
সুমন ঘোষের কবিতাগুচ্ছ
১.
আহ্বান
নেমে এসো আমার উপর
আমি প্রস্তুত
যদি ভাসিয়ে দিতে না পারো
ফিরে যাও
এমন আহ্বান শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিল দেবলোক।
ভাঁড়ার উপুড় হলে হোক
দীনতা প্রকাশ পেলে পাক
কোল পেতে বসে আছেন দেবী
তাঁর আঁচলের রন্ধ্রভেদ একমাত্র লক্ষ্য হোক
উন্মাদ মেঘ!
উন্মাদ মেঘ নেমে এল
আহ্লাদে উন্মুক্ত হল ধরা।
২.
উপচার
একটা বিকেল
গড়িয়ে যেতে যেতে আটকে গেল
তোমার ভিজে যাওয়া হাওয়ায়
শরীর
গ্রীষ্মে পুড়ে গেলে কষ্ট
শীতে শুকিয়ে গেলে কষ্ট
এমন বিকেলে
কালো চৌচির চামড়া লেপ্টে নেয় সবুজ তৃণের উপচার
চাকায় আগল দিয়ে তখন
গোধূলিকে ঠেলে রাখে রাখাল।
৩.
স্টেশন
আসুন, ভিজিয়ে দিই
জানলা বন্ধ না-রেখে পায়রাকে দিয়ে দিন ধান
দেখুন খুঁটে খুঁটে খাবে
ছড়াবে না
যার খিদে আছে তাকে দিন
যার নেই তাকে কেন?
এ-কেমন তৃপ্তিবোধে ঢেকে রেখেছ হৃদয়
খুলে দাও
সরি ! খুলে দিন
তুমি-তে ওঠার পশলা স্টেশনে এসেছে।
৪.
খবর
রেইনগজে বন্দি বৃষ্টির ফোঁটা
এ-খবর ছড়িয়ে পড়েছে জোর
আছড়ে পড়ার আর মজা নেই,
জেনে গেছে তারা –
অভিমান ছেঁকে নিলে পড়ে থাকে বিস্বাদ জল।
৫.
পরিসর
নিয়ন্ত্রণের বাইরে যা-কিছু
তাকে ছুঁতে-চাওয়া রেখা
রয়েছে কপালে,
জেগে থাকো –
কাপালিক বলেছে তোমাকে।
বলেনি-তো, উড়ে-আসা মেঘ আর জানলা-বাতাস
কতবার জুড়ে দেবে ঘুমহীন পাতা এই পরিসরে।
৬.
দান
মেঘেরা দিচ্ছে দান
আমিও দিয়েছি তাই
খড়ের চালা থেকে টিনের চালে
লালমাটি থেকে পিচ-ঢালা পথে
কে দেবে বেশি; ক্ষমতা বেশি আছে কার?
গুটি তো শকুনি মামার ।
তবে, খেলা শেষ হলে
আমি বর্ষার হয়ে যাব
কিংবা বর্ষা আমার ।
৭.
ক্লিক
‘ শোক ‘ প্রকাশের কৌশল রপ্ত হয়েছে
‘ রিপ ‘ করলেই ফসল
বছরভর বৃষ্টি থাকে না, তাই
‘ আহা ‘, ‘ উউফ্ ‘ দিয়ে চাষ চালু রাখা আছে
একটা ক্লিক!
একটা ক্লিকে জমি জলে ভেসে যাবে ।
৮.
জানলা যতটা খোলা
কদম গাছটিতে পাতার বাহার
এলোমেলো কাশফুলগুলো শীর্ণ
ওরা দেখছে না কেউ, নির্বিকার
দেখছে না নেমে আসা মেঘের দলও
আমি ততটাই দেখি
যতটা খোলা-রাখা জানলা
আমার হাতে কে ধরিয়ে দিয়েছে দাঁড়িপাল্লা
কোথায় রয়েছে মানে…
কে পেল আলো
কার দিকে ভারী হল অন্ধকার
বর্ষা ভালোই জানে…
ওই কাশ আর কদমের বনে তার অবারিত দ্বার।
৯.
তোমার কাছে
কিচ্ছু না, শুধু ছুটি
বসে-থাকা থেকে ছুটি
রোদ থেকে গুটি গুটি হেঁটে
শুধু-জল থেকে ছুটি
শুধু – হেঁটে – যাওয়া থেকে
শুধু – ছুটে – যাওয়া থেকে
জীবন থেকে জীবনের দিকে
ছুটে যেতে চেয়ে তোমার কাছে
চেয়েছি অল্প ছুটি ।