বিদ্যাবাঁকের উপকথা  <br /> অর্ণব সামন্ত

বিদ্যাবাঁকের উপকথা
অর্ণব সামন্ত

(১)

এখনও হেমন্তের কুয়াশা ঘিরে রাখে তোকে
বিদ্যাধরী জলতল ছুঁয়ে জাগে সূর্য , চাঁদ
তোর কথকতা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ে তোর কোলে
সহসা উত্তরের হাওয়ায় আঁচল খসে গেলে
আকাশের তারারা এসে আশ্রয় নেয় সেখানে
তুই কালপুরুষকে খেতে দিস কাঁসার বাসনে
ভাতের সঙ্গে ডাল , অন্যান্য ব্যঞ্জন দিয়ে অনন্য ব্যঞ্জনায়
বেহুলা লখিন্দর মান্দাসে ভেসে ভেসে তোকে
ছুঁয়ে চলে যায় নেতা ধোপানী ঘাটের দিকে
ভাটিয়ালী সুরের ঢেউয়ে মগ্নমুগ্ধ থেকে থেকে
জীবন যাপন পাঁচালী ছোটে তরজা , গাজনের দিকে
জ্যোৎস্নাভেজা রাতে দিনের আলো আনে কবিগানের লড়াই
মঙ্গলকাব্যও তার পিছু পিছু আসে মায়া জড়িয়ে
জলতল তো অনেকেই ছোঁয় , গহীনের স্রোতে ভাসার অনুমতি সবাই পায় না। যা টেনে নেয় গভীর
গভীর সাগরে। বিদ্যাধরীর গহীন অবচেতনের স্রোতে।

**********************************************

(২)

জলে পানসি ছোটে তীরবেগে। কিনার উপচে
জল ছোঁয় ত্বক , আঙুল , অন্তঃকরণ। আশ্লেষের
কিরণে পুড়ে টালমাটাল জীবন হাঁটে ভুখা পেটে
তামাকের গন্ধমাখা ধানক্ষেত। স্বপ্নকে ঘরে তুলতে
বদ্ধপরিকর। অপাপবিদ্ধ সংকীর্তনে ভেসে যায়
ঘরের ভেতর ও বাইর । মাতলা হোগলা সঙ্গী করে
করতাল বাজায় বিদ্যাধরীর আসরে। দক্ষিণ রায়
বসে থাকে পরপারে।বনবিবির পায়েস রাঁধে
মুস্কিল আসান করা ফকির। হেঁতাল প্রতিরক্ষা নিয়ে মৌচাক মধু ভাঙতে যায় মধুলোভী মৌলিরা। পাশের খাঁড়িতে খলবলিয়ে ওঠে ঝাঁক ঝাঁক মাছ। দীঘার সৈকতে মাঝিদের হাতে শেষমুহূর্তে সাফল্য প্রাপ্তির মতন। যেন ঝাঁক ঝাঁক ফোটন কণা সমৃদ্ধ রোদ্দুর। কিংবা গলে পড়া মেধাবী জ্যোৎস্নাকণায় নির্লিপ্ত জ্যোৎস্নার মতন। শবের মতন পড়ে ডুবযোজনে অভ্যস্ত কুমীর। চতুর্দিকে মানুষের অসংখ্য কুম্ভীরাশ্রু দেখে দেখে নিজেই কৃত্রিম অশ্রুমোচন ভুলে গেছে।হাওয়া খ্যালে বিদ্যাধরীর সঙ্গে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতন। মনের আরশিতে চাঁদকে বন্দী করে
চাঁদকে ঢলতে দেয় চাঁদের গায়ে , মনে , অন্তরাত্মায়।

**********************************************

(৩)

নৌকায় চলকে পড়ে জীবনের জল। সেই জল জলের গভীরে , আরও গভীরে যেতে চায়। তার অনন্ত ক্ষুধা অসীম আকর্ষণ লোকায়ত সুর ঘিরে রাখে। রবীন্দ্রনাথ যাপন করেন একটি রাত্রিবাস হ্যামিল্টন বাংলোয়। কেঁদো বাঘ এক কাঁদতে থাকে অর্ধাহারে অনাহারে। হাজার হাজার মন্বন্তর ধেয়ে আসে। তবুও মানুষ বাঁচে ভয়ঙ্করকে বাইরে রেখে , আগল দিয়ে নয়
বরঞ্চ মুখোমুখি লড়াই করে দিনরাত্রি দিনরাত্রি ধরে
বাঁধ দিয়ে প্রতিরোধ প্রতিবাদ করে অবাধ্য বন্যার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। জলে জঙ্গলে লেখা হয় মনসামঙ্গল , গাজন , যাত্রাকথা , গরাণ গেঁওয়া হেতালের পদাবলী।মচকাবে তবু ভাঙবে না জেদী মেরুদন্ড – শরণাগতকে বাঁচায় ভাসিয়ে রাখে জীবনের স্রোতে বিদ্যাধরী।

*********************************************

‌ (৪)

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি। ভাসানে ভাসে ধীবর দল
ঘর রাখে বিধবাপাড়ায়। সমুদ্রে গ্যাছে অনেকেই
বাঁচার মতন বাঁচতে। ফেরেনি অনেকেই। বাঁচার জন্য মৃত্যুবরণ বিদ্যাধরীর স্রোত ছুঁয়ে। দক্ষিণ রায়ের দাক্ষিণ্যে । কান পাতলে জোয়ার ভাটিতে আজও শোনা যায় চুপকথার রূপকথাদের। অশৌচ আচাটায় রিচ্যুয়ালে দিনরাত্রি সপ্তাহ পক্ষকাল কাটায় এয়োস্ত্রীরা। নাহলে অমঙ্গল এসে ধুয়ে দেয় মঙ্গল।
সলিলসমাধিতে তারা ভেসে যাবে সাত সমুদ্র পারে
তাহাদের কথা ইতিহাস হয়ে গাথা হয়ে ভেসে যাবে
কিংবদন্তীর দিকে অনায়াসে , সহজ স্রোতে ।
বারদরিয়ায় ভাসতে ভাসতে ভাসতে বাউলমনের
একতারার তার ছিঁড়ে যায়। তবু তারা ফেরে
ফিরতে চেষ্টা করে প্রিয় মুখ মনে করে
ঝাপসা কুয়াশার আস্তরণ ছিঁড়ে ছিঁড়ে
ছলাৎছল শব্দে তাদের জীবন ভেসে যাচ্ছে
যাপন ভেসে আসে খুচরো খুচরো পয়সার মতন
এক সাগর থেকে অন্য সাগরের দিকে
জঙ্গল থেকে গেরস্থালির মনোরম উদ্যানে
জলে জঙ্গলে ভাসানে ভাসানে তৈরী হয় অবগাহন।

**********************************************

(৫)

শিবশঙ্করের আর্জান সর্দার ঐ চলেছে ডিঙি নৌকায়
জলে জঙ্গলের মধুরিমা মেখে। তার মতো অনেকেই চলেছে বিদ্যাধরী ছুঁয়ে। রয়েল বেঙ্গলের দেখা আর না দেখা দু’টোই কখনো সৌভাগ্য কখনো দুর্ভাগ্যের প্রতীক।
তার দৃষ্টি যার উপর সে গেল । মর্মভেদী থেকে শরীরভেদী আর্তনাদে সে হারাবে নিজেকে । হলুদ গা’য়ে কালো ডোরা তীব্র নখরে ছাড়াবে মাংস মেদ। কঙ্কাল পড়ে থাকবে হাজার হাজার বছরের অতীত পরিণাম বলে দিতে ।
হাঙর কামট এসে কেটে দেবে কুটুস করে হাত পা
মীন ধরতে যাওয়া মৎস্যকন্যাদের। যারা হাতের বালা, কাঁকন , পায়ের নূপুর গড়াবার জন্য জলকে নেমেছে।
তফাতে রেখেছে ভয়। বাঘিনীর মতন লড়ে গেছে
সন্তানের জন্ম দিতে ভরণপোষণ করতে — নোনাজল গন্ধে ভেসে গেছে তার ঘরসংসার — লাবণ্যসুধায়
ডুবে ডুবে ফিরেছে কি কিছু রূপ কিছু লাবণ্য
আবহমানের জীবনে , যাপনে । নাকি ভয়ভাঙা আক্রোশে জীবন জলের অপর নাম , যাপন জয়ের অপর নাম বলে লড়ে গ্যাছে প্রতিকূল ঢেউয়ের বিপরীতে। কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করার মানসিকতায়। বিদ্যাধরী দিয়েছে তাদের উজান , ভাটি। বাঁচার মতন বাঁচায় বাড়িয়েছে জলজ হাত , জলজ আশীর্বাদ ‌। বাঁধ ভাঙার লগ্নে জলজ অভিশাপ এড়িয়ে।‌ ভাঙনে ভাঙনে শিখিয়েছে অদ্ভুত নির্মাণ।

**********************************************

(৬)

জানি না কখন বিদ্যাধরী ঢুকে গেছে বন্যায়
জলের মতন চেতনে , অবচেতনে। ম্যাজিক সুর রিয়ালিজম থেকে চরম বাস্তবে। সেই জল ঘূর্ণি
টেনে নিয়ে গেছে শ্বাপদসংকুল অরণ্যে
সেই ঘূর্ণিস্রোত জটিল কুটিল জীবন সমুদ্রের হাজার ভয়ঙ্কর পাশে , সলিল সমাধির দিকে। তবু সে কুলুকুলু শিখিয়েছে জীবনের কলতান। জুলুজুলু চোখের দিকে চোখ রেখে প্রেমের কাব্য। অনেক অনেক স্রোতে চাপান উতরান শেষে মাতলা অবশেষে বিদ্যাধরীর হৃদয়ের ফল্গুস্রোত ছুঁয়ে ভেসে যায়
সহজ সরল ঢেউয়ের ছন্দের সমুদ্রে
চাঁদ সদাগরের সপ্তডিঙা ডুবে গেলে আবার সে
জাগে বাঁচার স্বপ্নে। ময়ূরপঙ্খী সাজায়
ভেসে যেতে জীবন অধিক জীবনে , বাঁচার মতন
বাঁচতে চেয়ে বাঁচার চেয়েও বেশি কাব্যে , গদ্যের
সুষমায়। জলে জঙ্গলে ভেসে সে সলিলসমাধিকে
অগ্রাহ্য করে। এপিটাফ লিখে রাখে জলের অক্ষরে ।
অনন্ত দ্রাঘিমা ধরে বয়ে যাবে সেই জলস্রোত
টেনে নেবে আবহমানের গভীরে গহীনে
বেহুলার নৃত্যশিল্পে বেঁচে উঠবে লখিন্দরের জীবন।
লোকায়ত মিশে যাবে বিশ্বজীবনের স্রোতে …
বিদ্যাধরী শোনাবে আরেক বিদ্যাধরীর নিগূঢ় কথা , কথকতা , কাহিনি।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes