
তন্ময় কবিরাজের কবিতাগুচ্ছ
পাথরকুচির শোক
পাথরকুচি পাতার মত শোক-
আমি ভুলে যাই যখন দেখি ফুল ধরেছে ডালে
বালির ভেতর মৃত স্রোত
মাঝরাতের বৃষ্টিতে আমাকেই ভাসিয়ে নিল হটাৎ!
আমি নিজের কাছে থাকব ভেবে তোমায় ডাকি
খাঁচার পাখি নেই , আমিই থাকি সেই সংসারে,
আসার আগে বলতে পারতে
জানো তো আজ অমাবস্যার রাত।
স্নান
আমি নগ্নতার জলে স্নান করি ভোরে
আমি ভালোবেসেছি স্রোত
আমি নির্জনতার কাছে গান করেছি
তোমার কাছে ভুল করেছি গল্প বলে,
আমি ভালোবেসেছি একলা হবো তাই
আমার বিছানা জোড়া হিসাব খাতা
শেষ অংকে অনেক বাকি
শুরুটা যদি আবার ধরি,ভুল করব না আর!
শিশুর মত শোক
শিশুর মত যে শোক সারাদিন কেঁদেছিল
সে এখনো অনেক বড়ো হয়েছে
বন্ধ ঘরে সুখের অভিনয় করে,
ঘুমের ভেতর ডিপ্রেশন
বুকের চাপা অস্থির মধ্যে একমুঠো ঔষুধ
হঠাৎ বৃষ্টি মত ,যদিও শিল পড়েনি রাতে
হচ্ছে হোক,দেখে বোঝা যায় না
দিন এতো গভীর হলেও রাত এখনও ক্ষুদ্র।
ফিরব কবে?
যে ভাবনায় তারা ফুটেছিল জোৎস্নায়
স্নান করে একা বৈষ্ণব বিধবার ঘাটে
ভেজা কাপড়ে জলে কামনার রাত
কথা দিয়েছিল যে হারালো কোথায়?
মাটি কাদা গায়ে দাগ
কত পা এগিয়ে এসেছ তুমি যে আলো নিভে যাবে এখনি?
খোলা চুলে ঢাকা পূর্ণিমার চাঁদ
নিশুতি বসন্তে ছায়া ঘেরা আলপথ
আমি বাড়ি ফিরব কোন দিকে?
শব্দ ভিক্ষা
শুধু কবিতার জন্য একবেলা ভিক্ষা করেছি
ভাঙা কালিতে বিশ্বায়ন
গলি গলি ঘুরে রাজপথ তখন ক্লান্ত
আমার পৌরুষ দাবি ভুলে আঁচড় কেটেছে বালিতে,
আমি শুধু কবিতার জন্য ব্রিগেডে সভা করেছি।
জানালার পাশে ধুলো
আমার সরগর দুঃখে আমি সবাইকে চিনি,
নিঝুম রাতে দ্বীপ ডুবে গেল
কোন জোৎস্নায় এ জাহাজ বন্দরের দেখা পাবে?
আমি কবিতার জন্য শ্মশানে বেঁধেছি ঘর
সংসারি পাখি বৈষ্ণবী গান তাল কেটে গেল উড়ে –
শুধু কবিতার জন্য তীরে নামলো ধস
দুটি শব্দ ফিরে এলো,নিরুদ্দেশ সে নৌকো আজও।
দাগ
দোতলার ছাদে মরা পাখির পালক
শকুন নেই , রক্ত শুকিয়ে গেছে কাল বিকালে
ফলার মত শোক
স্বাভাবিক হাওয়া প্রতিবেশীর ঘরে-
উৎসব নতুন কাপড়ে কাদার দাগ
কেউ প্রতিবাদ করে না !
ভুলে থেকে সুখ যত দিন এভাবে বেঁচে থাকা যায় ,
নতুন পাখির প্রতিহিংসা তার গলায়
তুমি কোকিল ভেবে বসন্তকে ডাকো
ঝড় এলোমেলো বৈশাখী রোদে পুড়ে যায় দিন !
মানহানি
আমি কবিতার নামে এফআইআর করি
অবৈধ শব্দের মানহানি
বারবার প্রতারণা,কতো রাত ঘুমাইনি
খুঁড়ে খুঁড়ে মাটি আর শুধু বালি- ছাই
জল দেবে বলে চাঁদও ডুবে গেল!
আর কতবার আর কত অভিযোগ
আমার কথা কেউ শোনেনি এতদিন,
ভালোবাসার আজ ট্রায়াল চলুক
আমি শান্তি না পেলে এ মামলা চলবেই।
কোন বসন্তকে ভালোবেসেছিলে?
আগুনের ঠোঁটে ভিজে দেশলাই
আজ ফুলিঙ্গের বড়ো দরকার –
আর তুমি শূন্য বসন্তের উলঙ্গ প্রকৃতির
ঔরসে ভাবছ এখনও বেঁচে আছে প্রান!
যে বসন্ত নিভিয়ে দিল শিশির প্রদীপ,
যে ঝাপসা কুয়াশার মাঘে প্রত্যয়ী কৈশোর ভেবেছিল,
দেখা হবে একদিন ভোরের গোপন আলোয়-
আজ উল্লাসের দিনে তোমার বিরহ প্রশ্ন করে
তুমি কোন বসন্তকে ভালোবেসেছিলে একদিন?

