
সরিৎ দত্ত -র কবিতা
পুরোনো গিটার ঝুলে আছে বাসি ক্যালেন্ডারে
এক ۔
পঁচিশ বছর ধরে পড়শী হয়ে আছি
আমি ও আমার শোবার ঘর
মাঝে মাঝে জানালায় চোখ রেখে দেখি
বিছানায় সদ্য বদলে দিয়েছে চাদর , আহা, চাঁদের মোটিফ
ধূসর আকাশ , চাঁদ , তারাদের আড়াল করেছে |
রাত্রির অপেক্ষা করি , তখন পূর্ণগর্ভা চাঁদ
তলপেট ফুলে ওঠা জ্যোৎস্নায় ভাসাবে এ ঘর
আমার প্রাচীন রমণী , ঈষৎ পৃথুলা , সেও
ভেসে যাবে পরিযায়ী হাঁসেদের মতো
অন্য্ কোনো স্তেপভূমি জুড়ে বাজাবে নুপুর
আমাদের যাবতীয় অসমাপ্ত গান , শ্যাওলা ও ধাতব ঘন্টাগুলি
আধখাওয়া থালা থেকে খুদকুঁড়ো গান খুঁজে নেবে
দুই ۔
কিছু কিছু ব্যক্তিগত অপূর্ণতা থেকে যায় | ভাস্কর চক্রবর্তী মৃত্যুর আগে কোনোদিন সুপর্ণার কাছে শীতকাল আসবার ঠিকঠিক দিনক্ষণ জেনে নিতে পেরেছিলেন কিনা , অথবা কৈশোরের স্বপ্নে দেখা সাপটির রং কালো নাকি মেটালিক ধূসর , জানা হয়নি কোনোদিন , ইচ্ছে হয় খুব |
চা বাগান থেকে পূর্ণিমার চাঁদ যতটা সুন্দর লাগে , চাঁদের কৌণিক দূরত্বে চা শ্রমিকের রান্নাঘর ততটাই যথাযথ সুন্দর কিনা , জেনে নেওয়া হয়নি কখনো | জ্যোৎস্না ও ব্রিজের কম্বিনেশন ۔۔۔ রাত্রে সেনাচলাচলের সুবিধা , নাকি অনন্ত প্রেমের সঙ্গীতে পবিত্র স্নানের কথা ভেবে , আমাকে জানায়নি কেউ |
এইসব অপূর্ণতা জমা হয় চশমার কাচে | কুয়াশার মতো একদিন , পৃথিবীর সমস্ত পুরুষ ঘোড়া বৃদ্ধ হয়ে গেলে , তাহাদের মৃতা নারীদের জন্য এইসব শূন্যতা গান হয়ে বাজে ||
তিন ۔
রাত্রি ধূসর হলে স্বপ্নের ভিতরে উড়ে যায় তারকোভস্কির সাইকেল , তার নীল দুই চাকা হয়ে ওঠে ছান্দিক ব্যালেরিনা আর সাইকেল যৌনতা জানেনা বলে সেও কামগন্ধহীন রজকিনী প্রেম মেখে উড়ে আসে রাত্রিজীবী নারীদের গৃহে , সেখানে জানালা দিয়ে নেমে আসে গলে পড়া তরল চাঁদের দেহ
বিছানার চাদরে মাছের ছবিরা জীবন্ত হয়ে ওঠে , তখন শয্যা জুড়ে ফুলে ওঠে গর্ভিনী জোয়ার , বিছানার তীরে তীরে ঝোপেঝাড়ে জেগে ওঠে শঙ্খচূড় , নিজস্ব সাপিনী তার শঙ্খপ্রত্যাশায় লগিন হয়ে থাকে দেহে | নীল বিষ ঠোঁটে নিয়ে আদরের চুমু দিলো চর্যার ডোম্বিনি , আহা তন্ত্রলগ্ন নারী , বেজে ওঠো , মায়াবী গিটারের মতো
এই দেহ নদী হলে , আহা , সাঁই , বেলাজুড়ে একতারা ভাসাবো ۔۔۔
চার ۔
প্রতিরাতে ঘুমের ভিতর একটা ইঁদুর ঢুকে পড়ে | তার দাঁতে আদিম মিশরীয় সুন্দরীদের ত্বক ও ঠোঁটের মৃতকোষ লেগে | ঘুম যত নীল হতে থাকে ইঁদুরটা বড় হতে হতে আলতামিরার বাইসনের মতো একগুঁয়ে | আমার লেখার টেবিল সহ আমি ও আমার সমস্ত কবিতা উড়ে যেতে থাকি অনন্তের লক্ষ্যে
একদিন আমাদের ভালোবাসা অমরত্ব পাবে ভেবে চাঁদসদাগর সান্তালি পর্বতের চূড়ায় অক্লান্ত নির্মাণ করে চলে ধাতব মিলনকক্ষ
ফাউস্ত এর ডায়েরি থেকে
এক ۔
দ্যাখো মার্গারিটা ,বিশ্বের যাবতীয় লোমওঠা কুকুর , তাদের পচনশীল ঘা আমাকে ভিজিয়ে দেয় | মায়া , আহা , ওইসব নীল ডানাওয়ালা জীব , তাহাদের রক্তপুঁজকাদা থেকে একদিন শাদা ও পবিত্র ঘুমের গন্ধ পাবো জেনে আমিও হাতেমতাই হয়ে যাই , একদিন এই আত্মা বিক্রি করে দিই শয়তানের সান্দ্র গুহায় ۔۔۔ ওহ মার্গারিটা , তুমিও তো রক্ত মেখেছো হাতে , ভালোবাসা লাল হয়ে ফুটে ওঠে মাতৃরক্তে , দেখেছো সে স্বাদ কী তীব্র লবনাক্ত ,এই বদ্ধঘরে বড় শ্বাসরুদ্ধ লাগে , প্রিয়তমা ,দ্যাখো গোলাপি আকাশ থেকে মুক্তির নক্ষত্র নেমে আসছে ,আমাদের ঢেকে নেবে তীব্র চুম্বনে
মার্গারিটা , একদিন আমরাও মিশে যাবো আদিম পর্ণমোচী হয়ে ,হেমন্তের মরশুমে আমাদের সন্তানেরা সুদৃশ্য কুকরদের কাছে ভালোবাসা সমর্পণ করে চাঁদজন্ম খুঁজে নেবে , দেখো
দুই ۔
উপত্যকা জুড়ে রাত নেমে এলে বিষন্ন মৃত্যুর টেবিলে মুখোমুখি দাবা খেলে মেফিস্টো ও হফগেন | বহুদিন এ উপত্যকায় বৃষ্টি হয়নি | গম ও ভুট্টারা কেউ সো۔ তন্ প্রসব করেনি বহুদিন | শুধু কিছু বন্ধ্যা পাখি , হয়তো গন্তব্য ভুলে , অন্ধকার মেখে নেয় সন্ন্যাসী ডানায় | এইসব জনপদ সন্তানহীনতায় ভোগে |
দু একটি ধূসর লামা , অনির্দেশ গন্তব্যহীনতার দিকে হেঁটে যায় | তাহাদের পুরুষ প্রভুরা বিগত জ্যোৎস্নার পথ ধরে নারীদের খোঁজে গেছে | একদিন চিরহরিতের বনে এইসব বাণিজ্যপ্রবণ প্রভু , মৃত বাহনের চামড়া থেকে প্রস্তুত করে নেবে সন্তানের শীতের পোশাক , নারীরাও গর্ভবতী হবে |
জ্যোৎস্না বিষন্ন হয়ে আসে | যুদ্ধনির্যাস ভুলে মুখোমুখি মেফিস্টো ও হফগেন , বসে থাকে অভিব্যক্তিহীন | উপত্যকা জুড়ে খুব বিষবৃষ্টি নামে
অনবদ্য লেখা। অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়েছিটিয়ে আছে। অসাধারণ।