
রুমেলা দাশগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
তৃষা
শরীরে সমস্ত মেদ ঝরে যাওয়ার একটু আগে
একবার তোমার ভার বহনের দায় নিতে চাই,
ঝড়ের দাপটে শিখা কেঁপেকেঁপে উঠেছে যেভাবে
তুমি ছেড়ে গেছ রোদ-এই ভয়ে আমিও দূরের
থেকে লণ্ডভণ্ড ঢেউ সামলে গুছিয়ে বসেছি ছাদে,
কোথায় যে এতখানি চাঁদের আলোয় লুকিয়েছো!
আমি খুঁজি রাতের পাহাড়,কথা ছিল দেখা হবে
কোনোদিন সেখানেই বুঝি নীলিমার নীলাভ গরিমা,
তুমি পাশে আছো তাই,কত ভুল হারিয়েছে পথ,
গৌতমী বিকেলে মেয়ে তোমার বাড়ির দিকে যাবে
এমনই স্বভাব জেনো তার,অচিরেই ভুলে যাও যদি!
অবাধ
তাকে শাসনে বারণে রেখেছি জেনেও
অযুত হাজার মানিক জ্বলেছে গোপনে,
যখনই ধ্বসেছে পাড় নদী বরাবর
নাগাড়ে স্রোতের ভিড়ে চোখ দুটি স্নেহ!
চোখের পাতাতে আয়ু,শীত শীত ভাব,
ছেঁড়া ঘুড়ি রোদে পোড়ে পুরোনো অভ্যেসে,
কোনোদিন দেখা হলে বিকেল পিঁড়িতে
মনে মনে এঁকে দেব নিমগ্ন আলাপ।
তোমার আলো
কী ভাবে যে লেখো আলো,রোদ্দুর সিঁথিতে মাখামাখি!
কী উপায়ে ধীর পায়ে,যাই সে লেখার পাশটিতে,
কী ভাবে সে আলো খুঁজি মন,জানাতে পারিনি আজও,
অভয় দিয়েছ তুমি বড়,’দোষ নেই জেনো কোনো’।
যে আঙুল ভেবেছিলে আছে,আধখোলা চোখ রেখে,
অনন্ত আদরে ভীরু যে মরণোত্তর দ্বিধা,ভ্রম
পেরিয়ে গিয়েছ যাকে অনায়াস নিগূঢ় সাহসে,
আজ তার ইহকাল তোমার নখের সাদা শেষে।
অক্ষর যাতনা যা অবধ্য,তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে,
কত শ্রম আসে পিছু পিছু,মাথা রাখে কাঁধে,তবু
আমি সবটুকু শ্রম ঝেড়ে,সব কাজ সারা হলে
সন্ধ্যার নরম আলো জ্বালি,করি কুশল কামনা,
তোমাকেও ডেকে নেয় মন,আমার আসন পাশে
অবিকল ছায়া পড়ে,চেনা নয়,সমস্ত হৃদয়ে
তবু কী সুবাস তার, কী নিবিড় পরিচয় ঝোঁক,
এভাবেই ছুঁয়ে থাকো,বিকেল ফুরিয়ে আসা আলো!
ব্যথা
তোমার চোখের নীচে নিরাময় বলিরেখা দেখি
তোমাকে দেখেছে যারা এঁকেছে বিকেল সাইকেলে
তোমাকেই ভালোবাসি, একথা লিখিনি খোলা ছাদে
তোমাকে বেসেছি ভালো ঘনমেঘে,মেঘের আড়ালে।
যে ব্যথার ব্যথা ভুলি,বুকের দুপাশে মৃদুধারা
একা একা জেগে থাকি রাতভোর তোমাকে সাজিয়ে
যে শোকের শিখা নেভে আদরের অনায়াস জলে
তার পাশে হেঁটে যাই,প্রতিরাতে তোমাকে ছাপিয়ে।
চাঁদ
তোমার আঙুলে জ্বর সন্ধ্যার পিঁড়িতে হাত পাতি,
সাদা রং নিরিবিলি তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে,
পিছু পিছু ডেকে যায় বানান ভুলের গড়িমসি
তোমার বালিশে মাথা প্রেমিকের ব্যথা লিখে রাখে।
আমার চাদরে ঘুম খোয়াই কিনারে পাশাপাশি
তোমাকে দেখার শেষে না-দেখার লোভ বেড়ে যায়
সারারাত জেগে থাকি, তোমার শরীরে চাঁদ নামে
তোমাকে জোছনা বলি,জোছনা কেন যে নিরুপায়!
অন্তর্যামী
জেনেছিলে তুমি,তোমাকে সেভাবে ডাকি
পিছু পিছু ধেয়ে যাই অকূলের টানে
ডিঙ্গি চড়ে ছুঁয়ে যাই ভিজে বালুচর,
তবে কেন পাড় ভাঙ্গে বিরহ কি ভানে!
তোমাকে ডেকেছি যত,ভুল হয় জানি,
বারে বারে থেমে থাকে আলুথালু চোখ
কত নাম রেখে যাই ফ্যাকাশে ছায়াতে
বারে বারে চেয়ে দেখি, দেখা না ফুরোক!
পুরোনো অসুখ সব বেড়ে যায় রোজই
পথ্য কিছু পড়ে থাকে কাগজের ভাঁজে
একে একে খুলে রাখি, মনে রাখি স্নেহ
কীভাবে সে ঢেউ থামে,থামে যেন না যে!!
যেভাবে রেখেছ
আমাকে যেভাবে আড়ালে রেখেছ
সরিয়ে রেখেছ কাছের সময়
দুহাতে,
ভুলিয়ে রেখেছ নিবিড় অসুখ
বিকেল আলোতে আঙুলে আঙুলে
শপথে।
তোমাকে দেখেছি শুধু চেয়ে আছো
ভুল গলিপথে আলো ছেড়ে গেছে
ঠিকানা,
সেখানে জেনেই ফিরে যাও তুমি
নাম নেই কোনো সাদাকালো বাড়ি,
ফিয়োনা।
সকাল নেমেছে স্কুলবাড়ি ছাদে
দুপুরের তেজে ব্যথা বাড়ে কমে
যেভাবে
আকাশী পাখিরা সারাঘরময়
ছোটাছুটি করে বোকাসোকা মেয়ে
স্বভাবে,
মনে মনে ক্ষয় মেনে নিতে জানে
কখনো এমন হয়েছিল জেনে
গোপনে,
তোমাকে খুঁজেছে আঁতিপাতি করে
ধুধু বালুচর প্রিয় সামিয়ানা
যেকোণে।
গ্রহান্তরে
কতদিন ধরে যেন এমন হয় না আর,
মেঘ জড়ো হয় অনন্ত আকাশ জুড়ে,
মেঘের রং কালো থেকে গাঢ়তর কালোর দিকে যায়,
সমস্ত দিন ধরে মেঘ জমে।
প্রকান্ড এক ছায়ায় সূর্য,
নিস্তরঙ্গ জাগি প্রহর,
তারপর কিছু নেই,
ঝড়ের শেষে ঝরে যাওয়াও নেই,
শুধু অনেক দূরে ঝড়ের ধুলো,
মুছে যায় ভ্রম,
উড়ে যায় গ্রহান্তরে
তোমার দিকে নিছক চেয়ে থাকার ছল।