
অরিত্র দ্বিবেদী-র কবিতাগুচ্ছ
উৎসর্গ: লুদ্যাঁ’র ম্যাতিউ পরিবারকে
পৃথিবীরা কত ঘৃণ্য
প্রাণ এত তীব্রভাবে শব্দ করে কেন?
ওদের চুপ করতে বলো না —–
আমার ভীষণ ঘেন্না লাগে!
প্রবেশক
এখানে একটা গাছ লাগাব
আমার বোনকে কেউ টিটকিরি করেছিল
ওখানে একটা গাছ লাগাব
আমার বৌকে কেউ ছুঁয়ে দেখছিল
এদিকে দুটো ওদিকে দুটো
জঙ্গলে জঙ্গলে ভরে যাব
সেদিন গুলো গাছ লাগাব
আমাকে কেউ চেপে ধরেছে…
পারি
যে কোনো শহর
যে কোনো সভ্যতা
দেখলেই আমার সন্দেহ হয়
আমি অ-জীবিতদের চিৎকার শুনতে পাই
যাদের পেটে ধরে রেখেছে
প্রতিটা ভীত
ভার্সাই
প্রতি আঁশটে মেঘের শহরে
একটা করে
কৃষ্ণচূড়া এঁকে দিও ভগবান
রেনোয়ার মডেল ছিলে না তুমি
টেবিল, চেয়ার, আসবাব
পশ্চিমে ঘনানো কালো মেঘ
কোনোকিছুই
তোমাকে ধরে রাখার জন্য
যথেষ্ট ছিল না।
তাই তারা ধরে রাখার চেষ্টাও করেনি
মনে রাখার দায়ও আমার ছাড়া কারো নেই
আচ্ছা, মার্গারিট —
ওরা কী জিজ্ঞাসা করেছিল এইসব
যখন তোমাকে
তুলে নিয়ে গেল
মেরুণ রঙা গাড়িতে?
একটি শুভ্র হাত
শহরেরা ভুলে গেছে
তোমাকে ভুলেছে তো সবাই
তোমার না দেখা কোলকাতা
শুধু মাঝে মাঝে তোমার কথা বলে
যেমন বলত সুনীল!
কেয়ার অফ —
সালটা ১৯৭৪ হলে অবাকই হতাম
সালটা ২০২৩
রোজই পোস্ট অফিসে ফোন করে
জিজ্ঞাসা করি, ‘এসেছে ?
আসলে কী বলুন তো, ও তো পুরোনো মানুষ
চিঠিই লিখতে জানে খালি’
আজ আবার রবিবার
পোস্ট অফিস বন্ধ
সারিয়ালিজ়ম
ইম্প্রেশানিজ়ম এর শিল্পীরা
ভাগ্যিস আর নেই এখানে
তাঁদের কাজের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে
ঝিম ধরে আসে
আচ্ছা, তোমার হারিয়ে যাওয়া কি
এত উজ্জ্বল রঙে আঁকতে পারতেন এঁরা?
জানি, জানি, তুমি কী বলবে,
বলবে, তাই তো কিউবিজম এলো।
“রক্তের মধ্যে এক তোলা ভালোবাসা
আত্মার মধ্যে এক বিন্দু সত্য…”
প্যারিসে আজও রাত নেমেছে।
লিরিক-প্রসবকারী
শান্ত সমুদ্রের মত হয়ে আছি।
ভেতর ভেতর খেলে যাচ্ছে ঢেউ
নীচে কোথাও হারানো শহর, শায়িত।
আমি দিব্যি করে বলতে পারি —
হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে
আটলান্টিস তোমার মত অত্যাচার পায়নি
পারসিয়েন্ পারসিয়েন্
থমকে থাকব তার উপায় কৈ
জীবন, থামার সুযোগ দেয়না মোটে
দুদণ্ড বসে যে ভাবব তোমায়
তার সময় কোথায়?
হাতে তো অঢেল আলস্য এখন
আমাকে আড়াল থেকে দেখে
মুখ টিপ হাসছো বলো!
ওয়াইবাইডু
আবার কিছু হারালাম জানো
এ আর এমন নতুন কী!
মুসাফিরদের ধর্মই তো নদীতে নদীতে
উৎসর্গ করে ফেরা।
নর্ম্যাণ্ডি থেকে
ছন্দ একটা আছে ঠিকই ভেতর ভেতর নেচে চলে, সেদিন তুমি হারিয়ে গেলে সন্ধ্যে শহর একলা মেয়ে।
‘খবরটাতো দিইনি তোকে, শঙ্খ গেছে, অলোকরঞ্জন, তারও ফাঁকি এমনি এমনি এমনি নাকি! বন্ধুরা সব ছিটকে যাবে, পুজোর দিনে যেমন আমি —‘
সুনীল বলতে বলেছিল
ওকে খুব হিংসে হয় আমার, খুব
এতদিনে সত্যিটা ও নিশ্চই জেনেছে
এতপরে জন্মে আমি আর কী করলাম!
“মার্গারিট, এই সূর্যালোক”
ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলে তুমি
শেষ মুহূর্তে কি মনে পড়েছিল তাঁকে?
ভেঙে যায়নি — সব ধারণা!
খান খান হয়ে গেছে আশা?
ফ্রান্সের ইতিহাস ভুলে যাবে তোমাকে
সুনীল আর নেই এখানে
আমি
মনে রেখে দেব
মার্গারিট
আর মনে রাখবে
এই সূর্যালোক!

