পাড় ভাঙা সনেটগুচ্ছ <br /> বেবী সাউ

পাড় ভাঙা সনেটগুচ্ছ
বেবী সাউ

পাড় ভাঙা সনেটগুচ্ছ

১.
তোমার দেহাতী নেশা আমায় ছুটিয়ে মারে রোজ
পোড়া মাটি থেকে এত দূরে এসে কাকে যে জাগাও?
জলের ভিতরে আছে কবে কোন পানের বরজ

আমি তা জানি না। দেখি রোজ তাকে জলবাতাসা দাও।
আমার কঠিন সুর শান্ত হয়ে আসে কি কখনও?
যে সুর নিয়তিপক্ষ লেখে তার কাঠামো ভাসাও?

আমি তো ডোমের মেয়ে, শরম লজ্জার নেই কোনও
নদিয়ানিবাসী ভয়। এখনও তো চৈতন্য এল না।
তুমি কি গরম করছ ভাতে ভাত? মন দিয়ে শোনও…

ওই সে ধরেছে গান। পদাবলী গাওয়া খোনা খোনা
কী যে প্রেম, ডুবজলের, ভেসে যায় মনসার মেয়ে
আমি তো অক্ষরজ্ঞান শূন্য হয়ে রেখেছি বাসনা

নিম্নচাপ ঘন হয়। ঝড় আসে। উড়েছে পালক।
তুমি কি আমার জন্য লিখবে একপুঁথি কোনও শোক?

২.

এত কথা বল যেন মনে হয় কথাই তোমায়
এত কথা বলে গেছে,বিড়বিড়ানি, ধুলো মেখে নিয়ে
ছেঁড়া পোশাকের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে জীবন বানিয়ে
কেটে কেটে খায় সেও, এত কথা তোমাকে মানায়?

জল থেকে পোড়া পোড়া গান উঠে আসে হে কবীর
আমি তো তোমার মতো সাধুসন্ত নই গো ভগবান
এইটুকু লক্ষ রাখি, কত চাল জন্ম দেয় ধান
আমার বনলতার জন্য কেউ বাঁধেনি শরীর।

তুমি অত কথা বল, যেন ভোরে ক্ষুধার্ত শালিখ
তার জন্য বেড়ে দেব ভাবি আমি ভাতের ধারাভি
খুলেছি পোশাক কবে, উন্মুক্ত করেছি এই নাভি
এখন ভজন শুনি, কৃষ্ণ তাকে অভিসার দিক।

আমাদের জন্য কোনও প্রেরণাই আসে না নানক
এত কথা উড়ে আসে, অন্ধকারে এত দেখি চোখ৷

বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হলে তবে কেউ কবিতায় আসে।
ঘরবাড়ি বেচে দেয়, বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়
কিছুই লাগে না ভাল, মাথায় হেমন্ত ভালবাসে।
বুড়ি মা তাকায় শুধু, বউ যায় পাড়ায় পাড়ায়

দোষ দিয়ে লাভও নেই, এও এক পবিত্র অসুখ।
সংক্রমণ হয়ে গেলে তাকে তো আলাদা রাখতে হয়।
কেন তাকে ঘরে রাখ? বদ্ধ ঘরে চলতে দাও মুখ?
গায়ে তো ফোসকার দাগ, চোখে তার লেগেছে তো ভয়।

কাকে তুমি ভয় পাও? কাকে তুনি ভালবাস তবে?
এ প্রশ্ন কোর না, শুধু বাড়ি থেকে বের করে দাও।
এ কবে কুকুর ছিল, এ কবে মানুষ ছিল? কবে?
মানুষ এ প্রশ্ন করে। এ সমাজে মাদল বাজাও।

একটি কবিতা শুধু লিখবে বলে তাকাও আকাশে।
বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত হলে তবে কেউ কবিতায় আসে।

৪.

তুই তো আমারই পুঁথি, তোকে নিয়ে শহরে যাব না।
ওরা বড় খিদে নিয়ে আছে। তোকে কেটে খেতে পারে।
শাকিরাসঙ্গীত শুনে হইনি তো আমি দোনামোনা
ও আমার মিষ্টি কবি, তুমি বর্ষা বেচ কি আঁধারে?

আহারে পরব এল,পোড়া মাটি, সাজাও বুটিক।
কবিতাবুটিকে এসে কারা যেন কিনে নিয়ে যাবে।
মায়ের হৃদয় তুমি হয়েছ কি কাবাবের শিক?
কোথায় পালাবে বলো? এবারে তো একা তুমি খাবে।

খাও, খাও, খাওবাদী। কবিতা,সিনেমা কেটে খাও
আমার যোনিও খাও৷, এই দ্যাখো লিরিল সাবান।
জলপ্রপাতের নীচে তুমি আরও তৃপ্তি মেখা নাও।
তোমার দলের জন্য আমি আছি। নবান্নের ধান।

তুই তো আমারই পুঁথি। তবে গায়ে কেন এত জ্বর?
আমি তো মায়ের মন, এ শরীরে সাজানো অক্ষর।

৫.

হাঁড়িকুড়ি বেচে দেব, মশলাপাতি কিছুই রাখব না।।
ধুলোবালি খেতে পারি, এ সংসারে যোনিই আসল।
তুমি তো আমাকে নয়, যোনিকেই শোনাও মাদল।
আমিও তো নেচে যাই। চিয়ারলিডার সুলোচনা।

কার গন্ধ আসে তবে? মৃত্যু এলে সকলে সমান।
তোমার অসভ্য দণ্ড নিয়ে আমি লিখিনি অকাজ।
মৃত্যুর ধোঁয়ায় বসে দেখে নিও কুয়াশাবিমান।
সব খুলে দাও তুমি, আমি দেখি খুলে যায় ভাঁজ।

আমার শরীর আমি দেখেছি কি আগে কোনওদিন?
কবিতা সমাধি চায়, এ কঙ্কাল কলঙ্কেই ভাল
আমার গুরুর কাছে রাখা থাক নশ্বরতা, ঋণ।
সে আমায় বাসে ভাল, আমি তার বিধর্মী কপাল।

এসেছি ধুলোর পথে, তোমার বাতাসে জবাফুল।
আমায় আড়াল করে কোনদিন কোর না এ ভুল।

৬.

আমাদের কাব্যগুলো ছোট ছোট ডিঙিনৌকো হলে
তোমার বাড়ির কাছে একটি বন্দর হয়ে যেত।
এখনও পরম কেউ আমাকেই বাজারেই পেত
ফুলবিক্রেতার ছলে, যেভাবে মালিনী ছন্দ দোলে।

তুমি তার স্পর্শ চাও, দুই হাতে, সব বুঝতে পারি।
আমার ঘরের মধ্যে বাস্তুসাপ আছে কয়েকজন।
আমি তো তাদের ঘরে যাব না, বলেছি গুণীজন
আসেন আমার ঘরে, একেকটি কবিতা যেন খাঁড়ি।

এ ফুলের গন্ধ নেই ও বাবুমশাই, ছুঁয়ে যাও।
যদি বা তোমার মন শান্ত হতে পারে, অন্ধকারে
আমি তো খুলেছি দেহ, সব কাব্য লিখে তুমি দাও
আমারই ভিতর। দ্যাখো ফুলগাছ এসেছেন দ্বারে।

তোমার বেহুলাডিঙি কবে আমি ভাসিয়েছি জলে।
এখন শরীর আমি, কুসুমের মাণিক অতলে।

৭.

সহজ ভাষায় কথা বেজে ওঠে জাপানি মুদ্রায়।
জটিল গাছের পাশে বসে তুমি সরোদ বাজাবে?
এ কোন দৃশ্যের স্বপ্ন, আমার কি রয়েছে কোনও দায়?
ভাত রান্না করছি, একটু ঘি কিংবা মাখন তুমি খাবে?

আমাদের রান্নাঘরে মাঝেমাঝে ছোঁ মারে আকাশ।
দূরের সংসার করি, ব’লে তুমি ভেবনা জারজ
মাটির ঘরের গন্ধ পেয়েছ কি নগরের দাস?
খালি পায়ে হেঁটে গেছ ভোর থেকে সন্ধে অব্দি রোজ?

সহজ তো আকাশ নয়, গাছ নয়, তোমার- আমার
কিছুই সহজ নয়, কীভাবে সহজ চাও হাতে?
তবুও তো সে-ই আসে, সহজেই, নম্র দেবতার
পদধ্বনি শুনি আমি, অনন্তনক্ষত্র ভরা রাতে।

যে আমায় কাছে ডাকে, আমি তার কাছে চলে যাই।
মাথায় কবিতাবিষ, অন্ধকারে স্বভাব হারাই।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (11)
  • comment-avatar
    রবীন+বসু 4 years

    চমৎকার সব সনেট। অভিনন্দন জানাই।🙏

  • comment-avatar
    Shyamashri+Ray+Karmakar 4 years

    অসাধারণ

  • comment-avatar
    উজ্জ্বল+ঘোষ 4 years

    অসামান্য!

  • comment-avatar
    গৌতম+চৌধুরী 4 years

    এই হল কবিতা! স্নানের মতো…

  • comment-avatar
    Abhijit+Ghosh 4 years

    ভালো লাগলো।

  • comment-avatar
    সুপন 4 years

    চমৎকার হিল্লোলিত।

  • comment-avatar
    সমরেন্দ্র বিশ্বাস 4 years

    বেশ ভালো লাগলো।

  • comment-avatar
    স্বর্ণেন্দু ঘোষ 4 years

    খুব ভালো লাগলো 

  • comment-avatar
    স্বপন নাথ 4 years

    মন ভরে গেল।প্রতিটি স্তবক তোমার হাসির সমান।

  • comment-avatar
    Sourav Majumder 3 years

    বাহ্‌ ! বেশ ভাল লাগলো এই পাড়ভাঙা সনেটগুচ্ছ । নিয়ত শুভেচ্ছা জানবেন । মধুকবি দেখছেন নিশ্চয় – সকলেই নয় ভাবী এক কবি মন ভরা, সনেট-হৃদয় ।

  • comment-avatar
    Swapan Nat 2 years

    কী বলে যে ধন্যবাদ দেবো !সত্যিই ” নিয়ত স্বভাব হারাই।”

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes