রণজিৎ অধিকারীর পাঁচটি কবিতা

রণজিৎ অধিকারীর পাঁচটি কবিতা

ভ্রমণ

নিচু হয়ে রাস্তা যেখানে বাঁক নিচ্ছে,
সেইখানে এসে দেখি একটা চাগড়া পাথরের গায়ে
প্রাগৈতিহাসিক দুঃখ লেগে আছে, যেন একটা দৃশ্য,

আমি একবার পূর্বপুরুষদের দিকে তাকিয়ে নিই,
রাস্তাটা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল ঠিক! মনে করতে পারি না, একটা ঝোপের ভেতর থেকে
তাদের মুখগুলো ঝাপসা হয়ে ভেসে ওঠে।

তারা কিছু প্রতিষ্ঠা করেছিল,
হয়তো এই পাহাড়গুলোকেই ,হয়তো তারা
এখনো লাভা ঠেলে তুলছে বলে
প্রতি বছর একটু একটু করে উঁচু হয়ে উঠছে পাহাড়,
হয়তো এই স্তরের ভেতরে তারা কোথাও
জমাট হয়ে আছে এখনো!

এখন পাইন গাছগুলো যেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছে,
আমরা উঠছি তার পাশ দিয়ে,
ইঞ্জিনের কষ্টে গোঁ গোঁ করে উঠছে জগৎ।

যেন কত লক্ষ বছর পরে আমাদের দেখা হল,
শুধু এই অংশটুকু উত্তরকালের জন্য রেখে যাচ্ছি।

বাস্তবতা

ওই যে ঝুলে থাকা একটা জায়গা,
ভয়ানক অর্থহীন অথচ খুব সাবলীলভাবে
সেঁটে আছে জগতের সঙ্গে।
খুব ঝলমলে এমনকি যখন তুমি ওর ভেতরে দাঁড়িয়ে
জ্বলতে থাকো, এবং প্রাণপণে চাও কেউ তোমাকে
বের করে আনুক ওখান থেকে।
কিন্তু আর্তধ্বনিগুলো আটকে যায় ওর পরিধির ভেতরের দেওয়ালে, শুষে নেয় বিশুদ্ধ আলোগুলোও;
পরিবর্তে অন্য একটা আলো ওর ভেতরে— যা
সবকিছুকে স্পষ্ট করে তোলে।

ওই যে ঝুলে আছে জায়গাটা,
যেন কোথাও থেকে এনে যথাযথ আরোপ করা হয়েছে,
এবং কোনো মতামত না নিয়েই তোমাকে
ওখানে পুরে ফেলা হবে।

এটা একটা ভুল জায়গা

হঠাৎই একেকসময় কেন মনে হয় যে, আমি
ভুল জায়গায় এসেছি!… যেমন
এই রোববারের বিকেলের গায়ে হেলান দিয়ে ভাবি,
আমার এই মনখারাপ থেকে কেউ এসে বরং
সরিয়ে নিয়ে যাক ওকে।
এটা একটা ভুল জায়গা অথচ তারই গোড়া থেকে
আমার হাতে লাগানো দেবদারু আকাশ ছুঁয়েছে।

কে কোথা থেকে এসে পড়ছে?
যেমন রশ্মির মাঝখানটা দেবদারুর ভেজা পাতার গায়ে
পিছলে আমার ঘাড়ের কাছে এসেছে,
ছায়াগুলো এমন ভাবে স্থির হয়ে আছে যেন
আর কোনো কাজ নেই।
কে কীভাবে আসে, টের পাই না।
শুধু একটা কোনো দিন বেছে নিই, আর তার মাঝমধ্যিখানে দাঁড়িয়ে বলি — এটা ভুল।
আরো তেরছা হয়ে লাগা যেত,
আরো প্রান্ত বরাবর ঝুলে থাকা যেত,

আরো টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলা যেত যদি …

তুচ্ছের আলো

সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ।
অনুসন্ধান হল একটা সুচ হাতে নেওয়া এবং
যা-কিছু তাদের একে একে গেঁথে তোলা।
তুমি যখনই উদাস হয়ে তাকাও, তখন তুমি দূর অস্পষ্ট কিছুর দিকেই তাকিয়ে থাকো। অস্পষ্ট
অথচ গম্ভীর।
কিন্তু তোমার পায়ের কাছেই, যা তুচ্ছ অতিতুচ্ছ,
হয়তো তারাই তোমার বিশ্বকে ধারণ করে আছে এবং
তোমাকে পড়ে নিচ্ছে, যখন তুমি সুতো পরিয়ে
গেঁথে নিতে চাইছ, কেবল বিশেষত্বকে।
আমাদের চারপাশটা কখনোই কি পড়েছি
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে?
তুচ্ছদের হৃদয়ের ভেতর দৃষ্টি ফেলেছি?

অনুসন্ধান হল একটা সুচে গেঁথে ফেলা —নিজের চারপাশটাকে— তুচ্ছেরও আলোগুলোকে গেঁথে তোলা!

ভাষা

আমরা দুজনে কি একই ভাষায় কথা বলি?
যেমন আমরা প্রায়শই এ ওকে বলি,
—বুঝতে পারছি না।

আমাদের উদ্বেগ ও চিন্তারা, আর আমাদের সত্তার
কত কত বৈশিষ্ট্য — যা হয়তো কখনোই
অনুবাদযোগ্য নয়, এই এমনই একটা ভাষায় তো
কথা বলি আমরা!

কিন্তু একটা পোকা আরেকটা পোকাকে
ঠিক ঠিক বোঝে, একটা তিমির সংকেত পৌঁছে যায়
দূর আরেক তিমির কাছে!

তবে আমাদের সংকেতগুলো কি জাল করা? কিংবা
এত এত অনুভূতিকে ভাষা নেয় না, প্রত্যাখ্যান করে!
ধ্বনিগুলো পিছলে যায়, মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে —
তখন আমরা এ ওকে বলি : বুঝতে পারছি না।

হয়তো অভিধান থেকেই শব্দগুলো ধাক্কাধাক্কি শুরু করে
— আমরা কি তেমনই একটা ভাষায় কথা বলি!

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (4)
  • comment-avatar
    Purnendu Bhattacharya 2 years

    কেয়ারি করা কবিতার বাগানে হেঁটে চলে এসেছি একটু ঘ্রাণ নিতে।

  • comment-avatar
    Pankaj+Chakraborty 2 years

    অসাধারণ মনে হল প্রত্যেকটি লেখা।

  • comment-avatar
    Parthajit Chanda 2 years

    এ লেখাগুলি তো বারবার পড়ার। ভাল লাগল। তবে আরও যেন একটা উঁভু স্তর রয়েছে যেখানে আমি পৌঁছাতে পারছি না। আবারও পড়ব।

  • comment-avatar
    উজ্জ্বল ঘোষ 2 years

    প্রতিটি কবিতাই খুব ভালো লাগল। ‘ভাষা’ সবচাইতে বেশি ভালো লাগল। খুবই চিন্তামগ্ন লেখা।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    410 Gone

    410 Gone


    openresty