
সুদেষ্ণা দত্ত সাহা
বিষাদঋতুরা
১.
সেসব স্বপ্নের পাশে বিষাদ ঋতুরা নেমে আসে
যে স্বপ্ন তোমাকে ঘিরে সেখানেও তুমি তো অধরা
তামস রাতের বুকে দীপ্র যে কালপুরুষ,
অশ্রুরাগ এযাবৎ মৃত্যু শুধু মৃত্যুকে ডেকে নেয়
তোমার বিরাগ সব বাতাসের মন্ত্রে ভাসে অভিমান ছোঁয় যত মুখচোরা চোখের জলের স্তব্ধশ্লোক
অন্ধকারে ডুবে গেছে যে পৃথিবী, তার নম্র চরাচর জুড়ে বয়ে গেছে জীর্ণ শীর্ণ জল রেখা
তার তীরে বসিয়া একেলা অন্ধ চোখে অন্ধকার গুনি
মরিচা প্রদেশ থেকে কালসর্প দোষ শুধু ঘিরে ফেলে নিয়তির জাল।
২.
মেঘের মেদুর জমে হাওয়ার দোটানা
খুঁড়ে খুঁড়ে দেখ এ হৃদয় কতটা দীর্ঘশ্বাস জমে থাকে জোরালো এ সংহারে।
এখন জেনেছ তুমি প্রেম নাকি নিষ্ঠুরতা প্রত্যয় তোমার?
আচমকা ধাক্কা খেতে খেতে স্বপ্নাবিষ্ট এ আকাশ ভেঙে চুরমার
অধুনা এ জীবন
অতলের স্বরাগমে যে ধ্বনি বাজে,
তারি কাছে পড়ে থাকে বিরহজাত প্রহর
মধ্যযাম যন্ত্রণার তীব্র কড়ি ও কোমল।
এ পরবাস জুড়ে বাঁশিঋণ বেড়ে যায়
৩.
শীর্ণ ফুল রাখিনা সাজিয়ে
দ্রুত ফেলে দিই যত দ্রুত পারি।
ঘনশ্বাস জমে থাকে জলের ভেতরে
জমে থাকে অন্তিম ক্ষণের কথা।
বিরোধাভাস, অলংকারহীন অক্ষমের কান্নাসমূহ
তুমি এসে মুছে দাও হে সময় এযাবৎ যত গান ছিল
এভাবে বিকোবে বলে আসে নি তো এ মহানগরে।
শ্বাসাঘাত নয় সেতো বিরামহীন বিরতি এঁকেছি
বিসর্জন শেষে ফুলে শবদেহে পূর্ণচ্ছেদ এঁকে দেব বলে।
৪.
নির্বোধের মতো দিন পেরিয়ে দেখি
দুহাত ভরে জমে আছে কত ক্ষুব্ধ অশ্রু ও আঁধার।
যে ভুল রাতের শেষে শরীরের রন্ধ্রে বাসা বাঁধে
যে ভুলে প্রখর রোদে পুড়ে যায় করুণ পথিক।
সে অসুখে সংজ্ঞা হীন চোখের পাতারা
দেখে রংবেরঙের ফানুস
ভরাডুবি থেকে যন্ত্রণা ডানা মেলছে দরজা খোলা অনন্তের দিকে।
৫.
ঘনশ্বাস থেকে সূত্রপাত যে লেখাদের
অভিশাপ লেগে আছে যাদের কোমল গায়ে গায়ে
তাদের অস্থিমজ্জা পোড়াও এবার
এ ঘোর আবর্তে ঘরদোর মৃত্যু পথগামী
সহায় সম্বলহীন পড়ে আছে দিবারাত
তাদের করুণ মুখে জল দাও
তৃষ্ণা নিবারণ কর, ঘুরে যাক নদী পথ বিষাদ ঋতুরা সব সুরে গাথা থাক।
এযাবত অক্ষরের গান বাজুক দুপুর জুড়ে।