পৌলমী গুহ-র কবিতা
তোমাকে
১
ঈশ্বরকে বলি
তোমাকে যেন সুখী রাখা হয়।
বলি, জনম জনম সুখী রাখো।
চোখের পাতায় জল যেন না থাকে
ঠোঁটের কোণা থেকে এক দু’টি
মন উদাস করা হাসিও যেন থাকে
আরও বলি
তোমার পছন্দের মানুষটাকে চোখ দিতে
তোমার জামুনরঙা জামার বোতাম
মাছের কাঁটায় ভুরু কোঁচকানো তাক
বইয়ের পাতায় চায়ের দাগ যেন
দেখে নিতে পারে।
আমাদের বৃষ্টিভেজা বাড়ি নিয়ে
তোমার যেন আর মনকেমন না হয়
কারও কারও তিল যেন তোমাকে
ব্যথিত না করে ফের।
তোমারও বয়স বাড়ছে খানিক
ভালো রাখে যেন
গাছেদের ছায়া দীর্ঘ হলে
মানুষের কিছু আশ্রয় চলে যায়
তুমিও তো ছায়া দিয়ে গেছ-
২
তোমার কথা মনে পড়ে যায়
সারা দুপুর ঘুঘুর বুকের কাছে
যেভাবে বলে গেছ, যেন আজন্ম
প্রথম প্রেম আর বেদনার খণ্ড
শরিকি বাড়ির খুঁটিনাটি
আজাদ নামের সে বিড়ালশিশু,
এতিম হবার কষ্টে তোমার চোখ
কেমন তিরতিরে হয়ে যাচ্ছিল।
অস্ফুটে বলেছ বাবার কথা,
আমি ডাকনাম নিয়ে অহেতুক
প্রশ্ন করেছিলাম।
তুমি জানালা দিয়ে রোদঢালা শহর
দেখে কেমন উদাস হয়ে গেলে
এখন আর সে সব বলো না হয়তো।
আশ্বিন চলে এসেছে ফের
কথা বলার অভাবে বুকের পুকুর কেমন
মরা-মরা হয়ে যায়।
মানুষে জানতে পায় না-
৩
মাঝে মাঝে মনে হয়
আপনার কাছে ফিরে যাই
আলতো হাতে আপনার হাত ছুঁয়ে থাকি।
দু’একটা দোয়া বিড়বিড় করি
আপনার ডান ভুরুর পাশে কাটা দাগটিতে আঙুল রেখে
আপনার ব্যথা মাপি
এক দু’টো অর্থহীন কথা
বন্ধুতা বলে এড়িয়ে যাই।
আসলে ক্ষমা তো আর
জানাজা পর্যন্ত ধরে রাখে না কেউ-
৪
আপনি কী খেতে ভালোবাসতেন
এতদিন পর মনে নেই আর।
একটা ভাজি, একটু ডাল
হাঁসীর পেটের মতো সাদা ভাত
এসব দেখলে আপনার গরাস উঠছে না।
বুঝি। বাংলাদেশ আপনার বুকে
এখনও কীসব জাগায়।
মানুষ আপনি খারাপ নন জনাব
খালি বিষে বিষে নুয়ে পড়েছেন
এই যা এজীবনের সবিশেষ ভুল
মাঝরাতে শিরদাঁড়া হারিয়ে
আমায় দাওয়াত দ্যান-
৫
আপনার বন্ধুদের সাথে দেখা হয়
তকরার হয়।
মিছিল হয়।
তারপর আমরা হেঁটে যাই একসাথে।
আপনার কবিতা নিয়ে
কেউ কেউ কথা বলতে চায়
তবে বেশিরভাগ লেখাই
সেলের বাজারের নাইটির মতো
যে কেউ বুঝে ফেলছে।
আপনার বন্ধুরা আপনাকে দেখে নাই
তারা আপনার জন্য মানত করছে
আপনার কবিতা যেন বেলিফুল হয়
মিছিলে হাঁটার মতো।