
সায়ন্তনী ভট্টাচার্য -র কবিতাগুচ্ছ
সাইবেরিয়ার কবিতা
রাত একটা ঊনচল্লিশ, কবিতা পোড়ানোর অনবদ্য সময়। যা বোঝো না, তা নিয়ে কথা বোলো না। পোড়া জিনিসের নাম দেবো হিমশীতল, তার কুলুঙ্গিতে প্রদীপ জ্বালাবো, শীত এলে তাপ নেবো। ফুরিয়ে যাওয়া ফ্রক পরে যে কোনো রাস্তায়, যে কোনো খসা দেয়ালের বিপজ্জনক বাড়ির জানালার বাইরে যাবো। গরাদ সরিয়ে ছেড়ে দেবো জীবিত শরীর, দৃশ্যমান রূপকথা টেনে এনে উঠিয়ে দেবো পুরনো ট্রামে। সে কেঁদে বলবে বাণিজ্য হোক, নাহলে বাতিল, বাণিজ্য হোক, নাহলে বাতিল। আমার কবিতাও বাতিল। বাতিল আর চাঁদের ফকফকা আলো। সে হাত পুড়িয়ে ফেলল কবিতায়, নাও এবার ভাবো কী করবে!
২২-০৫-২০২৫
আমার আর হওয়া হল না কু-কথা। সমীরণে আধো অন্ধকার। শেষে পায়ের ব্যথায় কিছুদূর গিয়ে দেখি দোকানপাট বন্ধ আজও। তবে কে করবে রুটি বিক্রি? আর ধুম জল, ঝুম চাষ। চাষাবাদে প্লাবিত জমির কাছে বাঁধনে ভেসেছে তারা, যা যা চোখে পড়লে পথঘাটে বিশ্বাস হয়, কেঁদে ফেলে জটিল-পাখি, হোমগার্ড পাহারায় বসে। শেষে তোমার স্তব্ধতা ঘুরে ফিরে আসে গৃহস্থ বাংলায়, বিশ্রাম নেয়। জন্ম জন্ম দরজা খোলে, দরজা বন্ধ করে। এছাড়া কাজ মানে খিদের দিনের সব রুটি-সব্জি হাপিশ করে দেওয়া। সম্ভবত আকাশে উঠেছে তারা, ঢিল ছুঁড়ে টেনে আনবে চুমু। তাতে হবে না কিছুই। কখনোই কিছুই হয় না।
২৩-০৬-২৫
আমি লিখছি আর মরে যাচ্ছি। অপেক্ষা করে কী হবে? মরে যেতে চাইলে মরে যাওয়া ভালো। বাঁচার জন্য যদিও লাফাই। লংজাম্প, হাইজাম্প। জাহাজে জাহাজ ঠেকে, গভীর সাগর সহ বাতিঘর। ঠিক যা যা মনে এলে শেষে ভুলভ্রান্তি হয়। বোধহয় শীতকাল, কুয়াশা পড়েছে। মস ও ফার্ণের দিন কখন, কোথায়? কালশিটে এ’বছর হাঁফিয়ে পড়েছে। দিগন্তে ঘা-এর রং সবুজ। আষাঢ়ের শেষ বাড়িটির কুয়োতলা ফাঁকা। স্নান সেরে চলে গেছে ওবেলা। দেখেওনি মুখ। অস্ফুটে গড়িয়ে পড়ছে বীজ, উর্বর জমির গায়ে ক্লান্ত ফসল। এসবের অর্থ নেই কিছু। শেষে কবিতার মতো ধূ-ধূ মনে হয়।
২৩-০৬-২৫
নিজেকে অসহ্য লাগে, বানানো বোধের মতো মনে হয়। ঘুম ভেঙে টের পাই বেঁচে আছে সবাই। বেঁচে থাকেও না কোনও কোনওদিন। আর অসামান্য যা কিছু আমাকে নিয়ে যায়, যেখানে অনেকদূর, বিধিবদ্ধ পাপ আর বহু চাঁদ পেরোলে নরক। ঘুম নেই, নেই ঘুম খিদে, অশ্রু-টশ্রু, ফুলের বাগিচা, আস্তাবলে টিকিট চেকার, দেখে নিচ্ছে কার কত ধুলো। সোফায় বসবে, মেঝে নোংরা না হয়। বিস্মিত হওয়ার মতো আলো। এই নিয়ে বেঁচে ভেঙে ছড়িয়ে দিয়েছে, নিজে নিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজে নিজে নষ্ট হওয়া হ্যান্ডমেড কাগজের জলরঙে আঁকা। ময়দানে বসেছিল, মেঘ ধরে রেখেছিল তুলিতে আর ভিড়ের মাঝে এক ধূ-ধূ জনপদ।
২৪-০৬-২৫
ভালোবেসে ফেলার কথায় আমাদের ঢালাই রাস্তায় খানাখন্দ হয়, জল জমে। চাল ধোয়া জলের মতো রং। নুন নেই। দেখে-টেখে বোঝা গেল এই জলে পৃথিবীর তিনভাগ হু-হু করে, এক ভাগ কেঁপে ওঠে। কারোর কিছু আসে যায় না, ভালোবাসা মাচুপিচু ভ্রমণ করে, পিয়ানোর সুরের মতো শান্ত মনে হয়। দুর্বিষহ হয়েছে কিছু আকাশ-বাতাস আর মেঘে মেঘে জীবন চৌকো হতে চায়। বেরোনো যায় না। অন্ধকারের অমীমাংসিত সকাল। লিখে রাখা যায় এইসব ব্যর্থ সাঁতার আর কবে চোখে চোখ পড়েছিল।
২৪-০৬-২৫