দুটি ঝুরোগল্প <br /> কাজল সেন

দুটি ঝুরোগল্প
কাজল সেন

চাঁদমারি

আজন্মলালিত বিশ্বাস এভাবে ভেঙে দেয় কেউ! একবার ভেবে দেখল না, এই খবর শুনে অরুণিমার মনের অবস্থা কী হতে পারে! ভাবা উচিত ছিল! আর শুধু অরুণিমাই তো নয়, তাঁর মতো কত কত যে ভক্তিমতি মহিলা আছেন, তাঁদের কথাও ভাবতে হতো! অরুণিমার দুইমেয়ে ও একছেলে। সবাই বিবাহিত। অরুণিমার মতো তারা দেব-দেবীতে কতটা বিশ্বাসী, তা তাঁর জানা নেই, তবে তিনি বিশ্বাসী, একটু বাড়াবাড়ি রকমের বিশ্বাসী। সব দেব-দেবীকেই তিনি মানেন, পুজো করেন। এমনকি প্রকৃতিজাত সবকিছুকেই দেবত্বের আসনে বসিয়ে ভক্তি নিবেদন করেন। অগ্নিদেব, পবনদেব, বরুণদেব, সূর্যদেব, চন্দ্রদেব – কেউই বাদ যায় না। এজন্য অরুণিমার কোনো দোষ নেই, তিনি তো মানবজাতির সেই সনাতন ঐতিহ্যকে লালন ও পোষণ করে চলেছেন! সবই দেবতা স্বরূপ। বাড়িতে কোনো উপলক্ষ্যে পুজো হলে হোমযজ্ঞ হয়, অগ্নিদেবতাকে আহুতি দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকালে উঠে সূর্যপ্রণাম এবং বছরে একবার ছটপুজো উপলক্ষ্যে সূর্যদেবের পুজো করা হয়। আর সারাটা বছর ধরে যে কত কত ঠাকুর-দেবতার পুজো হয়, অরুণিমার দিনগুলো ঠাকুরঘরেই অতিবাহিত হয়। মনটা শান্তিতে ও তৃপ্তিতে ভরে থাকে। আহা! ঠাকুর-দেবতারা আছেন বলেই না আমরা বেঁচে আছি! ভালো আছি!

কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় যখন তাঁর নাতি মানে তমালের পুচকে ছেলে এসে খবর দিল, জানো ঠামা, ভারতের গাড়ি চাঁদে নেমেছে, তখন তিনি বেশ কিছুটা ধাক্কা খেলেন। কিছুদিন থেকেই এর-ওর মুখে শুনছেন, এমনই কিছু একটা ঘটতে চলেছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেননি, ধ্যুত, তাই আবার কখনও হয় নাকি? চন্দ্রদেব তা কখনই হতে দেবেন না! কোনো গাড়ি তাঁর শরীরে অবতরণ করা মানে তো তাঁর দেবত্বে টান পড়া! কেউ আর দেবতা বলে মানবে না যে তাঁকে!
অরুণিমা খুব অসহায় বোধ করলেন। একটা ভয় ও আশঙ্কা তাঁকে ঘিরে ধরল। এরপর কী হবে? পৃথিবীটা টিকে থাকবে তো?
মায়ের এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে তমাল ডেকে পাঠালো তার দুইবোনকে। রাত বেশি হলেও তারা এসে বোঝাতে চেষ্টা করল মাকে, তুমি এত দুশ্চিন্তা করছ কেন, যা ঘটছে, তা তাঁর অনুমতি নিয়েই হচ্ছে।
মা অবাক হলেন।
-মানে? কার অনুমতি নিয়ে কী করা হচ্ছে?
বড়মেয়ে শিপ্রা বলল, কেন, চাঁদে গাড়ি পাঠানোর আগে তো চাঁদের পুজো করা হয়েছে! সব দেব-দেবীরই পুজো করা হয়েছে, যাতে গাড়িটা ঠিকঠাক নামতে পারে।
-সেকী! তিনি অনুমতি দিয়েছেন?
-দিয়েছেন তো, তবেই না নামতে পেরেছে! আর দেখো মা, চাঁদে যদি কোনোদিন মানুষ বাস করে, সেই মানুষরাও চাঁদে বসেই চাঁদের পুজো করবে।
শিপ্রার কথায় অরুণিমা কিছুটা যেন ভরসা পেলেন।
বললেন, তাহলে কি একদিন চন্দ্রদেবের মতো সূর্যদেবের বুকেও ভারতের গাড়ি নামবে?
ছোটমেয়ে তিস্তা সামাল দিতে বলল, হ্যাঁ, সে তো নামতেই পারে! তবে সূর্যদেবকে আগে রাজী হতে হবে, রাজী হলে তবেই নামবে!
অরুণিমা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।
-কবে রাজী হবে রে তমাল?
তমাল বলল, দেরি আছে মা, যেদিন সূর্যের সব আগুন নিভে যাবে।

চন্দ্রগমন

নকুলবাবু কাউকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেননি, ভারতের চন্দ্রযান তিনের চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের ব্যাপারে তিনি কতটা উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। এর আগের দুটি অভিযান বিফলে গেছে। অন্যান্য দেশ যতই বাতেলা মারুক না কেন, এখনও কাজের কাজ কিছুই করে উঠতে পারেনি। তিনি দেশপ্রেমিক। বিদেশের সাফল্য থেকে অনেক বেশি আনন্দ পান দেশের সাফল্যে। তাছাড়াও তাঁর কিছু আলাদা রকমের হিসেব নিকেশ আছে, যা শুধুমাত্র নিজের দেশেই সম্ভব, বিদেশে নয়। তাই যেদিন সন্ধ্যায় তাঁর ছোটশালা ফোন করে জানালো, মিশন সাকসেসফুল, নকুলবাবু তাঁর দোকানের ক্যাশ-কাউন্টার থেকে বেরিয়ে এসে তলপেটে জলপ্রপাতের উৎপাতের কথা তাঁর সহকারী বিশুকে জানিয়ে ছোট্ট পেচ্ছাপঘরে ঢুকে কয়েক পাক কত্থক নেচে নিলেন। আহা! এর থেকে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে! এবার মুক্তি, সংসার থেকে মুক্তি, পৃথিবী থেকে মুক্তি, বৌয়ের শাসন থেকে মুক্তি। অনেক সয়েছেন তিনি, বিয়ের পর দীর্ঘ দশটা বছর সহ্য করেছেন, কিন্তু আর নয়, যথেষ্ট হয়েছে, এবার সুযোগ মতো চাঁদে পাড়ি দেবেন তিনি। সঙ্গে অবশ্য ছোটশালাকেও নিতে হবে। আসলে ছোটশালাই বুদ্ধিটা দিয়েছে। সে বেচারাও তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছে তার নিজের সংসারে। তার বৌ তাকে একেবারে মুঠোয় পুরে রেখেছে। কড়া শাসন। বসতে বললে বসতে হয়, শুতে বললে না শুয়ে উপায় নেই, কখন ঘুম থেকে ঊঠতে হবে সেটাও জানিয়ে দেয়। ছোটশালা এজন্য তার জামাইবাবুকেই দায়ী করে। বলে, আপনার বোনকে নিয়ে আর পারি না। এমন বিয়ে করে আমার জীবনটাই কেরোসিন হয়ে গেছে। নকুলবাবু প্রতিবাদ জানান। বলেন, এখন একথা বললে চলবে? আমাদের তো চুক্তিই হয়েছিল, আমি তোমার দিদিকে বিয়ে করব একটাই শর্তে, যদি তুমি আমার বোনকে বিয়ে কর, তবেই। তাই হয়েছে। সাফ কথা। এখন আমাকে দোষারোপ করে কী লাভ! আমি কি বিয়ের আগে জানতাম যে তোমার দিদি একটা আস্ত বাঘিনী, আমাকে গিলে খাবার মতলবে বিয়েতে রাজি হয়েছে! ছোটশালা জামাইবাবুর কথায় বোমকে ওঠে। বলে, আমিও তো জানতাম না আপনার বোন একটা ধূর্ত শেয়াল! পুরো পাগলা করে দিল মাইরি আমাকে!

বাজারে নকুলবাবুর কাপড়ের দোকানের পাশেই তাঁর ছোটশালার বাসনের দোকান। সবাই বলে, শালা-জামাইবাবু জব্বর ব্যবসা করছে! দেখতে দেখতে কেমন বড়লোক হয়ে গেল! সারাটা দিন ধরে দুটো দোকানে গ্রাহকদের ভিড় লেগেই থাকে। সারা বছরে যে কত লক্ষ-কোটি টাকার টার্নওভার, কে জানে! কিন্তু শুধুমাত্র শালা-জামাইবাবুই জানে, এত কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করেও কোনো সুখ নেই, আনন্দ নেই, স্বস্তি নেই। আর ঠিক তখনই বুদ্ধিটা খেলে গেছিল ছোটশালার মাথায়। সে শুনেছে, এই যে বিভিন্ন দেশ জুড়ে চাঁদে যাবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তাতে ভারতও আছে। সেইসঙ্গে এটাও শুনেছে, যে দেশের চন্দ্রযান চাঁদের যে পিঠে অবতরণ করবে, সেই পিঠে নাকি সেই দেশের মৌরসিপাট্টা হবে। সুতরাং আর চিন্তা কী, একবার যদি যান নামতে পারে, তাহলে নিয়মিত যানবাহন চলাচল শুরু হবে। সেইসঙ্গে শুরু হবে যাত্রীবহন। ছোটশালা-জামাইবাবু এডভ্যান্স-টিকিট শুরু হলেই কেটে ফেলবে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
404 Not Found

Not Found

The requested URL was not found on this server.


Apache/2.4.41 (Ubuntu) Server at hacklink.site Port 80