
সুমন ঘোষ-এর কবিতা
মেঠেজলী
শান্ত এই জল
স্থির হয়ে আছে কিছু ছবি
হৃদয়ে চঞ্চল সময় নড়া-চড়া করে
বলে ফিরে চল, ফিরে চল জীবনের পাড়ে
যেখানে বসেছিল কিশোরেরা ছিপ হাতে নিয়ে
যেখানে গুগলি কুড়াতো কিশোরীর হাত
যেখানে সকাল-সন্ধে সূর্য –
ছুঁয়ে যেত জল, শান্ত লাল জল
সেখানে স্থির হয়ে বসে আছে বাসনা-সকল।
সারিপুকুর
তোমার বুকের রঙ দেহে এসে লাগে
জীবনের সমস্ত গান ছুঁয়ে যায় মন
আরেকটু বেঁচে নিতে বাতাস –
বয়ে যায় মৃত্যুর বিপরীত পথে
লাল সংকেত-যত মুছে যায়
সবটাই পথ –
সামনে-পিছনে, ডান-বাম দিকে,
তোমাকে ছাড়াই দেখি চলে যায় দূরে
যখন তোমার রঙ গায়ে এসে লাগে
মন থেকে মুছে যায় পৃথিবীর রং।
দাগ
কতটা অভাবে তুমি আসবে
কত কাছে পেলে ভালবাসবে
তোমাদের মতো যদি হাঁটতে না-পারি
দাঁড়াবে কি?
যদি অভাব না আসে
আর যদি না-পাও পাশে
থাকবে কি?
আমি সামান্য, আশা করে থাকি
তোমার যাওয়ার পথে দাগ দিয়ে রাখি
একদিন পায়ে পায়ে সব দাগ মুছে দিও তুমি।
প্রস্থান
ধূপ আমার মতো পোড়ে
যারা দূর থেকে ছাদ দ্যাখে
গৃহে প্রবেশের পথে
ধোঁয়ার চাদরে মোড়া আকাশের দিকে মুখ করে,
তারা জানে হোম শেষ হলো
এবার, ঢুকে পড়া যায়
আমি, বা ধূপ যে-নামে ডাকো আমাদের
পুড়ে গেলে মিশে যেতে পারি
তোমাদের সাথে, গলায় গলায়
আমাদের দেখা হবে আবার প্রস্থান-পথে
সন্ধেবেলায়।
অন্ধ
দীপ জ্বলে
যতক্ষণ জ্বলে
কিছুটা দূরে থাকে অন্ধকার।
পরিপাটি সলতে
পাকানো ভাষা
আমার ভিতরের কালো
বাইরে আলো মাখে;
দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।
ভবিষ্যত
অতীত মুছে ফেলার চেষ্টায় খুঁজে পাই ঝিনুক
ভিতরে মুক্তো আছে কি নাই
জানা নাই
তাই,
মোছামুছি বৃথা;
বৃথা এই শ্রম।
স্বাদ
সমস্ত তৃষ্ণা কি মিটে গেল?
হয়তো
হয়তো-বা না
যার খোঁজে অতিষ্ঠ হয়েছিল চাতকের ছানা
বড় হয়ে খোঁজ পেয়ে গেল একদিন
এরপর আর পিছু ফিরে তাকাবে না
শুধু গতি, স্থির গতি, আকাশেতে লীন
যে-ডানা ভাঁজ করে রাখা ছিল
পুরোপুরি মেলে দিয়ে উড়ে যাবে একটানা
মনে রেখে তৃপ্তির স্বাদ
আর তাকে ছোঁবে নাকো কোনো অবসাদ।