
শ্যামাশীষ জানা-র কবিতাগুচ্ছ
হ্রদের স্বপ্ন
মেঘের শাড়ি পরা নারীর দেশ
পাতায় বুক ভরা সেসব দেশ,
আগুন চোখে ভরা বনের পথ
ভেতরে ঢুকতে চায় সেসব পথ
হিংস্র দাঁতনখ চারপাশে ঘিরে ধরে
তারা কী চায়? আর কতখানি নামতে চায়?
আঁচড়ে-কামড়ে খেতে চায় বিশ্বাসের উর্জা
প্রথমে সমস্ত মেঘ সরিয়ে নিল,
পাতাগুলো নির্লজ্জ ছিঁড়ে বিছিয়ে দিল-
পথের দুপাশে শস্যক্ষেতের বুকের উপর…
এই উল্লাস ও অনাচারের আয়োজন লজ্জা বয়ে আনে
তবু অপমানিত চামড়াতে কোনো ক্রন্দন নেই
বেদনার প্রতি সহানুভূতির বুদবুদ নেই
এদিকে স্তোত্রপাঠ চলতে থাকে অবিরত
কুব্জ মেরুদণ্ডের পুতুলরা সদা নৃত্যরত
এত অকল্যাণ, আলোর ঝলকানি
এত মৃত্যুর সুড়ঙ্গ, যে ঘুম নেমে আসে…
ঘুমের মধ্যে দেখি এক হ্রদের স্বপ্ন
ষড়যন্ত্র, ছলনা, বস্ত্রহরণ, কুরুক্ষেত্র
তারপর অন্ধকারে শ্বাসবন্ধ করে
জলের ভেতর দুর্যোধনদের আত্মগোপন!
কিভাবে পাই এ হ্রদের সঠিক তলদেশ?
থুতু
এত থুতু ছিটকে পড়ে চারিদিকে
বিধ্বস্ত কথাবার্তারা ঘিরে ধরে সন্দেহের মত
অবদমনের ডানায় চড়ে উড়ে যাই দুজন
আমার ভেতর জন্ম নিচ্ছে তোমার শয়তানি
তোমার ভেতর লজ্জাহীন জন্ম নিচ্ছি উন্মাদ আমি
স্বপ্নের ভেতর এত মাছি এত ভনভন
বাস্তবের উপর এত থুতু এত অন্ধকার
এই অন্ধকার ঢাকতে চাই
কপালশিরাগুলি ফেটে গিয়ে
এক মিথ্যে সুখী আলো জাগাতে চায়
তবুও কি সমস্ত অন্ধকার লুকিয়ে ফেলা যায়?
একাকী ঈশ্বরেরা
আমার কথায় তালি দাও, তালি
আমার ভাবনায় হাওয়া দাও, হাওয়া
আমার অবস্থান জুড়ে নৃত্য করো, নৃত্য
আমার ইতিহাসের বুকে খনন করো, খনন
আমায় করো আরও সৌখিন অপমান, সৌখিন
এভাবেই আমরা পরস্পরকে সাজিয়ে তুলছি
যাপনচিত্র আঁকছি দেওয়ালে দেওয়ালে
অগভীরতার উৎসবে ছড়িয়ে দিচ্ছি বিভ্রান্তি ও চমক
একে অপরের হাতে যত্নে রেখেছি স্থলপদ্ম ভীষণ আধুনিক
চারপাশের অদৃশ্য দেওয়ালগুলির পেছনে
আমরা গড়ে তুলছি এক একটি নিজস্ব বৃত্ত,
এই অলীক বৃত্তের ভেতর একে অপরের পিঠ চাপড়ে দিই
সুড়সুড়ি দিই, বন্ধু সেজে পরস্পরের উপর ঠাণ্ডা চোখ রাখি।
এই অদৃশ্য দেওয়ালগুলিকে ভাঙতে চেয়ে
উদ্দালক, নচিকেতা ও তথাগত হয়ে গেছেন-
গল্পকথার চরিত্র কিংবা শোকেসের সাজানো মূর্তি
অজান্তে মিশে যায় সত্য, মিথ্যা, গুজব ও মিথ
এইসব সংশয় মাথার ভেতর ভীড় করে আসে
আবার ফ্যাত-ফ্যাত করে তারা উড়ে যায় এদিক ওদিক
চোখ থেকে বহমান রক্তস্রোত তোমাকে স্পর্শ করে না
ভাবনারা আর জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে চায় না
কারণ, আমরা এখন হতে চাইছি ঈশ্বরের মতই একাকী।
বাজার নির্দেশিত
আমার কোনো খিদে নেই, আলো নেই, ক্ষোভ নেই
বোধের কোনো বিস্তার নেই, আদর্শ নেই, প্রতিবাদ নেই
এক বিচ্ছিন্ন মহাদেশ বুকে নিয়ে নীরবতার দিকে হেঁটে যাই
মায়াঘুম, নৈঃশব্দ্য
ছেয়ে থাকে,পক্ষীর
রাজনৈতিক ডানারা
অদৃশ্য ঝাপটায়
মিথ্যে উড়ে যাওয়া তারপর ধরা দাও বিশ্বজোড়া পাতা ফাঁদ
কে যে কাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে অবিরত
এসব ব্যবস্থা বুঝে ফেলতে গিয়ে শিহরিত হয়ে দেখি
নীতিপুলিশের শীতলচক্ষু
ক্ষমতার অদৃশ্য হাত
দখলদারি, উন্মাদনা
আর বাজার, মায়াবাজার

