
শিবালোক দাস-এর কবিতাগুচ্ছ
দেবীপক্ষের কবিতা
১
রজঃস্বলা
ঠান্ডা হয়ে আসে মরীচিকা।
শুকনো চোখের সামনে দাঁড়িয়ে
তুমি বলো আমি আলোর বিপরীতে
রেখে যাবো কোমল বর্ম, ছুঁলেই তুমি
শুনতে পাবে সপ্তসুর।
রাত জেগে উঠেছে শেষ পর্যন্ত।
তাহলে তুমিও ভেসে যাও গঙ্গোত্রীর দিকে…
তুমি তো কোনো প্রশ্ন নও, উচ্ছিষ্ট নও !
২
শক্তি
দীর্ঘ কেশে লেগে থাকে প্রতিটি জন্ম,
তারা নক্ষত্রের নামে পরিত্যাগ করে
বিবর্ণ ঘাস, আর ফুটিয়ে তোলে ভোর।
ব্যর্থ যায় না শিরদাঁড়ায় বয়ে যাওয়া
সূর্য প্রণাম। আমার কত বুনন তুমি
বদলে দিয়েছ, কত দৃষ্টি মেলে ধরেছ
শিখায়, যা দিয়ে আমি লিখতে পারি
দু চারটে করে কবিতা।
এখনও রক্তপাতের পর আমি ক্ষতে
হাত রেখে বলি, শক্তিরূপেণ সংস্থিতা !
৩
মমতাশ্লোক
পৃথিবী আজ অগ্নিকুণ্ডে মিশে যায়নি
শুধু তোমার জন্য, যেভাবে সে জ্বরে
কেঁপে ওঠে, রুক্ষ হয়ে যায় চামড়া,
তার চোখ তখন কাঁচ হয়ে ওঠে শুধু
তোমার জন্য। ধমনীতে কোনো হিংস্রতা
নেই, শুধু ভেসে আসা বাতাস আছে।
যেভাবে দু চারটে নাম তুমি ছুঁড়ে ফেলো
শূন্যে, সেভাবে হয়তো দেখা হয়না কিছুই।
শুধু পড়ে থাকে একলা রাতে মমতাশ্লোক।
৪
আগমনী
আমার শরীরে ধীরে ধীরে জমে উঠেছে
মাটি, তাই আমি বুকের মধ্যে টেনে আনি
হাজার ঢেউ, যারা একদিন শরতের সকাল
চেয়েছিল।
আমি জানলার বাইরে রোজ একটি কাক
দেখি তার রং ছড়িয়ে দেয় দুটি চোখে,
সে কোনোদিন কিছু চায়নি…
শুধু অশরীরীর জন্য দু ফোঁটা জল ছাড়া।
একেক দিন বড় একা লাগে, সাদা কাশে
যখন এলোমেলো হয়ে যায় কালি,
আমি আগমনীর কাছে গিয়ে বলি,
আমার জন্য লিখে দাও একটিমাত্র কবিতা !
৫
মহালয়া
আমি কোনোদিন ভাত মুখে তুলিনি শেষবেলায়।
দরজা খুলে ছড়িয়ে দিই বীজ, তাই তুলে নিয়ে
তোমরা হাওয়ায় ভেসে যাও।
একবার পায়ের ফাঁকে শুকনো ফুল মনে
করিয়ে দেয়, ঘরে আসো রোজ।
তাও মাটিতে গেঁথে গেলে উপড়ে ফেলো
জড়ানো অভিশাপ যা দৃষ্টি বেঁধে রাখে শক্ত করে।
রক্তের ফোঁটায় দুই পক্ষ লেখা হলে মনে
হয়, আমার পিতারা পাঁজরে পাঁজরে জ্বেলে
দেননি আগুন, বরং তাঁরা ছড়িয়ে দেন শান্তিজল।
৬
দেবীপক্ষ
শিবালোক দাস
বুকের ভেতর ফেটে পড়েছে স্রোত,
তবুও ভেসে বেড়ালে লোকে বলে
বাউন্ডুলে এবং শোক বলে, অন্ধকার
তোমার স্বর্গ হয়ে পায়ে চুম্বন করুক।
ঘরের ভেতরে জলছবির মতো বিদ্ধ করে
দেয় বরফ হয়ে যাওয়া শ্বাস, তুমি মৃত না,
তুমি উপসংহার না, তুমি কোনো অবশেষ
না, তুমি কোনো উড়ে যাওয়া ছাই না।
বুকের ভেতর ফেটে পড়েছে স্রোত,
নদীর মতো তারা শুধু পিদিম ভাসায়,
অবিচ্ছিন্ন পান্ডুলিপি ভস্মীভূত করে
তারা বলে, সকলের হৃদয়ে রক্ত দিতে
আজ দেবীপক্ষের সুচনা হয়েছে।
তুমি কি আমার মতো করে নক্ষত্রের
মুখে জ্বালাবে আগুন, বাঁচিয়ে তুলবে তাদের ?