কিঞ্চিৎ পরচর্চা পর্ব-১ <br />  রূপশ্রী ঘোষ

কিঞ্চিৎ পরচর্চা পর্ব-১
রূপশ্রী ঘোষ

মানুষের মতো অসহায় প্রাণী পৃথিবীতে আর দুটো দেখা যায় না। মানুষ নিজেই আসলে কী চায় জানে না। সব মানুষই কেমন দিশেহারা। যে যার নিজস্ব পজিশনে থেকে খুশি নয়। ধরুন একজন লেখক বা কবি, বিশেষ করে বাংলা ভাষার, তিনি সর্বদা ভাবছেন কেন লিখছি? কী যে লিখছি? এত লিখেই বা কী হবে? ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি এর মান্যতা দেবে? বর্তমানই কি দিচ্ছে? ধরা যাক বর্তমানে স্বীকৃতি মিলছে। প্রকাশকদের কাছ থেকে রয়্যালটি পেয়ে বা কোনো পুরস্কার পেয়ে। কিংবা কোনো ব্যক্তিগত মেসেজ, স্যোশাল মিডিয়ায় কমেন্টের মাধ্যমে সুনাম পেয়ে। তাতেও কি কবি লেখকরা খুশি থাকছেন? তাঁদের প্রশ্ন করলে জানা যাবে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়ে তো আরও বড়ো অনিশ্চয়তা। ছেলেমেয়েরা তো বাংলা ভাষাটাই দ্বিতীয় ভাষা করে ফেলেছে। এ তো আরো বড়ো এক আশঙ্কা।
এবার ধরা যাক যাঁরা সিনেমা বানাচ্ছেন তাঁদের কথা। তাঁরাও কি খুশি? হিসেবের অঙ্ক কি মিলছে? যা আশা করছেন তা থেকে কি তা পাচ্ছেন? একগুচ্ছ প্রশ্ন।
একজন চাকরিজীবি মানুষ, তিনি তাঁর চাকরির জায়গায় খুশি? নাকি চাকরিটা অন্যরকম হলে ভালো হত? কাজের পরিবেশ, কাজের পরিমাণ, কাজের সময়সীমা? মনে হয় না কেউ খুশি কেউ কি মনে মনে বলবে, ‘না না আমি খুব খুশি, আমি খুব খুশি’। অফিস যেতে না হলে ভালো, যাদের যেতে হয় না তারা না গিয়ে বোর, মাইনে আর একটু বেশি হলে ভালো হত, ডিএটাই ঠিকঠাক দিচ্ছে না। কেবল ছুটি দিচ্ছে। ছুটি না পেলে, উফ! এটায় তো ছুটি দিতে পারত। বেসরকারি চাকুরেরা ভাবছে, আহা সরকারি চাকুরেদের কী সুখ। তারা কত্ত ছুটি পায়। ডাক্তাররা ভাবছেন একদিন তো হাসপাতাল বন্ধ থাকতে পারে। রুগি ভাবছে রোগ কেন হয়। ছাত্রছাত্রীরা ভাবছে পরীক্ষা না থাকলে কেমন হত? স্যার ম্যামরা আর একটু অন্যরকম হতে পারতেন। বাচ্চারা ভাবছে ওদের মা বাবা বেশি ভালো। একটুও বকাবকি মারধোর করে না।
একজন ক্ষমতায় থাকা মানুষ ভাবছেন, ব্বাবা! এখন তো ক্ষমতাটা প্রয়োগ করে নিই। পরের কথা পরে ভাবা যাবে। যখন ক্ষমতা থাকবে না তখনের কথা এখন ভেবে সময় নষ্ট করব কেন? অতএব ছড়ি ঘোরাও, ছোটো বড়ো সবার উপর। তাতে যে কত সুখ, যিনি ঘোরান তিনিই জানেন। এই একটা ব্যাপারে অন্তত খুশির দেখা মিলল। না না আরও আছে।
একজন অহংকারী মানুষ, তিনিও তাঁর অহংকার দেখিয়েই সুখী। কীসের এত অহংকার, কোথা থেকেই বা আসে কেউ জানে না। তিনি নিজেও জানেন না।
ধরা যাক একজন সংসারী মানুষ। তিনিও ভীষণ অখুশি। ভাবছেন কেন সংসার করছি? কীসের সংসার? যাঁরা সংসার করে না তাঁরা বোধহয় বেশি সুখী। বিবাহিত ভাবছে অবিবাহিত সুখী, অবিবাহিত ভাবছে বিবাহিত। বউ, বাচ্চা সব নিয়ে কত সুখের সংসার। অন্তত নিঃসঙ্গ তো নয়।
যারা অহরহ বেড়াতে যাচ্ছে তাদের দেখে না বেড়াতে যাওয়ারা ভাবছে ওরা কত সুখী, আমরা নই। আহা ওরা কত বেড়ায়।
বুদ্ধিমান সন্তানের বাবা মায়েরা সন্তানের বুদ্ধির গর্ব করেই সুখী। এমন অনেক অভিভাবকও আছেন যাঁরা নিজেদের ছেলেমেয়ের দুপাতা বিজ্ঞান পড়া দেখে ছেলেমেয়েকে আইনস্টাইন ভেবেই খুশি। সায়েন্সের লোকরা হিউম্যানিটিজ বিষয় নিয়ে পড়া লোকদের কটাক্ষ করেও খুশি। সাহিত্যের লোকরা ভাবছে আহা সায়েন্সের লোকরা কত জানে, ওদের কত বিদ্যা বুদ্ধি। এই ভেবে হীনমন্যতা। আবার সায়েন্সের লোকরা ভাবছে, আহা ওরা আজ বুদ্ধিজীবী, আমরা সায়েন্স পড়েও কোনো জীবীই নই।
বাজারের সবজিওলা বা মাছওলা অন্যদের মাছ বা সবজি বিক্রির বহর দেখে ভাবছে ওদেরই সময়। রাস্তার খুচরো ব্যবসায়ীরা ভাবছে শপিংমলই তাদের কাল করল। আবার স্থানীয় দোকানদাররা ভাবছে, আমাজন, ফ্লিপকার্টের মতো অনলাইন ব্যবসা এসে সব শেষ করে দিল।
একজন দেশি লোক এন আর আই কে দেখে ভাবছে ওরা কী সুন্দর বিদেশে থাকে। যার কুঁড়েঘর সে ভাবছে ওদের বাড়ি আছে, যার বাড়ি আছে সে ভাবছে ওদের ফ্ল্যাট আছে, যার ফ্ল্যাট আছে সে ভাবছে আহা ওর দুটো ফ্ল্যাট। ফুটপাতবাসী বা রেললাইনের বস্তির মানুষ কী ভাবে গিয়ে জানা দরকার। গাড়ির ক্ষেত্রেও একই। যার সাইকেল সে ভাবছে ওর কী সুন্দর বাইক, বাইকওলা ভাবছে ওর চারচাকা। তিনচাকাও ভাবছে ওদের চারচাকা। যার চারচাকা সে আর একটু দামি এবং বড়ো চারচাকা নয় কেন? ভেবে আকুল। আর গাড়ির চালকরা ভাবছে, ধুর বাবা! রাস্তার সিগনালগুলো কেন থাকে?
এভাবেই ইরাক ভাবছে ইরান সুখী, ইরান ভাবছে প্যালেস্তাইন, প্যালেস্তাইন ভাবছে ইউক্রেন, ইউক্রেন ভাবছে রাশিয়া, রাশিয়া ভাবছে আমেরিকা, আমেরিকা ভাবছে ইউরোপের সব দেশ এভাবে চেন আকারে ভাবনা চলতেই থাকছে। একজন বাচ্চা ভাবছে ওর কী সুন্দর মোবাইল আছে, ল্যাপটপ আছে, আমার কিছু নেই। আমি রিল দেখতে পাই না। ও পায়। ও গেম খেলে। গ্রামের মানুষ ভাবছে শহরে কত সুখ, শহরের মানুষ ভাবছে গ্রামে কত মুক্ত বাতাস!
মানুষ সত্যিই কী চায়, নিজেরাই জানে না। এত অহংকার, এত হিংসা, বিদ্বেষ, এত খুনোখুনি, মারামারি, এত ভোট সব কোথায় যাবে? পরের জাগা পরের জমি, কারুর নিজের বলে কিছু আছে বলে তো মনে হয় না। নশ্বর দেহ যেকোনো মুহূর্তেই তো শেষ হতে পারে। যেভাবে প্রতিদিন হচ্ছেও। সারাদিনে কত মানুষ অ্যাকসিডেন্টে, অসুখে, জন্মাতে গিয়েও মারা যায় তার পরিসংখ্যানও তো দেখা যায়। তবুও দিনরাত চলছে এই চুলচেরা বিচার। সব মানুষ কত অসুখী, কত অসহায়, অন্যকে দেখে ওর অনেক সুখ ভেবে ইর্ষা এ তো অহরহ বেড়েই চলেছে। সামান্য জীবনেই একজন মানুষ আর একজন মানুষকে কত অপমান করে খুশি থাকে। মানুষের মনের মতো জঞ্জাল জায়গা আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেক মানুষের মনই আসলে এক একটা ধাপার মাঠ। এই ধাপার মাঠের সংস্কার দরকার। কে করবে? এমন কে আছে? সবাই তো প্রতিহিংসায় উন্মত্ত। পৃথিবী একমাত্র পারে নটরাজের মতো কোনো তান্ডব এনে। তাহলে নিমেষে সব তলিয়ে যাবে। এত হিসেব নিকেষ, এত চুলচেরা বিচার সব ধুলিসাৎ হবে। একটা গোটা ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছু থাকবে বলে মনে হয় না। কে করবে মনের সংস্কার?
একটা জিনিস দেখে অবাক হতে হয়, যে বিষয়টা নিয়ে কোনো হিংসা বিদ্বেষ নেই জগতে যে, ওর কত বই আছে আমার কেন নেই? ও কত পড়াশুনো জানে আমি কেন জানি না? আমারও বই চাই, আমারও অনেক লেখাপড়া করতে হবে, আমাকেও অনেক এগোতে হবে। না, এ বিদ্বেষ কোথাও আছে বলে মনে হয় না। কিন্তু একজন অপরজনের থেকে ভালো রেজাল্ট করলে মুশকিল আছে। কেন করল, সেই চেষ্টা করে আমিও করতে পারি এই শিক্ষা কেউ নিতে পারে না। যাহোক এর কথা তাকে লাগিয়ে, তার কথা ওকে লাগিয়ে ঝগড়া বাধিয়েও মানুষকে খুশি থাকতে দেখা যায়। লেখাপড়া বা নিজের কাজ চর্চা করে নয়। এ এক অদ্ভুত পৃথিবী। অদ্ভুত মানুষ জন্ম। সবাই সবার দিকে আড়চোখে তাকিয়েই শান্তি পায়।
তাই বা কম কী? একে অপরের দিকে তাকিয়ে বা কটাক্ষ করেই মানুষ শান্তি পাক।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes