থেরিগাথা থেকে সংকলিত কয়েকটি কবিতা
অনুবাদ ও ভূমিকা – গৌতম বসু
‘থেরিগাথা’ প্রাচীনকালের বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের ৫২৫টি কবিতার এক সঙ্কলন। কবিতাগুলি পড়লেই অনুমান করা যায়, এই কবিতাগুলি যাঁরা পালি ভাষায় রচনা করেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই শাক্যমুনি বুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল, আবার, একে এক ব্যতিক্রমী প্রকাশভঙ্গিমা তথা কবিকল্পনার চলনও ভেবে নেওয়া যায়। সে যেমনই হোক, পণ্ডিতেরা হিসেব ক’ষে আমাদের জানিয়েছেন, সঙ্কলনপুথিটি গ’ড়ে উঠতে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক, অর্থাৎ আনুমানিক তিনশো বছর সময় নিয়েছিল। প্রসঙ্গত, এই সঙ্কলনের প্রতিটি রচনাই ‘থিরবাদী’ অথবা ‘স্থবিরবাদী’ অর্থাৎ প্রবীণ বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন। বুদ্ধদেবের পরিনির্বাণের পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্ব যে ব্যাপক ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে, তার অভিঘাতে ‘থিরবাদী’ বৌদ্ধধর্ম ভারতবর্ষের ভূখণ্ড থেকে পিছু হঠতে-হঠতে, অবশেষে আধুনিক শ্রীলঙ্কা-য় আশ্রয় নেয়। সে অবস্থা আজও অপরিবর্তিত আছে। বলা বাহুল্য, ধর্মতত্ত্বের জোরে নয়, এই লেখাগুলি কাব্যগুণে আজও ভাস্বর। যতদূর জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ প্রান্তে পালি থেকে ‘থেরিগাথা’ প্রথম অনুবাদ করা হয় জার্মান ভাষায়, এবং তার কয়েক বছর পরে, বাঙলায়। আমরা এখানে মাত্র চারটি লেখা চার্লস হ্যালিসে-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাঙলায় রূপান্তরিত করবার প্রয়াস পেলাম।
থেরিগাথা
[‘থেরিগাথা’ প্রাচীনকালের বৌদ্ধ ভিক্ষুণীদের ৫২৫টি কবিতার এক সঙ্কলন। কবিতাগুলি পড়লেই অনুমান করা যায়, এই কবিতাগুলি যাঁরা পালি ভাষায় রচনা করেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই শাক্যমুনি বুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল, আবার, একে এক ব্যতিক্রমী প্রকাশভঙ্গিমা তথা কবিকল্পনার চলনও ভেবে নেওয়া যায়। সে যেমনই হোক, পণ্ডিতেরা হিসেব ক’ষে আমাদের জানিয়েছেন, সঙ্কলনপুথিটি গ’ড়ে উঠতে, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক, অর্থাৎ আনুমানিক তিনশো বছর সময় নিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এই সঙ্কলনের প্রতিটি রচনাই ‘থিরবাদী’ অথবা ‘স্থবিরবাদী’ অর্থাৎ প্রবীণ বৌদ্ধধর্মের নিদর্শন। বুদ্ধদেবের পরিনির্বাণের পরবর্তী শতাব্দীগুলিতে বৌদ্ধ ধর্মতত্ত্ব যে ব্যাপক ভাঙ্গাগড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকে, তার অভিঘাতে ‘থিরবাদী’ বৌদ্ধধর্ম ভারতবর্ষের ভূখণ্ড থেকে পিছু হঠতে-হঠতে, অবশেষে আধুনিক শ্রীলঙ্কা-য় আশ্রয় নেয়। সে অবস্থা আজও অপরিবর্তিত আছে।
বলা বাহুল্য, ধর্মতত্ত্বের জোরে নয়, এই লেখাগুলি কাব্যগুণে আজও ভাস্বর। যতদূর জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষ প্রান্তে পালি থেকে ‘থেরিগাথা’ প্রথম অনুবাদ করা হয় জার্মান ভাষায়, এবং তার কয়েক বছর পরে, বাঙলায়। আমরা এখানে মাত্র চারটি লেখা চার্লস হ্যালিসে-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাঙলায় রূপান্তরিত করবার প্রয়াস পেলাম।]
-গৌতম বসু
থেরিকা
বুদ্ধদেব তাঁকে যা বলেছিলেন
এখন, যখন থেরিদের মাঝে বসবাস করছো তুমি, থেরিকা, ০১
এতদিনে সার্থক হল তোমার শিশুকালের নামকরণ।
স্বহস্তে সেলাই করা কাঁথার নিচে, নির্বিঘ্নে ঘুমাও এবার,
তোমার কামভাব কুঞ্চিত, নষ্ট হয়ে গেছে;
মৃৎপাত্রে, যেন-বা এক শুষ্ক উদ্ভিদ ।।
মুত্তা
বুদ্ধদেব তাঁকে যা বলেছিলেন
তোমায় যে নামে ডাকা হয় তার অর্থ, যিনি মুক্ত। ০২
যা-কিছু পিছনে টানছে তোমায়, মুক্ত হও তার থেকে,
হয়ে ওঠো রাহুর গ্রাসমুক্ত চন্দ্রমা।
চিত্ত চিরমুক্ত হল ব’লে, মুছে গেছে সব ঋণ
পরম তৃপ্তিকর আজ, ভিক্ষার অন্ন ।।
বীরা
বুদ্ধদেব তাঁকে যা বলেছিলেন, নিজের প্রতি উচ্চারিত তারই পুনরুক্তি
বীরা, তোমার নামের অর্থ, বীরভাব, ০৭
স্বভাবের গুণের জন্য, এটি তোমার উপযুক্ত নাম।
এমন এক সন্ন্যাসিনী তুমি, যে জানে কীভাবে জানতে হয়,
অন্তিমবার শরীর ধারণ করেছো, যত্ন নিও তার,
দেখো, এর পর, তা যেন মৃত্যুর শকট না হয়ে ওঠে ।।
মিত্তা
বুদ্ধদেব তাঁকে যা বলেছিলেন, নিজের প্রতি উচ্চারিত তারই পুনরুক্তি
মিত্তা, তোমার নামের অর্থ, মৈত্রী, ০৮
বিশ্বাসের বলে তুমি সন্ন্যাসিনী হয়েছিলে,
এইবার বন্ধুদের সঙ্গ আস্বাদন করো,
সুদক্ষ হয়ে ওঠো অন্তরে,
সংসারের সমস্ত যে পিছুটান,
তার থেকে অপার নিরাপত্তালাভের তরে ।।
বেশ অন্যরকম। থেরিগাথা আরো অনুবাদ হোক।
ধন্যবাদ। চেষ্টা করব ।
ভালো লাগল। আরও অনূদিত হোক।
ধন্যবাদ। চেষ্টা করব।
গৌতম বসুর থেরিগাথা সংকলনের অনুবাদ পড্লাম। অসাধারণ।”চিত্ত চিরমুক্ত হল বলে মুছে গেছে সব ঋণ”—কি লাইন!কে বলবে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে তৃতীয্ শতাব্দীতে লেখা!মনে হচ্ছে সদ্য কোনো বলিষ্ঠ কবির চিত্তচেতনা।এমন একটা অনুভূতির সামনাসামনি করানোর জন্য আবহমানকে ধন্যবাদ।
মূলের প্রায় কিছুই রক্ষা করা যায় নি, তবু দেখুন এ-লেখাগুলির উচ্চতা কত স্পষ্ট ।
মুগ্ধ পাঠ 🙏
ধন্যবাদ ।
সেই সময়ের লেখা এসব। কিন্তু কত ঝরঝরে আধুনিক! মূল্যবোধ খেতে পারেনি সৃজনবেদনাকে। অবশ্য অনুবাদের গুণেও তা কিছুটা।
ধন্যবাদ। আধুনিক কি না আমি নিশ্চিত নই। চিরায়ত।