতে মহালয়া এখনো সবাই দেখে।

আর কয়েকদিন পর থেকেই সিগনালে, বন্ধ ফ্ল্যাটে থেকেও কানে আসবে – “ বাজলো তোমার আলোর বেণু।”

শহরেই ভুবন মাতে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes