
তনুশ্রী কার্তিক-এর একগুচ্ছ কবিতা
এষণা
গীতবিতান নয়ত ন’হন্যতে
যেকোনো একটির পাঠ শুরু হতে পারে আজ
তবু তার আগে বিবমিষা জাগে!
গীতবিতান না ন’হন্যতে
কী পঠিত হতে পারে আজ
ছাই ঘেঁটে দেখি
কতটা শীতল হয়েছ !
কানাকড়ি
পুড়ে গেছে হাত
কোনোদিন পলাশ কুড়িয়েছিলাম
আজ ফুলে ফুলে সেই ব্যথা !
তুমি আরশিগোপনে আঁকো পথ, বর্ণের মিতালি যাবে ঘটে–
এখানে স্বপ্ন নেই,
নেই জোনাকির প্রার্থিত আঁধার
জ্বলে ওঠার মতো করে নিভে গেছে সব
সেতারের ছেঁড়া তার, শান্ত দহন
এই স্মিত ফাল্গুন আমার সম্বল!
দহনপর্ব
নিজেকে পুড়িয়েছ নামের অক্ষরটুকু রেখে
তোমার পুড়ে যাওয়ার ছন্দে ডুকরে কেঁদে উঠি
পথ হাঁটি তোমার পদচিহ্ন মেপে
যেখানে থমকে দাঁড়িয়েছ—
যতিচিহ্নের মতো আমিও থেমেছি।
শিশিরের কান্না আমাকেও শব্দজব্দ করছে
করে যাবে মৃত্যু অবধি—
নদীটির কাছে ফিরে যেতে চেয়ে
প্রতি মুহূর্তের খেলা গেছে ভেঙে
নিজেকে ভেঙেছি অক্ষত, দ্রাঘিমায়
অযুত অক্ষরগুলির মতো।
সঞ্চারী
রৌদ্রপথে অসীম যাত্রা পার করে
বসেছি জলের পাশে
সূর্যডোবা আলো এসে পড়েছে আমার মুখে
ক্ষণিক বাদে সব আলো মুছে যাবে।
অন্ধকার আমার উল্লাস!
এই জগতযবনিকার আড়ালে একটু একটু করে গড়ছি আকাশ—
আঁকছি ছায়াপথ, আমার নিয়তি, হেমন্তকাল—
বিস্ময়
আলোর ভিতর আলো জ্বলতে দেখে
বন্ধ করি চোখ
অথচ,একটি নক্ষত্রের তরে আকাশ জেগেছি কত!
সুদূর কল্পলোকে ভাসিয়েছি আমার দীর্ঘশ্বাস
আমার দীর্ঘশ্বাস ভেসে যায় ওই–
পাতায় পাতায় কলসে কলসে…
এতদিন যা ছিল ঢাকা ছিন্ন বল্কলে
মুক্ত বায়ু। মুক্ত বন্ধনে আবারও বাঁধি তাকে
যেমনটি ওই দূরের নক্ষত্র
স্বর্ণবন্ধনে ছিল সে কখনো আমার আঙুলে !
পাখি
শেকল খুলে দিয়েছি
পাখি উড়ে গেছে
অস্ত-সূর্য এইমাত্র ঝাউবনের আড়াল হল
পাখি অস্তের বিপরীতে উড়ে চলেছে
পাখিটির উড়াল দেখি—
এই বেলা ইমন-বেহাগের নয়, হয়তো আরও কিছুদূর গেলে কোমলগান্ধার ছুঁয়ে যাবে
যে আকাশ একলার, একান্ত নিজের
তার খোঁজে পাখির এই উড়াল
পুরিয়াধানেশ্রী এই অবেলায় ছড়ায় মাতন
রাগ এক মস্ত বড়ো পাখি !
আরশিনগরের পথ
পথের বাঁকে এসে পথ হারিয়েছি
পেয়েছি হিজলের ছায়া, নদী, ভাঁটফুল
এ পথ আরশিনগরের।
জানে সব নদী
ঢেউয়ের ভিতর নদী ভেঙে যায়;
দেখে নিয়ে ভাঙার অবধি
কত নাম ভুলে গেছ তুমি আবহমানের
নীল রাত্রির ভাষা ভুলে গেছ
উপমার মতো শীতল জ্যোৎস্নায় পথ হারালে
শিরা -উপশিরায় টান পড়ে আজও!
হননমেরু
ন’হন্যতে-র পাতা ওলটাতে ওলটাতে দেখি
বইয়ের ভাঁজে রেখে দেওয়া গোলাপের পাপড়ি
গিয়েছে ঝরে;
স্ট্রিট লাইটের নীচে থমকে আছে রাত
কেউ ফেলে গেছে পথে নিজের জন্য বাঁধা গান,
অচিন দেশ;
শিরা কেটে রক্তে ডোবানো ব্লেডের মতো শিহরিত এই রাত্রি
পাঁচিলের ওপর বসে প্যাঁচা ডাকছে
চিঠি পাওয়ার দিনগুলি খুব মনে পড়ছে আজ
মুখোমুখি নির্জন গল্পেরা
দেওয়ালগিরির বাতি কেঁপে কেঁপে উঠছে…
এত দহন নিয়েও শান্ত হয়ে আছে বসন্তকাল
এ দহন আগুনও পারে না দিতে
আমি আগুন ছুঁয়ে দেখেছি
তেরো বছর পর সূত্র-না-মেলা অঙ্কটির উত্তর খুঁজতে খুঁজতে
আলোর নীচে এসে থমকে দাঁড়িয়েছি
একটি পথ যেভাবে আরেকটি পথের দিকে ছুটে
যায়,
একটি নদী যেভাবে আরেকটি নদীতে মেশে
ততদূর হেঁটে যেতে চেয়েছি—
লেখাটি ভালো লাগলে, আবহমানের জন্য আপনার ইচ্ছেমতো অবদান রাখতে পারেন
এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে ফোন পে-র মাধ্যমে।
এই অবদান একেবারেই বাধ্যতামূলক নয়।
স্ক্যান করার জন্য কিউ আর কোড–
খুব ভালো লাগলো