দেবযানী-র দশটি কবিতা

দেবযানী-র দশটি কবিতা

দশটি কবিতা


ধ্যান
স্থবিরতা কে স্থিরতা বলে ভুল করছি ক্রমশ
রাতে ঘুম জড়তায় আচ্ছন্ন হয়ে আসছে
গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখেছি তুমি নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছো
হাতে ফুল
তখন সূর্য উঠছে তুমি ধ্যানে বসবে আর বৃষ্টি এল তখন
যদি কখনো তোমার মনে হয় তুমি কেন অস্থির হয়ে আছো, জেনো তোমার সমুদ্র তীরের বাড়িটা আসলে বহু দূর চলে গেছে সমুদ্র থেকে আর গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে বন্ধ দেয়ালের মাঝে
অস্থির হয়ও না
মানুষ ভালো অবস্থায় নেই
কয়েকজন খুনি – উন্মাদের হাতে চলে গেছে পৃথিবীটা
তাও যদি মনে হয় অস্থিরতার কারণ বুঝতে পারছো না, তবে জেনো,
মানুষ আসলে গাছের বয়স জানে না
মানুষ জানে না গাছেরা অমর কিনা
তবে তারা পৃথিবী কে ভালোবাসে … তাই , নিজের মৃত্যু মেনে নিলেও
পৃথিবীর মৃত্যু মেনে নিতে পারে না
তবুও তার সমস্ত অস্থিরতার কারণ আসলে তার হারিয়ে ফেলা মুহূর্ত,
যা এ মহাশূন্যে খসে গেলো, তার চেতনারই অজান্তে
ধ্যানে বসো
বিরাট পৃথিবীর অবিনশ্বর ভাসমান মুহূর্তের সঙ্গে মিলিত হও


-স্মৃতি বিস্মৃতির খেলায় —
আলো এসে পড়েছে খোলা জানালা জোড়া ঘরে –
মৃদু আভাস পড়ে, সকালের অমোঘ হাওয়ায়,
এ বাড়ি পুরোনো বড়ো, দেওয়াল জোড়া স্মৃতি, হলুদ আলোর ছবি
নুয়ে পড়ে –
এমনই ঘরে ফিরে এসে
আজ অস্থির লাগে,
বহুবার এসেছি
এ ঘরে কামরায়, এই আলো ভিড়ে
অস্থির লাগে তবু
কত মানুষের আনাগোনা
ভীড়
তখন মুখোমুখি, একাকী
অজস্র জোড়া চোখ দেখছে তোমায় ?
না বোধ হয়
কল্পনায় কোণঠাসা করেছো নিজেকে
অস্থির বাগান জোড়া, নিজের ঘরেই থাকো আনাচে-কানাচে
বন্ধ দরজার খিলে শুধু,
দূরত্ব বেড়েছে।
যে মানুষ বন্ধু নয়, সে ঠিক কেমন ?
মাথার ভাঁজে তার দিন রাত আনাগোনা করে কি , আমারই মতন ?
আমারই মতো দ্বৈত-অদ্বৈতের খেলায় মেতে আছে
ফেঁসে গেছে মহাব্রহ্মাণ্ড মায়ায় ! না বুঝেই !
অপর না এক ?
এ ভাবনা ফাঁকা করে মাথা
মনোযোগহীন খেউড় খেলায় মেতে দিন রাত্রি কাবার !
উন্মত্ত ভিড়ে ঘোরে
শীত নেমে আসে
এভাবে বছর যায়
রোদ পড়ে জানালার ধারে
কোথাও কিছু রয়ে গেলো অনুভূত হয়
যার থেকে বহু দূরে আজ
স্তব্ধ গলির কোন ঘরে ঢুকে পড়ে
যেতে চায় ঘুমের থেকে দূরে
মেতে যায় মাঝরাতের খেলায়।


অর্ধমৃত

এই দুর্দিনে বিশ্বাসগুলো খসে পড়ছে I
কে কোন মুখোশটা পরে বোঝা গেলেই
অস্থিরতায় বুজে ফেলি চোখ I
গল্পগুলো খুব ছোট I
এসকল অন্তরাত্মা জ্বলে গেছে বহু আগে ,
তবে কি আসলে এরা মরে গেছে ?
অন্ধ সুড়ঙ্গ দিয়ে হাঁটতে গিয়ে দেখি
অজস্র অর্ধমৃত লোক পড়ে আছে I
কেউ কেউ দাঁড়িয়ে সেই অন্ধকার গুহায় দালালি করছে I
তারা এই অন্ধ কূপে বসে থাকতে থাকতে ভুলে গেছে,
কবে গেরুয়া কে রক্তের রঙে ছাপিয়ে
বাজারে কারবার নিয়েছে I
সময় পেরোয় I
হেঁটে যেতে যেতে দেখি সুড়ঙ্গ শেষ হয়ে আলো পড়ছে শরীরে I
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে I
আর অদ্ভুত এক কোলাহল ভেসে আসছে সুড়ঙ্গ পথ বেয়ে …
অজস্র মৃত্যু ঘটছে শুনতে পাই I
তবে পথ আরো দীর্ঘ I
জল জঙ্গলের ধারে বয় হাওয়া … পথ আরো দীর্ঘ I

৪.
আজ বলো কোন দিকে যাবে?
অন্ধকারের কথা মনে পড়ে আজও ।
যে অন্ধকার ছুরির ফলার মত ঢুকে গেছে শরীরে আমার ।
বেলা যায় আল শেষে রোদ্দুর পড়ে আসে তবু
দীঘি জল, সান্ধ্য আলো গায়ে লেগে মায়াময় হয় ।
ময়ূর পঙ্খীর পেখমে চড়ে ছোটবেলায় ঘুরেছি জঙ্গলে ।
আর আজ বৃষ্টি দিনে যাই।
সব থাকে, আঁধার-আলো রূপকথা আনাচ কানাচ জোড়া ঘর ময়
দুপুরের খেলা ছড়ানো সেখানে ।
তুমি যাবে কি না প্রশ্ন কোরো শুধু !
তোমার মায়া ঘুমের রাত,
আমার স্বপনে এসে
ছড়িয়ে পড়েছে আবার ।
জীবনের পর মৃত্যু আসে কাছে ,
নানা রঙের ঘর জোড়া মৃতদের আলো ।
সব শেষে যাওয়ার কথাই থাকে বাঁধা।
তবু লোভ, তবু বিষাক্ত রাতে মেতে ওঠে পথ,
যাবে কি না প্রশ্ন করো শুধু!
পথ আছে । চিরকাল ছিল।
বৃষ্টি শেষে সূর্য উঠেছে আজ ছাদে।
মায়া রোদ, আধো ঘুম ,
সব নিয়ে সূর্য পিঠে নেবো বলে বেরিয়ে পড়েছি।
কাল আবার বৃষ্টি দিন ভরে দেবে দুয়ারের চাল,
তবু আজকের কথা বলো
আঁধার দেশে রোদ ওঠে ছাদে, দেখে আসি,
ঘুম শেষে টিনের চালার পরে রোদ,
মায়া রাত নামবে আজও জানি ছাদে,
রাতের আঁধার জোড়া ঘুমে।

৫.

‘মেয়েদের গান’
এ খেলা হলো নষ্ট করে দেওয়ার খেলা, ভয় দেখানোর খেলা, তুমি কি তবে সত্যি আজ সন্ধ্যে বেলা অস্থির হয়ে শুধু দরজা বন্ধ করে আলো নেভাবে? বার বার রাতে উঠে জল খাবে আর ভাববে, কত দূর গেলে ঠিক জঙ্গল পেরোনো যাবে? আসলে তোমার মুখ বন্ধ করে গলার নালি কেটে ফেলতে পারে ওরা, কিন্তু ওইটুকুই, বিশ্বাস করো সেটা এ বিরাট মহলের নিরিখে কিছুই না, রাজিয়ার, রাজিয়া সুলতানার নাড়িও কেটে ছিল ওরা একদিন, তবে? খোলা মাঠে তুমি চাঁদ দেখবেনা বলছো? আজ মরলে কাল দুদিন হবে, চলো চাঁদ দেখে আসি, ওদেশের মাঠ ঘাট জঙ্গলে গিয়ে, দেখে আসি কেমন করে চাষী এসে ফসল ফলায়, কেমন করে জলে ভেজায় মাঠ।
এরা কারা, কারা ভয় দেখাতে বসেছে? বিচার তো হবেই, বিচারের পর আরো অনেক বিচার হবে, অনেক বিচার বাকি থেকে যাবে, কিন্তু তার আগে রাতের বেলার ছায়াপথ দেখে ফিরে আসি, ওদের ঘরের মেয়েদের কাছে জল চাই, রুটি চাই। আমাদের দেশের দুটো গান ওদের শুনিয়ে আসি ।

৬.
তোমার মাঝে যে বসে আছে সে আসলে শান্ত। তার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা শান্তি আর প্রেমের দিকে যায়। এ এক দীর্ঘ পথ যাত্রা , যে তোমাকে অস্থির করে সে তোমার প্রেমিক না, তোমার অন্তরঙ্গ ছন্দ যে নষ্ট করে সে তোমার প্রেমিক না। দীর্ঘ মায়ার শেষে পৃথিবী মৃত্যুর দিকে যায়। অবুঝ জীবনের মোহ নিয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি যাবো না আমি। সকালের উজ্জ্বল রোদ যে প্রশান্তি দেয় সেই প্রশান্তির আকাঙ্ক্ষা আমার। আর আকাঙ্ক্ষা ভোরের রোদ বা বসন্তের রোদর ।

৭.
টান
আমার সম্মোহন তোমাকে টানে।
অন্ধকারে , আলোয়, ভাঙা নদীর পারে। ঘাসের জঙ্গলে।
চাঁদনী রাত ছিল সেদিন। দুয়ারে বসে আছি। বাগান জেগে আছে। আমার বাগানে কাশ বন ফুটে আছে সে সব দিনে।
হাওয়া বয়, জেগে ওঠে হিয়া।
এ সব কি পার্থিব কোনো রেশ ?
রেশমী বাগান জোড়া কাশফুল যার দুয়ারে থাকে সে কি আধো তন্দ্রায় জেগে ওঠে বার বার ?
সুন্দরের মাঝে তীব্র যন্ত্রণা আছে। ধরে রাখতে কষ্ট হয়।
তাই তো নদী বক্ষে শুধু চাঁদের কথা মনে পড়ে , মনে পড়ে নির্ঘুম রাত দুই ব্যথাতুর হৃদয়ের চুম্বনের সুড়ঙ্গ খোঁজার কাহিনী।
ভয়াবহ ভাবে রাত জেগে উঠেছিল সেদিন, যে দিনে চাঁদ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিল এক জন। নিজের কৃত কর্ম, সমস্ত পাপ সে চাঁদের রাতে বিসর্জন দেবে ভেবেছিল ? না সমর্পণ করেছিল নিজেকে।
সেই সুড়ঙ্গের কথা বলছিলাম , চুম্বনের সুড়ঙ্গ।
নিস্তব্ধ রাত। কেউ কোনো ভাষা পায়নি সেদিন।
কেউ কোথাও যেতে চায় নি। মনে ভেবেছিল এই বন জোৎস্না যদি অনন্ত হয় ? রাত্রি আকাশের বুকে চাঁদ, অনন্ত কাল ধরে রয়ে গেলো। না ফুরোয়।
মানুষ ধ্বংস হলো তখন ও।

৮.

ঘুমহীন
যদিও মেলা ঘুম যদিও ঘন রাত
তবুও জাগে মায়া গাছের নীরবে ।
না জানা বেদনা জেগেছে হৃদে এসে
তাই তো খুঁজে ফিরি রাতের ভাষকার ।
এ কোন কথাধার, টুকরো ঘরে নয়,
জেগেছে রাত জুড়ে, ছায়ার পিঠে ওই।
নীরবে জাগে কি সে চেতন ভাষকার?
শব্দ হীনতায় শরীর ছুঁয়ে যায়।
প্রেমের ভাষা শুধু চোখের আলে জাগে,
ভাষা না আনে কোনো, কথা কি আছে আর!
রাত্রি ধারা ছোঁয় হৃদয় মাটিতে,
আকাশ ছায়া পথে এ দুটি হৃদয়ের।
নদীর পাড়ে বন, বনের পাড়ে নদী,
দৃশ্য জুড়ে আঁখি ভাষান্তরি হয়।


প্রজাপতির গায়ের রঙ
অন্ধকার কুলুঙ্গি তে আটকে পড়া আষাঢ় আর আটকে থাকা গার্হস্থ্য এর ফাঁকে
নিঝুম রোদ এসে পড়ে পাতার ফাঁক দিয়ে।
কাপড় কাচা শেষ হয়।
মাঠদুপুর তখন আগুন
কারা সব দাঁড়িয়ে গাছের তলায়
এক দীর্ঘ পথের মাঝে এই সব স্মৃতি
ভেসে ওঠা গানের কাছাকাছি
মনে পড়ে আজ সকালের প্রার্থনায়
বাইরের দুয়ারে যে বৌটি রোজ শরীরের জন্য মানত করে তার জন্য প্রার্থনা করে ছিল
আজ যাওয়ার বেলায় তার কথা মনে আসে
যাত্রা পথে জেগে থাকে মাটির উচ্ছ্বাসের রঙ
জ্বলে যায় আকাশের আসমানী রঙের আগুন
বিকেলের প্রজাপতির গায়ে সোনার রঙ
দুপুরের রোদে অস্থির ছিল সে
এখন বিকেলের আলোয়
আমার নজরে পড়ে বিকেলের আলো, সোনালী থেকে অন্ধকারের দিকে যাওয়া সেই আলো
নিয়মে চলে ব্রহ্মাণ্ড -এর প্রতিটি পাতা
ঝরে পড়ে পাতা বা ফুল বা গাছ
আর অস্থির পৃথিবীর যুদ্ধে আর অহং এর খেলার শেষেও
ঝরে পড়লো বিকেল বেলার কোনো ফুল
বা ঝলসে গেলো কোথাও আগুনে !
বিকৃত যে নিয়ম তারই শেষে ভেঙে পড়লো রাতের অনাকাক্ষিত ঘুম
মাঝ রাতে যে অস্থিরতায় জেগে থেকে গেলে
যে নির্ঘুম রাত তোমায় মাছির মতো ঘোরায়
তা শুধুই অবিশ্বাস
বোঝা যায় প্রেম হীনতা
রাত জেগে থেকে পাখি গান গায়
তোমার যৌবনের দিনে সে গান শুনেছ তুমি, রোজ
আর আজ ও
রাত চোরা ডেকে যায় ,
আর কোকিল ডাকে ঠিক রাত তিনটের পরে।

১০
ছেলেবেলার গান
ছেলেবেলার অন্ধকারের কাছে,
এক বাগানের কাছে এসেছি
বন্ধ দরজা
কড়িকাঠ রঙ
বেমালুম কিছু ভুলের মাশুল দিতে দিতে এক অজানা সম্মোহনের কাছে এসে দাঁড়িয়েছি
বিপরীত মেরুর টান, এসব স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে থাকে নাকি এমনটাই শোনা কথা
অজানার দরজার বিপরীতে যে সময় তার কাছে জীবন তোলা রয়েছে
বহু মেরু হেঁটে বহু কালের সাথে যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে এক সময়
অনাবিল এক জলের কাছে নেমে এসেছি।
এই জল এই অজানা জলময়
চাঁদ দেখতে গেলে নেমে যাতে হবে জলে আজ
ছেলেবেলার অন্ধকার ঢাকা মাঠ জেগে আছে ওই জলের ওপারে
ছেলে বলার মাঠ জেগে আছে অন্ধকার ওই জলের কাছাকাছি।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Swapan Nath 2 years

    খুব গোছানো লেখা সুন্দর।ভালো থেকো ভালো লেখো।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes