
অর্ণব সামন্ত -র কবিতাগুচ্ছ
কবিতার বারোমাস্যা
# প্রখর দহন দিনে #
দহনে দহনে এত দূর আসা
সহজ সরল সুন্দর হলে ঘুম পায় ভীষণ ঘুম
কচ্ছপের পিঠের মতন রাস্তা জার্নিতে ক্লান্ত
ড্রাইভারের যেমন চোখ বুজে আসে মসৃণ রাস্তায় উঠে
তাই হাড় জ্বলছে শরীর জ্বলছে শান্তিপ্রিয় মনও
এই দহনের শূন্যতায় তুমি রেখে গেলে E = mc2
আলোর বেগে ছুটে চলা কোনোকিছুর
বয়স বাড়ে না , থমকে স্থগিত সময়ের মতো
দহন আমি তুলে নিচ্ছি একঢাল বিদিশার কেশ থেকে
চোখ থেকে ঠোঁট থেকে গ্রীবা থেকে …
তুমি কি দহনে জ্যোৎস্না আনতে চাও ?
# গহন মেঘের ছায়া #
বিদ্যুচ্চমক অত সোজা নয়
অনেক ফিরিস্তি আছে
প্রথমতঃ অভিমান ঝগড়াঝাটির মেঘ জড়ো করো
সেটাকে আবার কথাবার্তাহীন ঘনীভবন করো
তারপর একদিন কোথাও কিচ্ছু নেই
অকস্মাৎ ভূমিকম্প , বাজ ডাকা , অঝোর বৃষ্টি
চমকে চমকে ওঠা বিদ্যুৎ আবিষ্কার পারস্পরিক
অনন্তকাল যার কাছে বিন্দুবৎ
এক মুহূর্ত সেখানে কি জানা যায়
তবু বক্ষে দুরুদুরু মনাকাশে গুরুগুরু মেঘ
পরস্পরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে দিতে নতুন নির্মাণে
আগুন লেগেছে ভিতে , ব্যথার পর আরও ব্যথা
তবু সমস্ত কিছু ভাসি যায় পরম লগ্নে
ভুলে যায় পৃথিবীর পথ ঘাট প্রান্তর
সমস্ত জগৎও ছোটো লাগে
যুগলের একক জার্নিতে
# পেয়েছি বাঁশিটি তার #
বাঁশি কি ভুলেছে সুর , স্বপ্নও ?
কাশের আলো পড়েনি হৃদয় প্রিজমে
কি করে সে যাবে অমল বিচ্ছুরণে
তবু সমস্ত ভাঙার একটি ছন্দ আছে
সমস্ত ভাঙার একটি জ্যামিতিক নির্মাণ
সমস্ত নির্মাণের অল্পবিস্তর ভাঙন , ভাঙন
পদ্মপাতার জলের চঞ্চলতায়
নীলাকাশে সাদা মেঘের মৌজ ও মৌতাত
আশ্লেষ গড়িয়ে যায় টানা কলতানে
আবেগ দুরন্ত ফোয়ারার সমীপে
ময়ূরপালক উড়ে এসে পড়ে তোর ভুরুভঙ্গে
# কুয়াশার এপিটাফ #
আঁধার বড়ো আঁধার এখন
সমাধি রচনার সময় এখন
আমার সমাধি , তোমার সমাধি , সমস্তের সমাধি ভুলে
শুধু মগ্নতা , মুগ্ধতাকে দরোজা ভেঙে নিয়ে আসা
যেন টিউবারকুলোসিস নিপাত করতে তুলসীতলায় সাঁঝবাতি
উৎসের দিকে ভাবনা সরণ , আত্মকথন , আত্মজিজ্ঞাসা
আঁধারের বন জুড়ে আঁধার গুহা
অগ্নি প্রজ্বলন করা , সপ্ত ঋষি চলে গেছে দূর আকাশে
কালপুরুষ হয়ে শুধু দেখি
বারবার ব্যর্থ হলেও
সফল তীরন্দাজ হবার চেষ্টা করি
কুয়াশায় জীবন সত্য উঁকি মারে
সমস্ত শরীর কুয়াশা , তাকে সরালে
কিছু কি আলো পাওয়া যায় ?
নাকি সমাধি চিনে যাওয়া লোকজন
এপিটাফ মুখস্থ করে মুখে মুখে ছড়ায়
বেঁচে থাকি জলের অক্ষরে , গভীর জলের কবিতায়
কুয়াশার শরীরে লেগে থাকে ফসলের ঘ্রাণ
# শেষপাতার শীত #
মিনতি কেউ কি শোনে ?
যে যাবার সে চলে যায়
অভিমান পুষে রাখার সময় চলে গিয়েছে
এখন সোজাসাপ্টা পাল্টা লাভা উদ্গীরণ
জড়িয়ে রেখে পুড়িয়ে দেওয়া হাড়মজ্জা
শুধু বিশল্যকরণীর একটি পাতা
মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের মতো জাগায় মৃতকে
তার জন্য গন্ধমাদন পর্ব কখনো সখনো দরকারও হয়
হৃদয় ভেঙে দিয়ে হৃদয় চলে যায়
অন্য কোনো পোষিত হৃদয়ের পথে
অস্তিত্বহীনতাই অস্তিত্ব যখন
একটি ইচ্ছাকে ধরে বেসক্যাম্প থেকে
মাউন্ট এভারেস্টের দিকে আবার পা বাড়ানো
আবার বসন্ত বাতাসে ভাসার ইচ্ছা
শেষপাতার শেষ ইচ্ছার অশেষ প্রসারণে
কুলুকুলু নদীটি তখন জুলুজুলু চক্ষে
সমুদ্রের মোহনায় সমর্পণে উত্থান মুক্তির পথ খুঁজছে
ঝড় দুর্যোগে সেই বিপদে
পরম সম্পদ লাভ জড়তা ফালা ফালা করে
সঞ্জীবনী সুধায় জাগছে উদাসীন , কুয়াশা শীতের
চাদর সরিয়ে রেখে সূর্যের লালিমায় …