মৌমন মিত্র-র কবিতা

যা যা ঘটেছে
১
পুরনো কথার পিঠে বৃষ্টির জলরং
অতীতের দেওয়ালে ঝোড়ো হাওয়া
শোনো,বলছি,এ-কথাগুলি তারই নামাঙ্কিত দেহ
এরা বাধা মানে না,পরে পস্তায়
চৌকাঠ ঠুকে ঠুকে উঁচু পাহাড় তৈরি করি
চেষ্টা,ভুল,কলার আই-ডি দেখে,
রেললাইনের দু’ধার
ভেজা ঠোঁট আড়াল করতে শিখে যায়
রাত নামে
চাঁদের নেশা মাখা হাফ-মুন,অস্পষ্ট সিম্ফনি
কবে কোন রচনায় আবছা হতে-হতে
দূরে কাছে
ওপারে শহর জেগে ওঠে,কফি শুঁকে ছুঁই,
আগে যা যা ঘটেছে—-
২
বার বার ভুলের সাধক হই, বুঝি
এ হবার নয়..কোনওদিন হওয়ার ছিল না
হলে,মা হারা মা মা যে গন্ধসুতো
সূঁচে ভরে সেলাই করতাম
ছেঁড়া ছেঁড়া আকাশবাণীর স্বর
না-পড়া টেক্সট-বাক্য,ওহে ধুলোমন
আমার জন্য কে? কবেই-বা ছিল কেউ
অথচ ক্যালেন্ডারের শেষ তারিখ হয়ে
কীভাবে যেন আমিই অভ্যেস হয়ে গেলাম
হয়ে উঠলাম আদমের মায়াবতী!
৩
টলে বুক টলতে টলতে খুব সহজ
মা বলত,আমি চলে গেলে লিখবি কী?
পোড়া দাগ,শূন্য সংখ্যা,অলেখা অক্ষর?
না মা, আমি লিখি ছেঁড়া কাঁথার ক্যানভাস
তুমি সব পড়ো
পড়ো,
হু হু শব্দগুলি আমার
মৃত ডেডলাইন,রেনকোট সিনেমার দুঃখদৃশ্য
দেখতেই পেলে,
এখনও লম্বা প্যারাগ্রাফ-কথা লিখলে
বানানে শূন্য পাই..
৪
এই যে আলাদা আলাদা ঘর
যুদ্ধ,জঞ্জাল,ছন্নছাড়া মেঘ
স্মার্ট স্ক্রিন ভাঙা দরজাগুলি
মুছে ফেলি
লিখি অচেনা উপত্যকা,অন্য বাড়ি
পুনরায়
নতুন ঠিকানার খামে ভুল-বুঝে ছয়দিন
কে যেন কার প্রোফাইলের দূরত্বে গিয়ে
অক্টোপাস থাবার হদিস পায়,শূন্যে ওঠে—
এইসব শূন্য দিকের কথা,
দু’পাশে মাইলের পর মাইল মিথ্যের ঘাস
পালাব কোথায়?
আমার যত পালানো…ফ্লাইওভারে চাপা থাক
চোখ বুজে আসে
মন বলে, সমঝোতা উড়ে যাক
ভেবে নাও,এও নতুন কোনও তর্কের সমাস
৫
জলরং বুঝলে তবে?
হাওয়ায় দুশো মাইল উড়ে এসে
কথামতো সব লেখা পড়িয়ে যাবে বলেছ
যদি তা পারো
একটা ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের টুকরোয়
আঙুল ডুবিয়ে উড়ো ছক
একে একে সমস্ত মেঘের ফেনা মুছে ফ্যালো
তখন হাঁ করে দেখবে
ট্যাক্সির হলুদ দাগে দু’দুটি দূর-শহর
উড়ন্ত রাঙা পাখিদের, মসৃণ লিপলক
৬
ফোঁটা ফোঁটা স্রোতের ভেতর
কেবলই দস্যিপনা
অনেক আকাশ দূর,মেঘলা মৈথুন—
এই নাও,একটানা লেখা তার
ছাপা হয়নি যেসব গুচ্ছকালি,ক্ষোভ ক্ষোভ,
কীভাবে জানি? বৃক্ষে খবর পাই
কিছুটা ডালপালা,অনেকটা,অনেকটাই
পুড়ে ফেলা পুরনো ই-মেইল রেখা
বাকিটুকু যার
৭
এভাবেই অবশেষ
এভাবেই কাচঘর ঘোলাটে মেঘবালিশ
আর এভাবেই ঠোঁটের আকার–
ভেজা ডোভার লেন,
দুধ চা,রোল-রুটি,তাঁতির ধূসর ব্লকপ্রিন্ট
সব আছে,সবেতেই আছি,আছি না?
এবার তুমি শেষ লেখাটায় ফিরে যাও
দ্যাখো,থেমে থেমে,আজও
কথামতো ভেজা সিটের চামড়ায় আঁকছি,
আয়ুহীন—-
পোস্টাল কোড
অনন্ত ট্র্যাফিক আলো
আমার মা আমি-তুমি আমার নগর!
আর,মাঝে যা যা ঘটে গেল—