
সুবীর সরকার-এর কবিতা
দীঘিপুরাণ
১.
যদি সাগরদীঘি নাম পালটে হয়ে যায় বনভোজনের
মাঠ
একজন লম্পট সাইকেল চালাচ্ছেন।
ধর্ষক ও খুনীর অট্টহাসিতে কেঁপে উঠছে সাগরদীঘির
জল
২.
তুলাইপাঞ্জি চাল ঠোঁটে ফিরে আসে পাখি।
জলাশয় সাগরদীঘি।
জলখামার সাগরদীঘি।
ভিক্টর প্যালেস থেকে তিনজোড়া ভূত নেমে আসে
সাগরদীঘির গহিনে
৩.
ফেলে আসা ঘরবাড়ির গল্প সাগরদীঘির কাছে রেখে
আসি
তারপর সাগরদীঘিতে বেড়াতে আসে
তোর্সাচরের জোনাকি
আর জোতদার খুঁজে পান হারিয়ে যাওয়া
ঘোড়াটিকে
৪.
সাগরদীঘির কিনারে কিনারে কত কত কাহিনি
জলে নেমে যায় রাজবাড়ীর হাঁস।
মহারানী ইন্দিরা দেবী হাওয়া খেতে আসেন
হেমেন দাদু শোনাতে থাকেন কামতা রাজ্যের কথা
ভুলগুলি ধরিয়ে দেয় শেষাবধি সাগরদীঘিই।
৫.
আমার প্রথম কবিতার বইয়ের কবিতাগুলি প্রথম
শুনেছিল সাগরদীঘি।আমার ভেঙে যাওয়া প্রেমের
বিচ্ছেদী গান এই দীঘির পড়েই লেখা।এখানেই
ফেলেছিলাম প্রথম সিগারেটের ছাই।সাগরদীঘির
দক্ষিণ কোণে প্রথম দেখেছিলাম রাজা বিরাজেন্দ্র নারায়ণকে।
নিকট আত্মীয় মনে হয় যাকে সে আসলে সাগরদীঘি
৬.
লোককথা মিথ জড়িয়ে সাগরদিঘী ঘুমায়
তার শিয়রে বসে বাঁশিতে কান্নার সুর তোলে
আজহার গিদাল
আঈ কামতেশ্বরী মন্দির থেকে।
রাজপাট ঢিবি থেকে।
পিঞ্জিরার ঝাড় থেকে।
শত শত ঘোড়া ছুটে আসতে থাকে সাগরদীঘির
দিকে
৭.
রাণী নিরুপমা দেবী হয়তো এখানে বসে পরিচারিকা
পত্রিকার প্রুফ দেখতেন।সাগরদীঘির স্বচ্ছ জলরাশিকে তিনি হয়তো দর্পণ ভাবতেন।
কখনো এখানেই তার সাথে দেখা করতে আসতেন
সাবিত্রী দেবী
সাগরদিঘী ছুঁয়ে রাজশহরে উড়ে বেড়াতো ব্রহ্ম মন্ত্রের
সুর
৮.
সাগরদিঘী প্রকৃতই এক মহাজাগতিক কনফারেন্স
আমরা দেখতে পাই বাচ্চাদের সাঁতার
শেখাচ্ছেন আরাফাত আলি
বাইচ খেলার গান হচ্ছে।
দোতোরা বাজাচ্ছেন হাতি জোতদার।
মহারাজার ফুটবল টিম ওয়ার্ম আপ সারছেন।
সাগরদিঘী মানে পুরোন গল্পের খনি।
গল্পের সরণি জুড়ে হাঁটছেন অমিয়ভূষণ।
৯.
একবার এক ঘাতক ট্রাকের খালাসী ঝাঁপ দিয়েছিল
সাগরদীঘির জলে
এম্বুলেন্সের লাল আলোয় পাখির মতন জড় হচ্ছিল
শহরের কবিরা।
বিবাহের নাচ নিয়ে
কারা বুঝি ভাসিয়ে দিয়েছিল কলসিভর্তি জল।
আর নৌকাবিহার শেষ হলে একটানা চোখের
চোখের জল
ভালো লাগলো, সুবীর