
রাণা রায়চৌধুরী-র কবিতা
আধ্যাত্মিক নৌকা
১
সাবানের গন্ধে পালতোলা এই যৌথজীবনে আধ্যাত্মিক নৌকা ভেসে আসে। প্রণাম আমার অচীন অশ্রুপাত। একা একটা হাওয়া এসে গায়ে লাগল। অনেকদিন বাদে আমাদের বন্দরে বসন্তকাল এসেছে, সঙ্গে বেবী ও সেজোকাকা। আমি বসন্তের আগমনে উথালপাথাল হয়ে যাই, আমার অঙ্গ ওড়ে বাতাসে। ঐ বিকেলনৌকোয় প্রভু ভেসে যাচ্ছেন। আমিও এপাড় থেকে ওপাড়ে যাবো ভাবছি, দুয়ারে প্রস্তুত দেরাদুন এক্সপ্রেস ও তাহার ডাগর বান্ধবীটি…
যেতে হবে বলে আমি উঠে দাঁড়াই। অনেকদিন বাদে উঠে দাঁড়ালাম। এবং আধ্যাত্মিক নৌকোয় সাবানের গন্ধ পেলাম। সাবান। সর্বত্রগামী। প্রদীপশিখার মতো জ্বলে জীবনব্যাপী।
২/
এই ঘরে কি যেন ফেলে গেলাম মনে পড়ছে না… এই ঘরে ছোটবেলা একটা পুকুর ছিল, আমি মাছেদের সঙ্গে খেলতাম, একটা ধানখেত। এই ঘরের দেরাজে তা রইল। আরো কিছু এই ঘরে ফেলে গেলাম সবটা মনে পড়ছে না। আবছা ঢেউ ও সরস্বতীর বীণা ও হাঁস পড়ার ঘরে আছে কোথাও, সৌরজগত খাটের নিচে। চোখের মণি, রেটিনা মায়ের ছবির পিছনে, টিকটিকির লেজে জড়ানো রইল। নিরাকার এই ছায়াপথের ওপাড়ে সাকার বইখাতা। তাতে বিরানব্বই পৃষ্ঠায় লিপির চিঠি, ভালোবাসাময় আড়ালশিখা এখনো জ্বলছে আমার ভিতরে।
৩/
নিজেকে অগ্নি ভাবা ভুল, নিজেকে গান ভাবা ভুল।
তুমি বলো, তোমরা বলো, আমি শুনি বরং।
আমার অনেক শোনা বাকি।
তোমাদের অনেক কথা উপদেশ পরামর্শ রাইফেলের নল দিয়ে বিসমিল্লার সানাই হয়ে বাজে।
কথার ভিতরের ধ্যানে পথের ইশারা।
এই গাছ এই শ্যাওলা আসলে প্রাচীন পোস্টকার্ড,
প্রাচীন রাষ্ট্রদ্রোহ।
তোমরা বলো, আমি বরং শুনি।
কোথাও দেওয়াল ভাঙার শব্দ হচ্ছে
কোথাও কথা ভাঙার শব্দ হচ্ছে
শোক ভেঙে ছুটন্ত পাখি গুলি হয়ে বেঁধে আমার
আসনে, আমার প্রিয়জনে