
অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
নতুন করে
—-
এখন একটু আড়াল করা শিখতে হবে
কান্নাকাটি, শোকগ্রস্ত রাত্রিযাপন..
এবার কিছু প্রেমের কথা লিখতে হবে
আদর, গোলাপ, জড়িয়ে ধরা যখন তখন।
ভগ্ন কপাট, রংচটা এই দেয়ালগুলো
শূন্য ঘর আর মন খারাপের বিকেলবেলা..
সেসব এখন হাওয়ায় উড়ুক যেমন ধুলো
মেঘের সাথে ভোরের আলোয় চালায় খেলা।
এখন যেসব দু’এক কথায় কান্না আসে
ভিড়ের মাঝে আল-জিহ্বায় লুকিয়ে নিয়ে..
পর্দা ওড়া জানলাকে আজ ভালই বাসে
মাখিয়ে রাখা সিলিং আমার স্বপ্ন দিয়ে।
এখন একটু প্রেমের কথা বলতে হবে
কান্নাকাটি সরিয়ে রেখে যখন তখন –
পথের শেষে মিলন ভেবেই চলতে হবে
আদর, গোলাপ, স্বপ্নে মাখা রাত্রিযাপন।
অবয়ব
—-
ছাইদানি জুড়ে ধোঁয়াশার অরণ্য, আসলে
দূরে যেতে যেতে আজ আলোকবর্ষ দূরত্ব,– অতলে
তার সাক্ষাৎ পাই এক মাঘীপূর্ণিমার রাতে
আঘাতে… আঘাতে…
তার শরীর এক ক্ষত-বিক্ষত পাথরে পরিণত
গাল বেয়ে নেমে আসে রক্ত, সরীসৃপ যত
খেলা করে তার দুই মৃত আগ্নেয়গিরি জুড়ে…
রাত কেটে যায় ইতিহাসের লালমাটি খুঁড়ে–
বড় চেনা লাগে তার অবয়ব, গলার ভাঁজে ঘাম
তার নিভু নিভু চোখ, শুধু অন্য কোনো নাম
লেখা পাথর ফলকে আর বদলে গিয়েছে সন
বাকি তার সাথে কি মিল ভীষণ…
মৃতদেহ তোমায়
—-
তোমার মৃত্যুদিনে দেখা হবে আবার তোমার সাথে
তোমার নিথর দেহ পড়ে থাকবে চিতার উপর আর
আমি খুবলে খাবো তোমার শরীর।
তুমি বাধা দিতে পারবে না আমায় সেদিনের মতো
আমার দাঁতের দাগ বসিয়ে দেব তোমার স্তনযুগলে
আর তোমার কোমরে নখের আঁচড়।
তোমার মুখ থেকে এতটুকু শব্দ বেরোবে না কোন
তোমার ঠোঁটে কামড় বসাবো ইচ্ছেমতো আমি
যোনিতে ঢুকিয়ে দেব মেকি পুরুষত্বের দণ্ড–
তুমি ভাববে মরে বেঁচে গেছি, আর কোন ব্যথা নেই–
আমি তোমার ভুল ভেঙ্গে তোমার মৃত শরীরকে
করে তুলবো কোন আদিম উপায়ে জীবন্ত
শুধু তোমায় উপভোগ করার জন্য…
শেষের পর
—-
শহুরে কবিতায় ফের তোমার সাথে দেখা–
ফেলে আসা গলি। “কেমন আছো এখন?”
সিগারেটে টান, সব তুচ্ছ নিয়মাবলী
ধূলিসাৎ করে কুয়াশায় হাত ধরে হাঁটি…
কে আর করবে নিন্দে? কি এসে যায়?
অযথা কথা কাটাকাটি। ভুলে গেলে নাকি,
তোমার অনামিকায় আমার ফুসফুস…
এখনো কিছুটা বাকি দেয়া আর নেয়া।
শহুরে কবিতা একদিন শেষ হয়ে যাবে
মাঝপথে দাঁড়িয়ে ভিজে যাবো শুধু তুমি আর আমি…
ক্ষণস্থায়ী
—-
ফুল ঝরে গিয়েছে বহু বসন্ত আগে,
হলদে পাতায় বাজে বার্ধক্যের গান–
তোমার ছোঁয়ায় তবু শিহরণ জাগে
মনের মিনারে, প্রেম তরঙ্গের টান
নিয়ে চলে গেছে কয়েকশো ক্রোশ দূরে।
নাম না জানা চিরহরিৎ এক দেশে,
তোমায় চিনেছি ভিনদেশী সেই সুরে–
নতুন ভাবে, নতুন এক কোনো বেশে।
ফুরিয়েছে যা সময়ের আনাগোনায়,
ব্যর্থ সকলই আগলে রাখার ছুতো…
থেকে গেছে শুধু প্রেমিকের জাল বোনা,
সারাটা ঘরে তোমার নামের সুতোয়।
বীণার তারেও বাজে বসন্ত বিদায়ী।
থেকে যায় শুধু মন, রূপ ক্ষণস্থায়ী…
ডুব
—
এক এক করে এসো
দিই ডুব
ধুয়ে যাক যত গ্লানি—
ক্ষুধার্তের আর্তনাদ অগ্রাহ্য করে
আমরা মাংসাশী হয়ে উঠি
রক্ত দিয়ে ধুই হাত— এসো… এক এক করে এসো…
কৃষকের পায়ের শব্দ উপেক্ষা করে
চলো পা মেলাই নতুন ব্যালাডে
চকচকে জুতোয় দ্যাখো মুখ, দ্যাখো সভ্যতার অধঃপতন
এসো আরও উগ্র হয়ে উঠি
এসো হয়ে উঠি আরও নির্মম
এক এক করে এসো মাখি রক্ত, ভাঙি পাঁজর
তারপর দিই ডুব
আত্মসমর্পণ করি মৃত্যুর কাছে—