
চিরশ্রী দেবনাথ-এর কবিতাগুচ্ছ
অদ্ভুত রঙ
……
আমি খুব শান্ত হয়ে এসেছি তোমার কাছে
পৃথিবীতে দুর্বোধ্য যুদ্ধ, কান্নার প্রবাহ,
পায়ের কাছে বসে আছি ,
বৃক্ষমূলের মতো স্থিত, বল্কলে ঢাকা নির্ভার শূন্যতা ,
চোখে ঢেলে দিচ্ছ অলঙ্ঘনীয় কিছু
… মুহূর্ত তৈরিতে কি অনায়াস দক্ষতা!
তোমার হৃদয় থেকে একটি গভীর রাত
আমার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে, এরকম ভালোবাসা
বুঝি আজো হয় ?
জলের কাছাকাছি
………….
অপরূপ হয়ে উঠছি, ক্লান্ত আশ্বিনের পথে গন্তব্য,
শীতের দেশ থেকে পাখিদের ডানার আওয়াজ শুনতে পাই, সংশয়হীন জলরাশি কোথায় ?
অসংলগ্ন গভীরতার কাছে ধরা দিলে মনে হয়
এই বধ্যভূমি আমারও ,
প্রেম হয়েছে, শুঁয়ো পোকাগুলো মাথা চাড়া দিয়ে
উঠছে ক্রমাগত
পা থেকে ধীরে ধীরে ফিমার বোনের কঠিনপ্রদেশ পেরিয়ে তারা উঠতে চাইছে হৃদয়ে
সেখানে মৃত প্রজাপতিদের দেশ , এরকম
ভয়াবহ পরিনতির কথা নরম শুঁয়োপোকারা জানেনা ,
অম্ল ও রক্তের পিচ্ছিলতাকে অগ্রাহ্য করার সাহস
তাদের আছে ।
সম্মোহন
……..
কিছুই হতে ইচ্ছে করে না আর, ভুলগুলো ডানা
মেলে চলে গেছে,
অখ্যাত বিমানবন্দরের রানওয়েতে মায়াবী রাত
হাত ধরে নিয়ে যায় সম্মোহনে,
আনন্দের মতো ভেসে আসে জোনাকির দল,
তারা দেখাবে পথ, কাছেই স্টেজ বেঁধেছে
বাংলা ব্যান্ড , কবিতার মতো গান লিখেছে তরুণ
সুরকার,
শুনছে না মানুষ ,
পরাজিত সুরের সৌন্দর্য ঘাসে ঘাসে ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে ভোরের দিকে…
হারিয়ে ফেলা সময়
…………….
প্রত্যেকটি বিকেল আমাদের মতো কাতর ।
স্বর্গের ঋতু পাঠিয়েছিল মোহরপাতার নিমন্ত্রণ,
যাইনি ,
তক্ষক ডেকেছে গোপনে । শুনিনি । বধির ছিলাম ।
কিন্তু কার্বলিক অ্যাসিডের খোঁজ করেছি,
বর্ষার প্রবল স্নানের দিনে, কেটে ফেলেছি
ফনীমনসার বিরল ফুল,
ভেবেছি সময় হবে, হয়েছে এখন, অথচ
হিল স্টেশনে ধস, বিপজ্জনক খাদে ছড়িয়ে গেছে লোকালয়ের অবিশ্বাস…
মিশে আছি
………..
এমন তো কেউ নই যে মনে রাখবে ,
দুরন্তভাবে অনুপস্থিতির কথা বার বার বলবে ,
পৃথিবীর শেষ প্রান্ত থেকে ডেকে আনবে
অরোরা ব্যাসিলাসের আলোক সম্ভাবনা
কোনো মানুষই হয়তো ডাকে না কোনো
মানুষীকে এভাবে আর ,
ভেতরের চেনাজানা বাঙ্মময়তা ছড়িয়ে যায় এদিক ওদিক
আলো হাওয়া জল থেকে তোমার স্পর্শ কুড়িয়ে আনি,
মখমলে ডুবে গেছে অবুঝ সংঘাত , প্রত্নতাত্বিক সম্ভাবনায়
আমাদের প্রাসাদ অক্ষয় আয়ু নিয়ে অরণ্যে ঢেকে যায়
কবিদের কষ্ট
…………
কবিদের কষ্টের মতো ঘুমিয়ে পড়ে চারদিকের
অজস্র নীরবতা , ডিসেম্বরের ধূসর বিকেলে
কেঁদে ফেলে কেউ কেউ । কে শোকবাঁশী
বাজায় অবিরত, চাপা পড়ে যায় প্রার্থনা সঙ্গীত, শুদ্ধ বাজনদার মুখ গুঁজে রেখেছে শয্যায় , স্নানঘরে নারীর শরীর যেন জলধারা , শেষরাতের পাখি দেখে সূর্যের প্রথম
মুখ । আগুন, ক্ষয়, প্লাবিত একাতিত্ব,
সবই কি কল্পিত ? পৃথিবীর অচ্ছ্যুত,
শোকগাঁথা , চিররুগ্ন সুর । ফুরিয়ে যাওয়া
পংক্তি থেকে আবার ফিরে ফিরে আসে বাউলানির পদছাপ, বুকে গৃহ নেই, বারান্দা
শুধু , গ্রীষ্মে ঝরে যাওয়া মল্লিকার স্তুপ ।
পিতা ও কন্যা
পিতার অবশিষ্ট শরীর নিয়ে তৈরি হয় কন্যার দেহ
মেয়েটির শ্লোকসম হাতের স্পর্শ পিতার কপালে
বহু আলোকবর্ষ পেরিয়ে আসা এই সম্পর্ক
অন্তহীন,
মা এখানে ছায়ার মতো , জমায় মাংস ও পলিমাটি , বন্দরের সামান্য আশ্বাস ।
মেয়ে পিতার প্রার্থনা,
পাপহীন আত্মস্বর, সামান্যই বুঝেছে কোনো পিতা আর তার মেয়ে ….