সোম রায়চৌধুরীর কবিতা

সোম রায়চৌধুরীর কবিতা

অসুখ

হাতের থেকে যে জল ঝরছে,
ছায়াও সরে গেছে তার থেকে

এখন সবাই যে যার মত অসুখ !

বুঝেছে ভুল , চোখ জলে ভরে উঠে
দ্রুত পায়ে নেমে গেলে নিচে
সেও কুড়িয়ে নিয়েছে চোরকাঁটা
সমস্ত অভিমান থেকে ..

সবাই নয় , তাকে কেউ কেউ বোঝে !

এক পা ফেললে চৌকাঠ
পরের পা অন্যের ইচ্ছে
এক শতাব্দী এই ভাবে আটকে
চিত্রার্পিত
এই পড়ন্ত শরীরে কেউ নেই
ছোটবেলায় যারা ছুঁয়ে দিত

প্রান্তিক

মফস্বল যেভাবে কর্ড বেছে নেয়
অভিমানে
যে কোন স্নানে খড়ি দাগ যেমন
খুব কেতাবী নয়

যেভাবে গ্রুপ ফটোয় ,পিকনিকে
আলগোছে ডাকেনি কেউ
শেষ শীতে

অপমান আসলে হাল্কা
ছুঁড়ে দেওয়া সহজ এমনিতে

সমুদ্র

শরীরে সমস্ত ঝাউ দাঁড়িয়ে

এতো রোমাঞ্চ থাকে হাওয়ায় !

সমুদ্র স্নানের আগে , হোটেল এ

সাবান আর তোয়ালের ডিটেল

পর্ণগ্রাফীর থেকেও অশ্লীল মনে হয় !

যেভাবে ঢেউ , প্রবণতা
প্রতিটি উচ্ছাসে শুষে নেয়

সেভাবে প্রশ্রয় পেলে ,শাখা প্রশাখা মেলে
একদিন জোয়ারে দাঁড়াবো ।

যেভাবে শাটার চেনে, সমুদ্র
আমি ঠিক সেভাবে চিনিনা

দেখা

মাটি মাখি জল আলো হাওয়া
কাঠামোর ওটুকুই চাওয়া

ফুটো ঘর বৃষ্টি আসে ছাঁট
কাঁচা রং কেমন বিভ্রাট

অভাবের দুঃখ ও শোকে
চোখ আঁকি আমরা প্রত্যেকে

মাখি জল মাটি হাওয়া আলো
নগ্নতা উদাসীন ভালো

কেউ পটু বা আনাড়ি
গড়েছি ন্যাংটোপুটো নারী

চোখ নাও রঙ মাটি তুলি

শরীর ভেবেছ যতদূর
ততদূর কুমোরটুলি…………

মন

যে সব লেখার কাছে পৌঁছতে পারিনা

সেই সব ছায়াময় নরম অন্ধকারে উবু হয়ে বসি ।

ঝুঁকে হাত ডুবিয়ে দিলে তারকোভস্কির আলো

জোনাকির মত তন্ময় লেগে থাকে ।

যে সব মনের কাছে পৌঁছতে পারিনা

সেই সব প্রত্ন খুব,খননের পাশে গাঢ় হয়ে বসি

ভিখারীর মত ওতপ্রোত ভালোবেসে জানি

মন কৃষির মত ,ফসল তোলা হয়ে গেলে
পুড়িয়ে দিতে হয়…….

বন্যা পরবর্তী

ভেঙে যাওয়া রঙ , বর্ণিল সব রঙের ভেঙে যাওয়া

জলছবি । রাগ ক্রমশ প্যালেট সীমার ওপরে , সারারাত¬¬

ঝরেছে ক্যানভাসে । ছোট ছোট জাহাজ ,বন্দর ছেড়ে

কিছুতেই যাবেনা । কত ভাঙা মন নিরাপদ শেল্টারে

ভিড় করে এল । ফেলে এল নয়ানজুলি , না খোলা গ্রাম

গোপন চিঠির মত । এবারে মাপা সব কিছু রিলিফের ।

জল নেমে গেলে একা একা ফিরে আসা , ঘেঁটে দেখা
রঙ উল্টে খেলা ভাঙার দায় কতটা অন্যের , নিজের …

ভাঙন

নদীর নাম রাতজাগানি গ্রামের নাম খই
পাড় বেঁধেছি চরাচরে মজুরী অল্পই
পাড় ভাঙলে জোর জোয়ারে
সাধ্য কি বা রুখবে তারে
এক গলা গ্রাম অন্ধকারে জলের নিচে থই
নদীর নাম রাতজাগানি গ্রামের নাম খই

পূর্বাপরে কেই বা ভাবে , লাগামছাড়া এই স্বভাবে
শরীর দিয়ে বাঁধবো ! সে সব বানানো গল্পই !
তবুও রোজ যে বিভ্রমে , কাজের বরাত অল্প শ্রমে
পেয়েও যদি হারাই আমার ভূমিকা স্বল্পই !

পাড় ভেঙে যায় রোজ জোয়ারে
সাধ্য নেই তো এ সংসারের
ইচ্ছে গুলো অন্ধকারে জলের নিচে থই
নদীর নাম রাতজাগানি গ্রামের নাম খই


উত্থান

তুমি উঠে গেছ, পলক পড়েনি চোখে
উত্থান এতো মমতাময়ী –তাই
এখনও অন্ধ আনন্দ সমারোহে

আনন্দ, তার বিষণ্ণতায় বাস
দু ধারে ছড়ানো জটিল বিরোধ শ্বাস
সাম্য রেখেছে অলীক সহ্যে, ক্ষোভে

প্রবণ ছিল আয়োজন এর ধূম
পথচলা এক বৈরাগীর ভুল
সে ভুলে কখনও সাধেনি সংশোধন

তুমি উঠে গেছো , পর্দা পড়েনি চোখে
উত্থান এতো তীব্র সংক্রামক
ছড়িয়ে পড়ছে প্রণামে , সহ্যে, শোকে…..

একটি কবিতা

কারা বলে গেছে শিখে নিতে
উজাড় হলেও দেশ ভিটে
সহ্য কিভাবে অমায়িক , খুব
জোরকা ঝটকা অল্পেই চুপ
হেমন্ত না হোক এই শীতে

কত বরাভয় ,বিষয় আশয়
বাজো পোষা গান অমৃত সমান
যা কিছু উলটো হাওয়া ছিল ঢের
সময়ের আগে বশংবদের
সুর ঘুরে গেছে সুর বুঝে

হেরে যাওয়া , ক্ষয় , নানা সঞ্চয়
ঝাঁপির ভেতরে দিনপ্রতি ভয়
পুষেও যারা যে যার মত
দু আধ ফোটা তারার মত
জানাচ্ছে দাবী সংকোচে
সেখান থেকেই যা কিছু ভীত
প্রশ্ন রাখছে নায়কোচিত
সহ্য দেখছে , মুখ বুজে
ঘুরে যাওয়া সুর আবার ঘুরছে
সহজ গানেই বাঁধছে তাদের
প্রতিদিন যারা যুদ্ধে হেরেও
উঠে দাঁড়াচ্ছে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে
যে যার রুমালে মুখ মুছে।

ঘর

যে ঘর ছেড়েছে স্বেচ্ছায়
সে তোমার শাসনে ফেরেনা
আগুনেই রাখো বা জলে
ফের ছেড়ে যাবেই কৌশলে

অবশ্য কাকেই বা বলে ঘর
কতদূর পরিসীমা ভাবো ?

স্বেচ্ছায় যে ভেঙেছে নিজেকে
কিভাবে ভাঙনে সামলাবো !

জ্বর

বসন্ত গাই তবে
খোসা হয়ে উঠে যাচ্ছে প্রেম
নিমপাতা ঘোর

আর, দোল সিঁড়ি দিয়ে উঠে এসে
খোসা পুড়িয়ে , রঙ
লাগিয়ে দিল অস্থানে কুস্থানে !

এসব সময় কি হয় ,বোঝে
যারা দোল খেলতে জানে

আমি দেখছি ছেড়ে যাওয়া জ্বর
ফের জ্বরে পড়ছে আনমনে

রঙ , ঠিক ঠিক লেগেছে যেখানে ……………

শীত

ক্রমশ ঝাউ নেমে এলে
তুমিও শীত কে ডাকলে চই চই
হাতে তুলে নিলে কমলালেবুর মত পৌষ
এক বিকেল বিষণ্ণ ধুনুরি ।

কার্পাস তুলোর প্রতিভা ,জানে
আপনমুগ্ধ রোদ সরে গেলে
তোমার ডাকবাক্সে তর্পণের মত হিম
এক আকাশ অনন্ত সন্ন্যাস ।

ক্রমশ উৎসব ঝরে গেলে
শীত সমারোহে ডাকল চই চই
উদাসীন বুনন ফেলে রেখে ,তোমাকে
তুলে নিল কমলালেবুর মত পৌষ

এক বিকেল বিষণ্ণ ধুনুরি ……..

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (8)
  • comment-avatar
    Lopamudra Roychowdhury 2 years

    মন ভরে গেল। কিছু কিছু পংক্তির পাশে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।

    • comment-avatar
      সোম 2 years

      অনেক ধন্যবাদ । 🙏

  • comment-avatar
    রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায় 2 years

    অভাবনীয়ের চেয়ে আরও দূর আদৌ কি রয়েছে কিছু!
    আছে স্তব্ধ অনুপলে এক দহন সম্পূর্ণ হওয়ার মত তাপ!
    দুঃখ দিলে এই ভেবে, স্বাবলম্বনের মাস্তুলে একদিন গেঁথে যাবে হাওয়া
    সে হাওয়াকে লগ্নি করে যে সাম্পান ভাসিয়েছিলাম
    তারা আজও ফিরল না
    তাদের জন্য ক ফোঁটা মনখারাপ রেখে দেখি প্রবাহের উচ্ছ্বাসে ভেসে যাচ্ছে
    আমাদের জিম্মা রাখা আর্তির শব্দরূপ এবং রূপক…
    _

    আপনাকে আগে কখনো পড়িনি। প্রথম পাঠের মুগ্ধতা রইল সামান্য শব্দে…

    • comment-avatar
      প্রবাল মুখোপাধ্যায় 2 years

      অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম এমন কবিতা যা কিছু অনুরণন রেখে যাবে। আজ পেলাম। শুভেচ্ছা অনিঃশেষ কবিকে। আরও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

      • comment-avatar
        সোম 2 years

        অনেক ধন্যবাদ আপনাকে । 🙏

    • comment-avatar
      সোম 2 years

      ধন্যবাদ । সুন্দর লিখলেন আপনিও ।🙏

  • comment-avatar
    সোম 2 years

    ধন্যবাদ আপনাকে । সুন্দর লিখলেন । 🙏

  • comment-avatar
  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes