
অনুভা নাথের গুচ্ছকবিতা
।।উড়ান অথবা প্রেম।।
নক্ষত্রের শরীরের মতো জ্বলতে চাওয়ার মধ্যে কোনও কারণ নেই।
একলা বৃষ্টি বা নির্জন শীতের বুক ছুঁয়েছ কখনও?
কী নি:সীম বেদনা একটানা ঝরতে থাকে…
তুমি তাকে ভাব মেঘ অথবা ঝরাপাতা।
ব্যথার অতীত শেষ বিকেলের মতো হয়-
যেন অদৃশ্য আততায়ী
অতর্কিত আঘাত হানে অন্তরমহলে।
উষ্ণ উদারতায় পৃথিবী শুষে নেয় সেইসব বিরহের সাদা রঙ।
তবুও তারই ছিঁটেছটা মরা পালকের মতো ভেসে থাকে আকাশের আবহে।
তুমি তাকে ভাব উড়ান অথবা প্রেম।
।।গভীর।।
ঘুমের মতো গভীর আর যন্ত্রণার মতো তীব্র স্মৃতির দাগ জড়িয়ে কেটে গেছে অযুত মুহূর্ত।
মুমূর্ষু মনের আলগা স্বরে ঘোর লেগে যায়।
ভ্রম আঁকি খাতায়,নদীর কিনার জুড়ে সেসব আখর বসতি গড়ে।
ফুলঘাস,ফড়িং আর শিশিরের নরম আলো ঘন হয়ে ওঠে।
আমি অবাক হয়ে চেয়ে দেখি,জমাট ভ্রম কবিতার মতো জড়িয়ে থাকে জীবনকে।
বিলিয়ে দেওয়ার শেষে যা দাহ হয় সেই আভায় থাকে বৈরাগ।
বিষাদের বেপথ ছুঁয়ে থাকে পুরোনো সংলাপ।
আরও কিছু মায়া বাকি পড়ে মনের কিস্তিতে।
বিকিয়ে যাওয়ার আগে অনন্ত কবিতা হয়ে উঠি।
ধানকাটা মাঠের মতো গহন ও নিঃস্ব হয়ে ফিরি বারে বারে…।
।।মনকাহন।।
ঝাঁকড়া চুলের মনবসতি, এতোলবেতল রোদের দেশ
দুপুররেলিং আবছা ছায়া,সানগ্লাসে তার মেঘের রেশ!
ঠোঁটের নিচে তিলের আদর,বৃষ্টি মাখে নাকছাবি
চড়াইসময় জড়িয়ে হাতে,তার তুলিতে জলছবি।
অনামিকায় আটকে বিকেল,ইচ্ছে জমায় চুপমনে
গানের সুরে সন্ধে গড়ায়
আনমনে আর হেডফোনে।
চোখের কোলে স্বপ্ন জমা, মন জুড়ে তার ঢেউযাপন
সেই মেয়েটা আলতো ছুঁয়ে কাব্য লেখে মনকাহন।
।।ভাঙা তোরঙ্গ।।
ফেলে রাখা ফুরোনো যা কিছু,
আদরছোঁয়া পেলেই,
মেয়েজন্মের মতো ভেসে ওঠে মনের কিনার জুড়ে।
বাতিল কথা বা হারিয়ে যাওয়া উষ্ণতা অতর্কিতে অগ্নুৎপাত ঘটায় সময়ের শরীরে।
গাঙচিলের ঝাঁকে আঁকা থাকে শূন্যের স্বর।
সময়ের শোক অন্তর্বাসের মতো ঢেকে রাখে মনের ক্ষতকে…।
ছায়াপথ সরিয়ে ছুঁয়ে থাকা কথারা ফিসফিস করে ওঠে-
তুমিই বল প্রিয়,যে তোরঙ্গ ভেঙে গেছে সেটির বিভঙ্গে কি আর আদর লেগে থাকে?
…..x….