সেলিম মণ্ডলের কবিতা
সালেহা
১
একটি ষাঁড়—
লাল ফিতে দেখে শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসছে
এই স্বপ্নটুকু দুঃস্বপ্ন ভেবে
সালেহা কেটে ফেলে তার বিনুনি
২
সালেহার বয়সি একটি স্বপ্ন
সালেহার গলায় জড়িয়ে পেঁচিয়ে যাচ্ছে
রাত, না দিন, কিছুই টের না পেয়ে
স্বপ্নের মধ্যে একটা ভাঙা খেলনা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে
একা
একা
৩
সালেহা বাতাসে ঘুরপাক খেতে খেতে
একটা ঘুড়ির সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নেয়
সে আরও ঘুরপাক খেতে থাকে
ভাঙা ল্যাম্পপোস্ট, শুকনো ডাল অথবা শ্যাওলাময় কার্নিশ
আরও চেনা চেনা লাগে তার
৪
কথার বয়স বাড়ে
গলা পরে বয়সের মালা
এপার-ওপার দিনের সূর্য খেয়ে নেয় রাতের ক্ষুধার্ত চাঁদ
সালেহার শরীরময় সান্নিধ্যভীত ছায়া
পালিয়ে যায়, পালিয়ে যায়… কণ্ঠকানাই!
৫
দেশ নাই, দ্বেষ নাই… তবু…
সালেহার সন্ধানে সন্ধ্যার নাড়িভুঁড়ি বার করে এ-কোন কসাই?
জাহাজের জন্ম ছিঁড়ে উড়ে যায় কানাই
ছায়া পড়ে, ভূত হয়… বারান্দার কাঁটাতারে
স্বাধীনতা অসহায়!
৬
ব্যাধির বারান্দায় বাতাস আসে
বসন্তে ফুটে ওঠে আরও বেশি লাল
সালেহার খোঁপাজুড়ে থাকা অন্তত মেঘ সরিয়ে
বলা হয়নি: বৃষ্টি, কই তোর আতুর হৃদয়?
৭
ওইখানে মাছের মতো পিচ্ছিল
জালে জলে উঠে আসে ফেনা
সালেহার ঘ্রাণ থেকে ঘুমের দূরত্বে বাড়ি ফেরার আর্তি
নদী চিনিয়ে নেবে কি—
আঁশের চমৎকার গয়না কি-বা আঁশের উজ্জ্বল পারাপার!
৮
জেগে উঠছে শিশির! সাদা ট্যাবলেটে
মিথ্যা ঘুম
সালেহার রজনীগন্ধা হাসি
টুকটুকে, টুকটুকি… বার্ধক্যভাতার কাশি!
৯
আঙুলে আঙুল লেগে, বেঁধেছে যুদ্ধ
কে জিততে চায়? কে হারতে চায়?
একটা ফয়সালা হওয়া সাদা রাত বা কালো দিনের অপেক্ষায়
সালেহা মুছে ফেলেছে সিঁদুর
সিঁথিতে বসবাসযোগ্য হাত, মুঠি খুললেই প্রতিশ্রুতি হয়ে যায়!
১০
ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই জেনেই ট্রাফিক তুলে দেওয়া হয়েছে
অ্যাক্সিডেন্ট সংক্রান্ত ভীতি কাটিয়ে জুতোর অন্ধকারে ঢুকিয়েছে মাথা
পথ সম্পর্কিত এই বিশ্বাস, সালেহা কোনো কাঠবিড়ালির স্বপ্নে জেনেছে!
১১
দূর ভেঙে যায়; দূরত্বে কে বাজিয়ে চলে সানাই?
কান গাঢ় হয়… নতুন মুদির মতো
অতি উৎসাহে তাকিয়ে থাকি খরিদ্দারের দিকে
নোটের নাচুনি বিকেলের মুদ্রায় ভাঙিয়ে
সালেহা আসে… বাড়ি বাড়ি হলুদ রোদ পড়ে কপালে
ভাগ্যরেখায় বিবাহসংবাদ সম্পন্ন হয়…
১২
প্রাচীন ঘোড়ার ক্ষুর থেকে পথ ছিনিয়ে
কোন নতুন রাস্তা চিনিয়ে দেব, সালেহা?
বাঁকে বাঁকে পাতার বাঁশি
গাছের কণ্ঠে গেয়ে উঠবে কি ভোরের নিকাহ?
আলো খেয়ে ঢেকুরে বাতাস নেই… হাওয়া, হাওয়া
হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার ভয়… তোমাকে করে তুলেছে
গুচ্ছপাষান!
১৩
দূরত্ব ধান ভানে! ঢেঁকিতে কোন পা তোমার?
মাড়াইয়ের পর যদি বেঁকে যায় নতুন চাঁদ
কোন আলোয় সাজিয়ে দেবে নবান্নের ভাত?
পাত পেড়ে বসে দেখি— সারিবদ্ধ পিঁপড়ের অভিমান
বেলা বেড়ে দাও সালেহা, থালায় না থাক আগামীর ঠকাঠক
১৪
ক্লান্ত রাত, ইঁদুরে খেয়ে ফেলবে সালেহা
আমাদের গোলায় কি উঠবে না নতুন দিনের শস্য?
মাঠঘাটের স্বপ্নে সবাই একা; এক হাতে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে ঢুকে গেছে গর্তে
সন্ধানের রহস্যও তুমি কোথায় রাখবে লুকিয়ে…
১৫
দুপুরের ধ্যান ভেঙে গেলে মৃত্যুর মতো ছায়া দেবে রোদ
এমনই অভিপ্রায়ে গানের ভিতর ডুবে মরি
সব গলায় হার মানায় না
কণ্ঠ কীসের বিষে আজও সাহেলার গায়ে বোনে নতুন জরির কাজ?
শিল্প-ধ্বংস নিয়ে ফেলে আসা দিনের আঁচল
যতটা মেলেছে কেউ, তার অধিক রাত্রি
গর্ভবতী কিশোরীর মতো লুকিয়ে রেখে শোক
১৬
সিনেমায় কিছু লুকোনো হবে না সালেহা
তোমার ক্যামেরার শরীর আদিরসে হতে পারেনি মশগুল
দৃশ্যের ভূত যতবার এসেছে অশরীরী হয়ে
ততবার একজন পরিচালক ছিঁড়ে ফেলেছে তোমার চিত্রনাট্য
১৭
একই দৃশ্যে রিহার্সাল করার আগেই মা হয়ে উঠছ, সালেহা
১৮
যাবতীয় ফিসফাসের অন্ধকার ঠেলে
একটা রাজহাঁস ভোর হয়ে ওঠে
তুমি সেখানেই জেগে উঠবে বলে জলতরঙ্গে ভিজিয়ে নিচ্ছ ডানা
উড্ডয়ন সম্পর্কিত এই রহস্য জানা নেই সালেহা
জেনে রেখো—
বাতাস ভারী হলে কোনো কোনো রাজহাঁস
আরও বেশি সুস্বাদু লাগে
১৯
ব্যাকরণগত ইস্তেহার নেই
সমস্ত বিধিনিষেধ পাশফেলের মতো শৌখিন
এত ভুল, সালেহা—
তোমাকে সিলেবাসের বাইরে রেখেও দেখেছি
জ্ঞানবৃক্ষের ঝুরি বেয়ে নেমে আসা অন্ধাকার
আমাদের অক্ষরকে সন্দিহান করে তুলছে!
২০
মায়া বাড়লে দেখেছি—
সালেহার শরীর থেকে ঝুরি নেমেছে, যেন বিশাল এক অশ্বত্থ গাছ
আমার বুকে
আমি নীচে, তবুও হালকা.. ভীষণ হালকা…
সালেহা,
স্পষ্টত জেগে থাকাই জীবনের বোধিবৃক্ষ
দৃশ্যের আড়ালে কত নড়াচড়া
তোমাকেই ছূঁতে পারে ভালোবাসা
কোন ফসল উৎপাদনই শৌখিন হয় না
এবং মৃত্যুও কোন ইস্তেহার মানে না
সালেহা, টুকরো টুকরো পড়েছিলাম। গোটা সিরিজটা গড়গড় করে পড়া হয়ে গেল। সহজ সরল প্রাণবন্ত একটি গুচ্ছ কবিতা। খুব ভালো লাগলো। খুব
ভালো থেকো ভাই সেলিম, ভালোবাসা।
অনবদ্য কবিতাগুচ্ছ
সালেহা শুনেছে আমরাও শুনছি নতুন কবিতার শব্দ-জরির কাজ। তার ঠকাঠক। খালি থালার আদুর জোছোনা
সালেহা খুব ভালো লাগল সেলিম।