
পৌলমী গুহ-র কবিতা
ঈশ্বর, দ্রোহ ও অমীমাংসিত আলাপ
১
রক্ত এসে ঘা মারে শাসকের দরজায়।
ফিসফিসে ভরে ওঠে চেনা গলি
ঘুমোয় না তরুণচোখ।
স্বপ্নে দেখে প্রিয়বন্ধুর শব
ওরা ঘুমোবে না বহু বহুদিন।
লাশ ঘাই মারে।
জমিন থেকে আকাশে কারা যেন বিষ
আর অবিশ্বাস ছড়াতে যায়
মা বসে থাকে ভাত আগলে
অবিশ্বাস কাফনের কোনা ধরে
স্বপ্নের দিকে হেঁটে যায়। একা।
আমাদের সহনশীল শিরদাঁড়া নুইয়ে
কাব্য করি। আর্তনাদ আর সাইরেন
আমাদের মুগ্ধ প্রতিবাদে থাকে স্রেফ
খবরের কাগজ দিয়ে মুছে নিই রক্ত।
আমাদের ব্যর্থ শিরদাঁড়া আজানুলম্বিত
শাসকের প্রতি আজ্ঞাবহ।
এর বেশি প্রতিবাদ পোষাবে না হে!
তবু রক্ত এসে ঘা মারে
কানের পর্দা ছিঁড়ে যায় শঙ্কিত সাইরেনে
মায়েরা বসে থাকে ঠায়
যদি কেউ ফেরে।
২
আমাদের স্বপ্নের আঙিনা জুড়ে ছুটে চলে আততায়ী
জ্বলে ওঠে আগুন।
জ্বলে সংসার।
রাজপথে যারা হেঁটেছিল গতকাল, আজ কবরে শুয়েছে তারা।
কাল ফের বদলাবে মুখ।
আমাদের জ্বলন্ত আকাশে ওড়ে মৃত্যুর শমন যত
তার রঙ খুঁজে ফিরি
বৃথা এ পাপক্ষালন
তুমি কি বোঝোনি এততেও
স্বাধীনতা ও বিপ্লব
গাঢ় লাল হয়?
৩
আমাদের রাজরক্তের মহিমাকীর্তন গেয়ে যায় কারা যেন
আমাদের হাতে কবেকার মুক্তির এঁটো মেখে
আমরা পড়শির কানাভাঙা হাঁড়ি দরদাম করে যাই।
আমাদের সাইরেনে আপত্তি নেই
বোধহয় মৃত্যুর পর আমাদের অবিশ্বাসী চোখ খুলে যাবে
দেখব ঈশ্বর আর আল্লা এক পেয়ালায়
আসবে চুমুক দিচ্ছেন অনায়াস!
৪
গুলিতে ভয় পায় না
বুক পেতে দেয় রাষ্ট্রের সামনে
এরা কোন সন্তান?
দ্রোহ ও ধ্বংসে গান গায় স্রেফ
হাসিমুখে ডেকে আনে মৃত্যু
কারা ছিল এমন?
গীতা উল্টোই আমরা
কোরানে আঁতিপাতি খুঁজি
নাম মেলে না তবুও
রাস্তায় কারা যেন ছুটে গেল
কারা যেন বলে উঠল
“আরও ক’হাজার লিটার রক্ত?”
আমরা পাতা উল্টে কাটাই দ্রোহকাল।
৫
আমাদের বৃদ্ধ শিরদাঁড়া বারবার ঝুঁকে পড়ে
আমাদের গলা-বুক ভরে ওঠে শুকনো বালিতে
শাসকের দিকে যে চোখ মেলে দিই
তাতে থাকে না রোষ, ক্ষোভ, ক্রোধের ন্যূনতম
মরা মাছের মতো দৃষ্টি নিয়ে আমরা হেঁটে যাই
আর ভাবি কাল বিপ্লবের দিন আসবে।
৬
পতাকায় পতাকায় ছয়লাপ হয় দেশ
নাগরিকসুখ ছিন্ন করে ছুটে যায় কারা
আরামের চা চলকে পড়ে খবরের ওপর
স্বজনের লাশ ঢেকে দেয় সংবাদ।
আরও পতাকা, আরও সংবাদ, আরও দেশপ্রেম
ভাগশেষে খালি দ্বেষ পাওয়া হয়।
৭
না না, যে ভাষায় কেঁদেছি আজন্ম
তার ঋণ শোধ হবে একালেই
সহজ নয় বলে দাঁড়িপাল্লায় মাপি
দেখি হিজাব ও ঘোমটার ঘের
দেখি নাজিব ও মাইকেল কতদূর
দেখি রক্তের আঁশটে গন্ধ পৌঁছোয় কিনা
স্বর্গ না বেহেস্ত প্রিয়?
যে ভাষায় আর্তনাদ ছিল
তার রঙ কী?
পৌলমী গুহ ,ভালোবাসা নিও। অসাধারণ লেখনের হাত। হৃদয়বিদারক। তাতেও চোখ ফুটবে না বোধহয় । মৃত্যু পর্যন্ত অপেক্ষা। ভালো থেকো কবি।