সব্যসাচী মজুমদার-এর গল্প

সব্যসাচী মজুমদার-এর গল্প

পানুর কেচ্ছা

তিনদিন ধরে নিম্নচাপ চলবে ঘোষণা করলেও শুরু হল যে সময়ে, তার সঙ্গে আবহাওয়া দফতরের দেওয়া হিসেব যোগ করলে ঘটনাটা সাড়ে তিনদিন অব্দি গড়াবে। অন্তত পানুর হিসেবে তাই দাঁড়াচ্ছে।মানে , এই সাড়ে তিনদিন গর্ভ যন্ত্রণা চলবে।

রাত একটার পর ,সাতদিন অন্তর, জমে থাকা মৃতদেহগুলো নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব পানুর। নিম্নচাপের দ্বিতীয়দিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! তাছাড়া লাইনে বডি দেওয়ার হিড়িক এইসব টানা বৃষ্টির দিনেই বাড়ে।ভিজতে ভিজতে বডি আনা আছে।তারওপরে এক্সিডেন্ট,বিষ,জলে ডোবা,সাপে কামড়ানো ইত্যাদিও যেন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।কাজেই মর্গের চাপ বাড়ে।ইনকামও হয়।ডাক্তার বাবুকে চেপে অনেক কিছু ঝাড়া যায়।উপরি ইনকামও প্রভূত।ঐ রাতের ঝামেলাটা ছাড়া আর সব ঠিকই আছে। কিন্তু, সবকিছু করতে হবে টানা ভিজে ভিজে।এইই যা।

বিরক্তিতে বিড়বিড় করে ওঠে শিবু ডোমের ছেলে পানু ডোম।ওরফে চুল্লু পানু।যদিও চুল্লু সে খায়নি কোনওদিনও।ওর বাবা খেত।পানু ক্লাস এইট অব্দি গিয়েছে।দু’হাজারের পর বাংলা মদের জাতে ওঠার সময়টাতে ওর‌ও উত্থান।আর প্রজন্মের অগ্রগতি তো এভাবেই ঘটে।বাবা চুল্লু খেত।কাজেই ছেলে বাংলা। এবং আশা করা যায় নাতি অবশ্যই রাম খাবে।সরকারি বাংলা কেন এখনও জনসাধারণের মধ্যে’চুল্লু’নামের হ্যাং কাটাতে পারল না কেন কে জানে!পানু ভাবে।এ নিয়ে খুব ভাবে।

‌ পানু ওর বাবার মতো জঙ্গল হুইস্কি টেনে মড়ার ওপরেই চড়ে বসার মতো মাতাল নয়।সকাল বিকেল সন্ধেয় ছোলা শুয়োর আর মুরগি দিয়ে স্রেফ তিনটি বাংলার এক ফোঁটাও বেশি নয়। গায়ে খাটে। রোজগার করে দু’হাতে না হোক দেড় হাতে। এটুকু তো খাবেই।পা টলে না পানুর। হিসাব সাফ। এতদিনে একটা মড়াও এদিক ওদিক হয়নি। সমস্ত ওর ইচ্ছে মতো হয়েছে। এমনকি অনিচ্ছেও ইচ্ছে হয়ে গেছে।

এই তো সেদিন মর্গ থেকে খোলা ভ্যানে তুলছে বডিগুলো। মফসসলের মর্গ। কারেন্ট থাকে না।তিন টনের বদলে দেড় টনের এসি লাগানোর ফলে সপ্তাহ শেষে বডিগুলো পচে ভ্যাদভ্যাদ করে।খসে যায়।কোনও কোনওটার গায়ে দড়ি বাঁধলে পচা মাংস ভেদ করে হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যায়।তাতে অবশ্য সুবিধা।খসলে মাংস চর্বিই খসে।ও নিয়ে ভাবার কিছু নেই। কুকুর, ভামে না খেলে লরির চাকায় পিষে পিষে জায়গাটাকে চকচকে করে দেবে।

পানুর মেজাজ মোহনায় মাছ ধরতে যাওয়াদের মতো খিঁচড়ে।ওরা মারতে পারবে না বলে।পানু মড়া জ্বালাতে পারবে না বলে।
যা কথা হচ্ছিল,মালগুলোকে সাইজ করে ভ্যানে তুলে সবে রোডে উঠেছে সেদিন,একটা এক হাত গর্ত নিজেই যেন এগিয়ে এল ওর দিকে।বাঁ পা আর ভ্যানের সামনের চাকা একসাথে গর্তে ঢুকে জটিল করে তুলল ব্যাপারটা।একটা মড়ার বাম ঠ্যাং কী করে যেন চাকায় জড়িয়ে থ্যাপাস করে পড়ল রাস্তায়।সেটা পাক্কা সাত দিনের বাসি ছিল।
খিল্লিটা হলো অন্যখানে। সেদিন ছিল বিয়ে বাড়ির দিন।কয়েকটা বাচ্চা ছেলে সাইকেলে ফিরছিল। তাদের একেবারে সামনেই পড়ল ঠ্যাংটা। এখনও পেটে খিল ধরে পানুর।

(২)

বৃষ্টিটা দু’দিন যাবৎ নিয়ত চলছে।ধরে আসলেও ইলশেগুঁড়ির মায়াবি কুয়াশা ঢেকে ফেলছে মফসসলটাকে। আকাশ ভাতের ফ্যানের মতো হয়ে আছে সারাটা দিন। রাতে ভ্যাপসানো মাটির মেঝে আর যৌনসুখী শ্যাওলার ঘ্রাণ। খুব ডিপ্রেশন হচ্ছে রাকেশের। সকাল থেকে সাতটা ঘুমের ওষুধ হয়ে গেছে।এখন শেষ বিকেল।ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে।টালির ওপরে ঝুপস হয়ে পড়া কদম গাছটা খুব নড়ছে।আবছা দেখে ভাম বোধহয় এখনি বেরিয়ে পড়ল। বৃষ্টি বলে ওদেরও ক্ষিদে বেড়েছে।রাকেশ ওর রেডমি থেকে ডায়াল করে ফেলে প্রীতিকে,
– তাহলে আজকেই।
– কী
গলাটা আরও এক পর্দা নিঝুম হয়ে যায় প্রীতির।
– আজকেই তবে রিলটা ছেড়ে দে।
– কোন গানটা?
– সাজাউঙ্গা তুঝকো
– কোন ভার্সান?
– লাউড
– দ্যাখ…
– আমার কিন্তু ডিসিশন নেওয়া হয়ে গেছে।
– বাবু, আমিও জান দিতে ভয় পাই না কিন্ত…

কেঁদে ফেলে প্রীতি!

(৩)

খবরের কাগজ আর আনাচ কানাচ থেকে তারপরে যে ঘটনাটা দাঁড়ায় ,তার মধ্যে জোর করেও দিল্লি ঢোকান গেল না।রাজ্যের তরফেও উত্তেজিত হওয়ার কোনও কারণ ছিল না। কিছুই না রিল করতে গিয়ে প্রেম।জন মজুরের ইলেভেনের মেয়ে।বাপের আশা, অনুদানের ভরসায় যদি এম এ পর্যন্ত পড়ান যায়,দু ‘পয়সা থাকে। কিন্তু সেই অনুদান পড়ল ফার্স্ট ইয়ারের প্রেমে। নাচতে নাচতেই পালাল।ফিরে এল বিজোড়ে।মেয়ের বাপের খুব আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছেলের বাপ বেশি বোঝায়নি।হাতে বাইক ধরিয়ে বলেছিল,
– লাইনে নামো হে ।আর মনে রেকো বড়ো মাছ ছোটো মাছকে লাগায় না গিলি খায়।

কিন্তু কসমে আর ওয়াদে তো মিথ্যে হওয়ার নয়। বিশেষত যখন এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে ওদের এলাকায়।রাকেশ বা প্রীতিই বা কেন অন্য পথ বাছে!

বস্তুত রাকেশ বাড়িতেও খুব যে সুবিধা জনক অবস্থায় ছিল তা নয়, ‌‌‌‌‌‌‌উল্টে লাইনের কাজে বিশেষ পারদর্শী নয় বলে অবহেলিতই।রাকেশ আসলে বাইকে ধুর টানতে ভয় পায়। জানে কোন সময় পাহারা থাকে না,জানান হয় তাদের। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট সময়ে পাহারা না থাকান’র জন্য বেশ কিছু খরচ করতে হয় তার বাবাকে,তাও জানে। কিন্তু ভয় থাকে তবুও।হয়তো পাহারাদারেদের কারওর প্রমোশন খুব প্রয়োজন। খুবই দরকার।তার জন্য রফা ভেঙে মাসে একটা দুটো টপকান চুক্তির ভেতরেই থাকে।নিচু তলার, মাঠের কর্মীদের এসব জানান হয় না।তারা এইসব মৃত্যুকে প্রফেশনাল হ্যাজার্ড বলেই মনে করে। অনেকেই তো পুলিশের লাইন ফেরত।ফলে মনটা প্রস্তুত থাকে।

বাবার সুবাদে এসব জানে রাকেশ।এও জানতে পেরেছে যে যেহেতু সে পুরনো কর্মীর ছেলে তাই রফার লিস্টে তার নাম থাকবে না।তবু…সে বিশ্বাস করতে পারে না।সে আসলে মডেলিং,রিলস নিয়ে থাকতে চায়।তার মধ্যে একটা কলাকার আছে,জেনেছে রাকেশ।এই কলাকারই তাকে ভিতু করেছে। তাছাড়া ওদিক থেকে যারা আসে, অনেকেই ভাল না। বিভিন্ন মতলবে যাতায়াত পর্যন্ত করে। অবশ্য অনেকেই ভ্যান চালানর জন্যও ডেলি প্যাসেঞ্জারিও করে। কিন্তু, তারা সাধারণত পায়ের ভরসাতেই কাজ চালায়। বাইকের খরচা পোষায় না।

সবচেয়ে লজ্জার কথা, যারা তার পেছনে বসে আসে,প্রায়ই ওর সঙ্গে শুতে চায়। এদিকে আসলেই বেশি মদ খাবে আর তারপরেই উদ্বিগ্ন শিশ্নের আঘাতে ফালাফালা করতে চাইবে বেঁটে খাটো অপেক্ষাকৃত মিষ্টি চেহারার রাকেশের পেছন।ওর মতো রিল স্টারের কাছে এটা ভয়ংকর। এবং সেটাই হয়েছে।কাজেই মন দিচ্ছিল রাকেশ।গত পরশু এক মেম্বরের আত্মীয় ওর পেছন মেরে তার ট্রেলার ছেড়েছে।ওর যে হিডন ক্যামেরা ছিল ভারি বডির চাপ আর যন্ত্রনায় হাঁসফাঁস করতে করতে রাকেশ বুঝতে পারেনি।পারল ঘটনার পরদিন রিলস দেখে।ঝাপসা করেছে এমনভাবে যে বোঝা যায় ওটা রাকেশ।পুরো ইমেজে গ্যামাক্সিন।প্রীতিও ভীষণ আঘাত পেয়েছে।প্রচুর রোস্ট হয়েছে।মেসেজ, কমেন্ট এসেছে।এই ঘটনা ছড়াবেই।মাছ ভালই পচেছে।আর এর ফলে প্রীতির এখনও রাজি বাপ‌ও অরাজি হতে টাইম নেবে না।

প্রীতি বিশেষ একটা ভাবতে পারে না।ভাবতে শেখেনি। কেবল ছোট থেকেই নায়িকার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতে চেষ্টা করত।মোবাইল চলে আসায় সেই কষ্ট‌ও কমে গেল।আর রাকেশের আগমনে তো আর ভাবনা বলে তো কোন‌ও বস্তুই র‌ইল না প্রীতির জীবনে।যেমন এই তিন মাসের প্রেমটাও। ভাববার কাজটা এখন রাকেশই করে।আর মরে ভাইরাল হওয়ার এমন অফার ঠেলার মতো বান্দা প্রীতি ঢোল নয়।সে তো দেখেছে দুর্লভ কাশ্যপের ভিডিও কীরকম ভাইরাল।বাবা টাকা টাকা করে।তাই প্রীতি সুপার ভাইরাল হয়ে বাবার হাতে টাকা তুলে দিতে পারার সুযোগ ছাড়বে না।আর রাকেশ তো আছেই।প্রবলেম নেই।

মাথা দুটো গলা থেকে আলাদা হলো লোকাল ট্রেনের চাকায়।

(৪)

ব্যাপারটা নিয়ে একটা ছিঁচকে গোলোযোগ তৈরি হয়। গোলোযোগ বলতে মেয়ের বাপ একটু চেঁচামেচির আয়োজন করছিল। কিন্তু ছেলের বাপ লাইনের মাল।চাপিয়ে দিল অনায়াসে।তার আরও দুই পিস আছে।কাজেই বর্ডারের কাজে নামতে না চাওয়া এই লক্কা শ্রেণির ছেলেটাকে নিয়ে খুব উৎসাহ ছিল না ছেলের বাপের।সে বোঝে টাকা। পনেরো বছর বয়স থেকেই লাইনে খাটছে কিন্তু পুঁজি ছিল না বলে বাইক কেনার সামর্থ্য হলেও বাড়ি এখনও পাটকাঠির বেড়া।পাকা করতে দুই ছেলের ইনকাম ভরসা। ইচ্ছে ছিল ছোটোটার রোজগারে নিজে কিছু জমি কিনে ছেড়ে দেবে লাইন। তারপর ধীরে ধীরে জমি বাড়িয়ে পরিবার সুদ্ধু চাষী হয়ে যাবে। অনেক দিন বাঁচার ইচ্ছে তার।

‌ শুনেছে তার ঠাকুর দা নাকি চাষী ছিল।
সব এলোমেলো হয়ে গেল।শোকের চেয়ে বিরক্ত হল বেশি। বডি তাড়াতাড়ি হাতে নিয়ে ঝামেলা মুক্তি করলেই এখন বাঁচে। কিন্তু সেটা তো হওয়ার নয়। ঘটনা ঘটেছে সেন্ট্রালের এরিয়ায়।বডি প্যাক করে সোজা জংশনে চালান। ওখানে রিসিভ করবে পান্নালাল ডোম। পোস্টমর্টেম করে তবে রিলিজ।
ছেলেপিলের দল খুচর অমর রহে চেঁচাল।দুটো চারটে ভিডিও হল।তারপর বডিরা দুলতে দুলতে সোজা জংশন।

(৫)

বৃষ্টিটা বিকেলে জোর নেমে সন্ধ্যায় টিপিটিপি হয়ে গেছিল। বারোটার পর আবার বাড়ল। বিদ্যুৎ চমকানি,হালকা হাওয়া আর মাঝারি মেঘের আওয়াজ বুঝিয়ে দিচ্ছিল ব্যাটিংটা টেস্টের।
– লোমের বিষ্টি।ঢ্যামনা শালা খচ্চা বাড়াল।ভরাট ,ইষৎ জড়ান গলায় বলে উঠল পানু।ঘর ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠতে ইচ্ছে করছিল।ডিউটির দিনে চারটে বাংলা খায়। কিন্তু আজকে যা বৃষ্টির বহর পাঁচটা হয়ে যাবে।বারোটা বেওয়ারিশ বডি। পুড়িয়ে ফিরতে রাত ভোর হবেই।
-গুষ্টিসুদ্ধু লোক শানাচ্ছে আর আমার শালা ঠারকি কপাল।শ্বশুরও আজ জাপানি তেল কিনে আনিচে।
টের পায়নি,একটা বডির হাত বেরিয়েছিল প্লাস্টিকের বাইরে।চামড়ায় আঙুল ঠেকাতেই পচ করে ঢুকে গেল। পানুর আয়ু রেখায় গলিত চর্বির মৃদু ছিটে।

এইসব ব্যাপারে অভ্যস্ত হলেও পানু আসলে গায়ক। তাই ঘেন্না লাগে।নামটাও লাগসই। কিন্তু পান্নালাল যেভাবে পানু হয়ে যায় তার চেয়ে ভিন্ন প্যাটার্নে তৈরি আমাদের পানুর অস্তিত্ব নির্মাণ।এক বৌদি বিষ খেয়ে মরে একদা।বাবা মাল খেয়ে সামলাতে পারেনি।চড়ে বসেছিল মড়আর ওপরেই।পড়বি তো পড় ডাক্তারের হাতে।বাপের চাকরি যাওয়ায় অগত্যা পানুকেই হাল ধরতে হল। আরেকবার বাপের ক্যাঁকালে লেথোতে ইচ্ছে করে পানুর।

কিশোর কণ্ঠী পানুর এসব নোংরা নিতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে আঙুলটাকে বের করে এনে গজ দিয়ে মুছে ফেলে। তারপর গজটা ফেলে দিয়ে আবার বডি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়।তবে খুব রাগ হয়।বাবার ওপর রাগ,বডিগুলোর ওপর রাগ।

(৬)

ভোরই হয়ে গেল বডির হিসেব বুঝিয়ে দিতে। রীতিমত রোদ উঠে গেছে।তলানিটুকু নিয়ে ভোম হয়ে যাওয়া পানু এসে বসল মর্গ সংলগ্ন ওদের কোয়ার্টারের বারান্দায়।সকাল সাতটার ফ্যাকাশে আলো। চোখ কড়কড় করছিল।জলও পড়ছে।শম্পা গিলে মেটের কষা নিয়ে আসছে।খেয়েই একেবারে নাইটের আগে উঠবে।নটায় ডিউটি।বেড়া ঠেলে দুলাল ঢোকে।
– পানু দা,সব ঠিকাস তো!
– কবে বেঠিক দেকেচ?
– তালি ভ্যান নে ‘ টেশন চল। তোমার ছেন্টালের কাজ।দুটো আইচে। তুমার ডেউটি তো আমি দিতি পারবা নে ‘না।
-বানচোদ

আগুন জ্বলে ওঠে পানুর চোখে। বিভৎস রিরংসার আগুন। কিন্তু হুঁশ খুইয়ে বসেনি তখনও। আসলে একটা সময়ের পর আর নেশা হয় না। ঘুম পায়।রাগটাকে হজম করে নিয়ে বলে,
– হুমমম ‌‌।যা তুই।ভাত গিলে যাচ্ছি।
– তাড়াতাড়ি এস দা।
– যাচ্চি যা।আর শোন বল্টুরে ডেকে দুটো বোতল তুলে নিবি।তুই যাবি তো!
– না,দা,কডা ইদিকেও আসিচে।একটাই নেব তালি?তুমার সাতে ভ্যানঅলা যাবেনে।
‌‌ ‌ – না,একটাই নে তা’লে।
রাগটা আবার চড়াৎ করে উঠল।একে এই অবস্থা।তার ওপর প্রায় নিজের দায়িত্বে যাওয়া,দুটো বডি তোলা,আনা।ভাবলেই হজম করে ফেলা রাগটা বমির মতো উঠে আসতে লাগল।

(৭)

বডি তুলে ফিরছে।একটা ছেলে মেয়ে।গলা দিয়েছে ‌। সুইসাইড ব্যাপারটা ও এমনিতেই নিতে পারে না। পালান’র মতো লজ্জা আর হয় না।তবে রাগটা যে পর্যায়ে উঠতে পারত,সেই অব্দি গেল না।কারণ বটতলাতে ছুঁচো বসে ছিল।আগে খুচর বেচত,এখন সন্ন্যাসী হয়ে পাইকারিতে গাঁজা বেচে। পুরনো বন্ধুত্বের খাতিরে কল্কে দুয়েক টানল একসাথে।ফলত রাগের মাথায় এল সম।দিগন্তবিসারী এক সম।এসব সময়ে পানু বিশ্ব পিতৃত্বে ভর করে বসে।কল্যাণ কামনায় নিরত হয়।সেই মেজাজেই স্টেশন চত্বর ছাড়ল ভ্যানের ওপর ভর করে।টলতে টলতে।
– এই দোয়ানে…তোয়ে এশো টা…
বিড়বিড় করতে করতে হাঁটছিল।পানুর নজর ছিল না কোন‌ওদিকে।গণ্ডোগোল তৈরি হল রাস্তায় উঠে। বিরাট জ্যাম পাকিয়েছে। স্কুলের ছেলেপুলে,অফিসের লোকজন,বাস,লরি।টোটো তো আছেই ।সিভিক আর কবে সামলেছে এই সব!

ভ্যানওয়ালা সতর্ক করেছিল ব্রেক কষার আগে। কিন্তু সে কথা কী আর পানুর কানে ঢোকে!ঢোকেওনি।ভ্যানের পেছনে ধাক্কা খেয়ে পানু বড়ো বড়ো চোখে চারাদিকে তাকায়।না হলে এতক্ষণ মাথা নিচু করে চারদিকে অস্পষ্ট তাকাচ্ছিল।
তাকিয়েই দেখে কয়েকটা ছেলে মেয়ে আসছে গল্প করতে করতে।চট করে মনে পড়ে গেল গলাকাটা ছেলে মেয়ে দুটোর কথা। এদের তো ওই গতিই হবে।ওদিকেই তো যাচ্ছে তারা। এগিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।
আর থাকতে পারল না পানু। কিছু করার দরকার। এখুনি।ছেলে মেয়ে দুটো স্টেশনের দিকেই যাচ্ছে।ওরা জানে না। কেউ জানে না।পানু ডোম কেবল দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু নড়তে পারছে না ‌‌।পা দুটোর কোনও অস্তিত্ব নেই যেন।

হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসে পানুর।লাল-হলুদ বাতি দেখাতে হবে!ওরা দেখবে।দেখে দাঁড়াবে।সেই সুযোগে পানু বলে দেবে ওর দেখা গুপ্ত ঘটনাটা।
ভ্যানের ডালা খুলে হাত ঢুকিয়ে দেয়। নির্ভুল হিসেবে পানুর দুই মুঠো ভরে যায় একমাথা চুলে।প্রকাশ্য রোদে বেরিয়ে আসে তারা।দুলতে থাকে।ছিন্ন অংশ থেকে পতপত করে লাল- নীল- হলুদ কষ্ট পাওয়া শিরা দোলে…

(৮)
পানু শুনতে পাচ্ছে দিগন্তে হাততালি।সচিন শেষ দিন যেরকম হাততালি পেয়েছিল।পানু দেখছে,বহুদূর থেকে কয়েকটা মানুষ দৌড়ে আসছে।ওর দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসছে…

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes