
গার্গী সেনগুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
জ্যোৎস্না পোড়া ছাই
১.
কলকাতা জেগে উঠছে রোজ
আমার ঘুম ভাঙছে না।
আলো, আলো, আলো আর আলোর ভিতরে
আলোবাতাসহীন অন্ধকার…
হাওয়া কোথায় যায় জানিনা
কুয়াশা হিমের মত মুখ নিয়ে
কলকাতা জেগে উঠছে রোজ
শুধু আমরা তলিয়ে যাচ্ছি ঘুমে।
২.
বিকেলের দিকে মুখ তুলে বলি
দুধে আলতা আকাশে, কমলা সূর্যকে।
বহুতলের জলাধারের ওপারে
রোজ, টুক করে লুকিয়ে পড়ে সে।
ডেকে বলি, শোনো
যা কিছু লিখেছি তোমায় সে সবটুকু
ব্যথা, স্মৃতি, অশ্রু, জল
মুখবন্ধ খামে রাখি, মৃত্যুর অগোচর।
৩.
তোমার দুঃখের হাত বাড়িয়ে রেখেছো
গলে পড়ছে ফুলের সুগন্ধ।
তারার ব্যারেল থেকে মোম ঢালছে কেউ
মোম লেগে স্থবির শরীর।
জ্যোৎস্না পুড়ছে, উড়ে আসছে ছাই
উড়ে আসছে আদিম কান্না —
অরণ্যের এ ছায়া পথে সঙ্গী নেই কোনো
তোমার দুঃখের হাত এগিয়ে চলেছে একা।
৪.
একটি শুদ্ধ কল্যাণ রাগ নিজেকে বাজায়
মঙ্গল হে, বাজো, বাজো, বাজো রে
পট পালটিয়ে যায় ঘুমের ভিতর
ফুলের রেনুর মতো, হাওয়ায় ভাসে হাসি।
মধ্যমে এসে ঘুরে দাঁড়ায় সুর
বাঁশির ছিদ্র ভরে যায় বৃন্তশ্বাসে
ও কিসের ডাক, যাব, কি যাব না!
কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে বেজে ওঠে সন্ধ্যা।
৫.
তোমাকে দেখছি রোজ,অনাবৃত নদীর কিনারে
মুখ ধুচ্ছ, বমি করছ, খেতে দিচ্ছ মাছেদের
ম্যানহোল থেকে উঠে আসছে উড়ন্ত ডানার ঘোড়া
অরুন্ধতীর নৈঃশব্দও কত ফসলসম্ভব, ভাবি…
পোড়া সভ্যতার পেটের মধ্যে থেকে যে আগন্তুক
পথ চিনে এতোটা এসেছে তাকে পাতালশ্রমিক
বলে ভ্রম হয়, ম্যানহোলের অন্ধকার মাখছে যে
কালোর নীচে পূণর্জন্মের অপেক্ষায় আটকে থেকে।
৬.
পথে চলতে চলতে দেখি, তুমিও চলেছ
থেমে গেলে,তুমিও থেমে গেছ অলীক প্রস্তর শীর্ষে।
তুষারের স্তব্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছ,
নেমেছে গলিত হিম, জ্যোৎস্নার দগ্ধ প্রণয় থেকে
এতো যে ভালোবাসাবাসি হল, সবই কি ভ্রম!
ফুটফুটে পূর্ণিমায় এই সব চৈতালি রাতের স্বপ্ন!
৭.
সম্ভবপর ব্যথার মিনারে দেবদারু পৃথিবীর জন্ম—
মাটির অনেক নীচে রোপণ করেছি নীল গাইয়ের শিঙ
মায়ার কলস থেকে ঢালি জল ,মাটির বুননে ব্যথা নেই
নিরালম্ব হতাশ্বাস নেই, নেই বিলুপ্ত প্রাণের কান্না।
বৃক্ষ জানে, মাটির গোপন থেকে কিভাবে ফোটাতে হয়
পত্রপুষ্পে রঙিন আহ্লাদ, প্রেম সবুজাভ হয়ে যায়।
৮.
এই অবেলায় তুই কেন এলি, বলে
উনপঞ্চাশটি প্রেমের কবিতা লিখে ফেলেছি
এ ঘোর উন্মাদ অবস্থায় বায়ু আর বিদ্যুতের
সারমর্ম বুঝে নিয়ে, অস্ফুট কবিতা লিখে কি হবে?
ভগ্ন মৃৎপাত্রে সকলই তো অপঘাতে মৃত
জলজ কণিকা, বরং আজ তুই ফিরে যা।