
ওয়াহিদা খন্দকার -এর কবিতাগুচ্ছ
বসন্তহীন বিলাপ
অক্ষরগুলো চিনি,
শব্দগুলোও খোদাই করা।
গুহার পাতাল থেকে ভেসে উঠছে ইতিবাক্য
তাই চিঠি লেখা বন্ধ হোক এবার।
আমাদের সব কথা জানা
সব বেলুন গভীরে পৌঁছে গেছে কবেই
শ্রমিকদের কোরাসে পাল্টে যাচ্ছে ঋতু
ডাকবাক্সের বাসায় এখন নতুন নাকজুড়ি কবুতর!
তাতেই বা কি?
সব স্মৃতি তো ইতিহাসের সিলমোহর পায় না
কেউ কেউ আপ্লুত মেঘ নিয়ে ভারী করে রাখে চোখ…
দেখো রাজপথে ভিজছে রাজার মর্মর শ্বেতাঙ্গ ,
রোদে পুড়ে, হিমে শুকিয়ে হয়ে উঠছে আরোও শুভ্র।
এভাবে দুঃখগুলিও শুভ হয়ে উঠবে একদিন।
লিভ টুগেদার
যে কদিন আমাদের সমাবেশ ছিল
বুঝেছি আমাদের দূরত্ব কতটা ঘনিষ্ঠ
কাছে থাকতে থাকতে বুক ঠেকে যাচ্ছিল দীর্ঘশ্বাসে
বেহুলার ফুলশয্যায় ভেসে আসছিল বিষহরির পালা
একেকটা দিন তরল হতে হতে
সূর্যাস্তের সম্মুখীন যখন
তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও একটা বাস্তবতার দিকেই ফিরতে হল
সেখানে হাঙরের নিশ্বাস সত্য
সেখানে আতরের ইতরতা অমোঘ
বোধহয় ভালোবাসতে ভুলে গেছি আমরা;
ব্যস্ত শহর পাড়ি দিতে দিতে ইন্দ্রিয়দের সঙ্গে
বাস করছি বহুকাল !
শর্তহীন, খেলাপি, যৌথ বাসে নিমগ্ন …
স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আমরা আসলে
এমন বাস্তবেই ফিরি চিরদিন…
উদ্ভিদ ও শ্লোক
যারা পড়ছেন তাদের বলছি —
একটা মানুষকে কেমন দেখেন আপনি?
আকারে না আয়তনে!
বলছি কারণ:
একটি বোকা মানুষের সন্ধান পেয়েছি
অতিবৃক্ষ। সন্তর্পণে নিজেকে সেচন করে।
তার পাতায় পাতায় নাকি আমার শব্দরা পেকে উঠেছে….
কেন লিখি এসব কিচিরমিচির ?
উত্তর না দিলে সব উড়িয়ে দেবে ঝড়ের কবলে!
অগত্যা
তার মুখর উত্তরণকে দেখে বললাম,
কবিতা লিখি আমি,
কিচ্ছুটি হয় না এসব জানি, তবু লিখি…
কবিতা লেখা কিছুমাত্র কঠিন নয় বলে।
বেসমেন্টে গিয়ে চিৎকারকে মুঠো করা
আর ছাদে দাঁড়িয়ে বিশ্বাসকে গলা ঠেলে বের করে দিতে জানলেই হল।
তাই কোলাহলটা থেকেই যায়…
তুমিই মন্ত্র উচ্চারণ করো রোজ
প্রতিদিন দেবশিশু তোমার বুক আলো করে ফোটে।
তবু জেনো তোমার মন্ত্র জন্ম দেয় দেবতা
আর আমার কবিতায় দেবতা জন্মায়….
গোরস্থান ও পৃথিবী
গোরস্থানের পাশেই বাড়ি আমার
দেখি সুপুষ্ট ঘাসগুলি কেমন লকলকিয়ে উঠেছে!
গাছের কোটরে দেখা যায় বিষধর অথবা বেজি।
মৃত্যুর ভেতর ওদের জীবনের আশ্রয়
গোরস্থান দেখলে ভয় করে না আর,
আশা জাগে… জানি,
অন্তত আমার বুকেও একদিন জাঁকিয়ে বসবে লতাগুল্ম
পাশেই শুনি কোলাহল ;
মানুষের বুকে রাখি হাত,
তাকাই নিজের ভেতরেও
ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল, পোড়া মাংস, ঘা।
অথবা আঁচড়ের দাগ!
বুঝি গোরস্থান থেকে দূরে আছি এখনো…
সেরে উঠুক পৃথিবী
উদ্ভিদের সাথে একাত্ম হওয়ার আগে
আমার গান যেন যাবতীয় যুদ্ধের পরাজয় সঙ্গীত হয় ।
লেখাটি ভালো লাগলে, আবহমানের জন্য আপনার ইচ্ছেমতো অবদান রাখতে পারেন
এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে ফোন পে-র মাধ্যমে।
এই অবদান একেবারেই বাধ্যতামূলক নয়।
স্ক্যান করার জন্য কিউ আর কোড–


