
সুদেষ্ণা মৈত্র-র কবিতাগুচ্ছ
অসুখ
কী বিবর্ণতায় হাঁটে চোখ
যেন কোনোখানে নেই কিছু ধুলোরও আস্ফালন
সারি সারি বড়ো মেঘ-মাথাভর্তি লোক চলে যায়।
কাকে ডেকে নামাবো পসার?
আমার এ মাংসের ঝুলি, মৃত কোষ,
ঝাপটানো ডানা, প্রাণের পরেও থাকা
ঝুটোপুটি প্রাণ
ওটুকু দেখিয়ে যা কেনাবেচা,
এমন অভাব, রোদের ঢালেও বসে
অসুখের কথা বলে নবদম্পতি
এই গোলযোগ, পেরিয়ে দূরের নদী মিঠি চলে যায়
কুয়াশায় যাব?
সেখানে ব্যবসা নয়, চোরাবালি ওঁৎ পেতে বসে,
কোথায় হারাবো?
নদী তুমি জল দিতে জানো?
বিবর্ণ সানাই ভেজা জল?
মিউজিয়াম
একটা শহর থেকে ক্রমাগত সরে আসতে আসতে জেনেছি প্রত্নতত্ত্ব আসলে এক প্রেতাত্মা। টানেলের পর টানেল পেরিয়ে পৌঁছে যায় মৃত মহাদেশের গভীরে। হাড়ের সাম্রাজ্যে প্রমাণচিহ্ন কিছু খুলির আকার। নিজেরই ভিতর সাজিয়ে রাখা ভিন্ন সব খুলির মিউজিয়ামে নবাগত আমি। শহর থেকে সরে যেতে যেতে মনে হয় কার কাছে যাব? খুঁড়তে খুঁড়তে জলের কথা কেউ বলে না। কৃষিকাজের জমি আর গোলাঘরের মধ্যে আর কোনো ধান বেঁচে নেই।
অঝোর
যে তোমায় অন্তিম দেবে
সে এখনো ফোটেনি আঙুলে
জলের মাহাত্ম্য বোঝো,
তাই তুমি গড়ানোর আগে
মাপ চিনে দাঁড়িয়েছো, স্থির
তবু তো দুঃখ ঝরে,
পড়ে থাকে বিষণ্ণ পালক
সে কেমন নদী ডাকে,
সে কেমন ঠোঁটে রাখে
শীর্ণ পায়েস,
জন্মের আগে-পরে জল লেগে যায়।
অবুঝ
এত কেন মিথ্যে লিখেছো?
এত তুমি খিদেয় অবশ?
ভরপুর মহীরূহ ছেড়ে, এসেছো বৃষ্টি,
নিতে খোঁজ?
কবে থেকে জন্মলোভে বসে একেকটি শাবক
অধরা
নিম্নগামী অতর্কিত প্রেম, তুমি বুঝি তৃষ্ণামাত্র?
ধুলো?
ছুঁয়ে দিলে আঘাত বোঝো না, বোঝো না
পাখার নীলে ক্ষত
নীড়ের আবর্ত খুলে গেলে,
আকাশই তো একমাত্র মন
উড়ে যাও।
জাগগান
শরীর তো মৃত নদী,
আসলে নগ্ন হই জুঁইফুল দেখে।
এ চোখে অতৃপ্ত রোদ পরিযায়ী হলে বুঝি
শীতকাল এলো।
ভাঙনে রপ্ত জিভ,
ঠোঁট, ত্বক, গ্রীবা
তুমি তাকে ঠেলে কোনো সরোদ বাজাও।
অভিশাপ গলে যায়
অতঃপর জল তৈরি হয়।
শরীর এভাবে জাগে।
মনকে শেখাও মেঘ, ঝড়ের আবেগ।
ভাগ
থামিয়ে বাতিল বলে দিও
তোমার বিবর্ণ-দান মৌতাত
খালি করে দেয়
এতটা অভাব শুধু রহস্য ভারী করে তোলে
এরা, এরা ভুলের ফসল
ওরা সব নামহীন পাতা
কোনখানে ফোটাও কমল?
বিধুর দেবতা
আঙুলে জড়ানো থাকে পুরনো রাংতা
খেলে নদী
থামিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাও
জল থেকে তুলে নাও নুন
তোমার ভাগের।
স্বেচ্ছাচারী
তুমুল স্বভাবদগ্ধ, অনুপ্রবেশেও জ্বালাময়
ওরকম চরম হৃদয় ভাড়া করে রাখা যায়
গুণ্ডামি-যাপিত জীবনে
ঝুঁকে পড়া অশ্রুমুখী, তোমার কাতর স্বরে ঘোরে
বিভিন্ন প্রজাতি সুখ, উষ্ণ রঙ, একা মরুভূমি
পোড়ানো খেলছো যত, তত গাঢ় হচ্ছে আসন
বসাবো নিজের রূপে, তুমি চাইলে ভাবমূর্তি
ভেঙে ফেলে দিও।
চিঠি
সুধী,
ইচ্ছেতরঙ্গিনী,
কার তরে নৌকো ভাসাও?
শিলান্যাস শেষ করে গহ্বরে যে জন
শাবক, সেও কি ভ্রমণ ফেলে ছুটে আসে
নিম্ন মোহনায়?
তুমি রূপ, তুমি কল্প, অল্প যন্ত্রণা দিলে,
আঙুল বুলোই
নিচে তাপে মগ্ন ক্ষত, জল পেলে সারবে শ্রীধর?
স্থলে রাখা বিষবাক্য, অস্ফুট দলিত কবজ
আর্তমুখ মাটি ছেড়ে দেখে চেয়ে প্রবাহবিলীন
সহজেই নেমে যাব? শিশুকাল কেটে যাবে ছুঁয়ে?
শিলায় জরৎকারু শাপস্তব্ধ,
মুক্ত করো খিদে।