সুবর্ণরেখার তীরে <br /> চতুর্দশ ও পঞ্চদশ পর্ব <br /> ছন্দা বিশ্বাস

সুবর্ণরেখার তীরে
চতুর্দশ ও পঞ্চদশ পর্ব
ছন্দা বিশ্বাস

চতুর্দশ পর্ব

একুশ

রাজকন্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ

রাজকন্যা মানসিক ভাবে প্রস্তুত বিয়ে করলে সে এই আগন্তুককেই করবে। কিন্তু পিতাকে কে জানাবে তার এই সিদ্ধান্তের কথা। তিনি জানতে পারলে তাঁর কি প্রতিক্রিয়া হবে সেটাই ভাবনার বিষয়।
মেঘমালা বললে, কিন্তু সখী আমারও না দুর্ভাবনা হচ্ছে।
মেঘমালাকে বেশ বিচলিত দেখাচ্ছে।
সখি, কী সেই ভাবনা শুনি যা তোকে এমন বিচলিত করে তুলল?
ভাবছি, মহারাজ কি এই বিয়ে মেনে নেবেন? যদি মেনে না নেন সেক্ষেত্রে কী করা উচিত হবে।
বুঝতে পারছি না সখি, কিছু ভাবতে পারছি না। আগন্তুককে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না রে।
এই কথাটাই সারাটারাত ভাবিয়ে তুলল চিত্রলেখাকে।
চিন্তা করতে করতে প্রহরের পর প্রহর অতিক্রান্ত হলো।
পশ্চিমের চাঁদ পূবে ঢলে পড়ল। রাতচরা পাখিদের ডানার শব্দ স্তিমিত হল। বাদুরেরা নিরাপদ আস্তানায় ঢুকে পড়ল। জঙ্গলের জানোয়ারদের পদচারণা শ্লথ হল। তারা অরণ্যে কোলে আশ্রয় নিল।
ভোরের পাখিরা ঘুম থেকে উঠে কলরব করতে লাগল।
রাজকন্যা দুটি চোখের পাতা বন্ধ করতে ভুলে গেল।
চিন্তায় চিন্তায় আকাশ ছুঁতে চলেছে তবু রাজকন্যা বুঝতে পারল না কী উপায়ে পিতার কাছে এই প্রস্তাব সে পেশ করবে।
ভিন দেশি আগন্তুক, যার না আছে সত্যি কোনো পরিচয়, না তার চরিত্র সম্মন্ধে কিছু জানা গেছে।
কে বলতে পারে সে তস্কর, না কোনো অপরাধী। দেশ থেকে বিতারিত রাজদ্রোহী কিনা।
শাস্তির ভয়ে পালিয়ে হয়তো বা এদিকে চলে এসেছে।
এমনিতে তাকে দেখতে শুনতে বেশ ভাল, বুদ্ধিমান, একজন গুণী শিল্পী বলেই মনে হচ্ছে।
তার আঁকা ছবি সে দেখেছে। এমন চিত্র যে আঁকতে পারে তার সব দোষ কি মহারাজ মার্জনা করবেন না?
কিন্তু সে যা চিন্তা করছে সেই একই দুশ্চিন্তা সখীরও।
কথাটা প্রিয় সখীর মুখ থেকে শুনে রাজকন্যার কপালে ভাঁজ আরো দৃঢ় হল।
বুকের ভিতরে মহা সাগরের উতরোল ঢেউ। কী হয়, কি হয়! কী জানি কি হয়!
সত্যি যদি তেমন কিছু হয়?
কূল- শীল- জাত না জেনে এমন এক আগন্তুকের সঙ্গে কি আর তার পিতা বিবাহ দিতে স্বীকৃত হবেন?
পিতা তো বলবেন, সত্যি তো সে তস্কর, ঠগ না প্রবঞ্চক নাকি অন্য রাজ্য থেকে বিতারিত হয়ে এদিকে চলে এসেছে কিছুই তার সম্মন্ধে জানা নেই। এমন একজন আগন্তুকের সঙ্গে কি ভাবে আমার একমাত্র কন্যাকে বিবাহ দেই?
শুধু পিতা নন, যে শুনবে সেই একথা বলবে।
আর মাতা কী বলবেন?
পরিবারের অন্য বয়ঃজ্যেষ্ঠরাই বা কী বলবেন?
এ জাতীয় চিন্তায় সে আরো ব্যাকুল হয়ে পড়ল।

একদিকে পরিবারের মান রক্ষা অন্যদিকে সোমের প্রতি বিরহ দুই টানাপোড়েনে রাজকন্যা দ্বিধাদীর্ণ হয়ে পড়ল। এই সময়ে আবার সখী মেঘমালা কাছে নেই। যার সঙ্গে দুটি কথা কইলে প্রাণ জুড়ায়।
সে কঠিন পরিস্থিতির কোনো সমাধান করতে পারত কিনা সেটা বুঝতে পারছে না। অথচ সোমের সঙ্গে দেখা করার জন্যে সে দারুণ বিচলিত হয়ে পড়েছে। ক্ষণে ক্ষণে চোখ জলে ভরে উঠছে। শরীরে মনে কি এক অস্থিরতা যা এর আগে সে অনুভব করেনি। বারে বারে সাজ আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখছে আর যুবকের ছবি বুকে চেপে ধরছে। তার মুখে চুম্বন এঁকে দিচ্ছে।
চোখের জলে চিবুক ভেসে যাচ্ছে। ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো ত্রিকালেশ্বরের ফটোটার দিকে চেয়ে আকুল হয়ে বলছে, হে দেবাদিদেব তুমিই বলো আমাদের এই ভালোবাসার সম্পর্ক কি মিথ্যা হয়ে যাবে? যুবক কে তার সত্যিকারের পরিচয় কী আমাকে জানতে দাও।
তুমি যেটা ভাল হয় তাই কোরো প্রভু। তুমি তো আমার মনের কথা সব পড়তে পারছ। আমি যে এই বিরহ জ্বালা আর সইতে পারছি না।
আমার মতোই সেও কি এমন কষ্ট পাচ্ছে?
আমি কিছুই জানতে পারছি না। প্রভু এমন কঠিন হৃদয় তোমার কি করে হল? তুমি নাকি অনাথের নাথ, অকূলপাথারে যে পড়ে থাকে তাকে তীরের খোঁজ দেখাও। তুমিই অগতির গতি, আমার মনের কথা কি শুনতে পাচ্ছ না?
সেদিন সে মনে মনে তাদের কূলবিগ্রহ দেবী কিংকিণীর শরণাপণ্ণ হল। চোখ বন্ধ করে সে ডাকল দেবীকে।

হে মাতা আমার কথা শোনো, একবার…

বাকি রাত রাজকন্যার কিছুতেই ঘুম এল না। শয্যা ছেড়ে শয়ন কক্ষের গবাক্ষ খুলে দিল। পূবের আকাশে একটু একটু আলোর পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘরের ভিতরে অস্থির পদচারণা করতে লাগল।
ফের শয্যায় এসে শুয়ে পড়ল। শরীর আর পারছে না। টলছে যেন।
ভোরের দিকে সামান্য চোখ মুদে এসেছে। তার ভিতরে দেখতে পেল, এক পাগলী চুপিসারে রাজকন্যার মহলে ঢুকে পড়ল।
ঢুকেই সে রাজকন্যার শয়ন কক্ষের দ্বার বন্ধ করে দিল।
পাগলীর মুখ দেখে রাজকন্যা চিত্রলেখা ভয় পেল। তার বিশাল লম্বা জটা, মুখে কালি ঝুলি মাখা, গলায় হাবিজাবি রঙ্গীন পাথরের মালা। চুলে শুকনো পাতা জঞ্জাল ছড়ানো। পরিধানে জীর্ণ মলিন ছিন্ন বসন। আঁচল লুটাচ্ছে মাটিতে। শরীরের উর্ধাংশে নানা কাপড়ের টুকরো দিয়ে জোড়া তাপ্পি দেওয়া কাচুলি মতো পরা।
চিত্রলেখা চমকে উঠে বলল, এ কী, কে ঢুকতে দিয়েছে তোমাকে এখানে?
যাও, এক্ষুণি বেরিয়ে যাও,-
এই কে কোথায় আছিস,-
এ কথা শুনে পাগলি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
সেই হাসি রাজকন্যার বিশাল শয়ন কক্ষের দেওয়ালে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে এল।
রাজকন্যা ভয়ে কক্ষের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। তার কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা। আর পাগলি দাঁড়িয়ে আছে কক্ষ দ্বারের ঠিক সামনে।
রাজকন্যা ভয় ব্যাকুল কন্ঠে বলল, কে কে তুমি? কী চাও বলো?
পাগলি আবার সেই অট্টহাস্য করে উঠল। তারপরে বজ্রকঠিন গলায় বলল,আমি কী চাই? আমি যা চাই তা তুমি দিতে পারবে?
ম ম মানে? কী চাও তুমি?
আমি তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
যাবো। সে এক মজার জায়গা।
তবু নামটা বলো?
এত উদ্গ্রীব হলে চলে? বলো যাবে কিনা?
রাজকন্যা চুপ করে আছে দেখে পাগলী আবার চীৎকার করে উঠল, আমি যেখানে যেতে বলবো সেখানে তোমাকে যেতে হবে। পারবে? বলো পারবে?
না, মানে,-
তাহলে কেউ তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না।
কী বলছ তুমি? আমার পক্ষে যার তার সঙ্গে এই প্রাসাদ ছেড়ে বাইরে যাওয়া মুশকিল।
বাইরে রক্ষীরা সব ঘোরাফেরা করছে। আমি যদি চীৎকার করি তারা সকলে চলে আসবে।
পাগলী ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলল, ডাকো, ডেকেই দেখো না। আমি সবাইকে ঘুম পড়িয়ে রেখে এসেছি।
ঘুম পড়িয়ে রেখে এসেছ?
সত্যি?
দেখো,-
রাজকন্যার এবারে সত্যি সত্যি ভীষণ ভয় করতে লাগল। সে তো এই মাত্র চীৎকার করে ডাকল, কই কেউ তো তার ডাকে সাড়া দিল না।
কক্ষের বাইরেই তো রক্ষী আছে।
তাহলে কি সত্যি সত্যি পাগলী কোনো মন্ত্র বলে সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে?
কিছুদিন আগে একজন জটা- জুটধারী সাধু পুরুষ এসেছিলেন তিনি নাকি ত্রিকালজ্ঞ।
রাজার কূলপুরোহিতের কাছে বলে গেছেন খুব শীগগীর এই প্রাসাদে বড়ো রকমের কিছু একটা বিপদ ঘটতে চলেছে। মল্লদেব সাবধানে থাকেন যেন।
কী ঘটতে পারে সেটা পরিষ্কার করে জানান নি।

মল্লরাজ জগৎদেব রাতে শয়ন কক্ষে এসে রানিমাতার কাছে এই কথা বলায় রানিমার কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
বিপদ! কী বিপদ আবার তাদের জন্যে ওৎ পেতে বসে আছে?
রাজকন্যা শুনেছে সে কথা। তাই সে ভয় পাচ্ছে।
তার কথা জড়িয়ে আসছে। ভয়ে ভয়ে বলল, আমাকে কোথায় যেতে হবে?
পাহাড়ের উপরে এক মন্দির আছে সেখানে।
পাহাড়ের উপরে মন্দির? কোন পাহাড়ে?
চিত্রকূট পাহাড়। খুব উঁচু নয়। আবার নীচুও নয়।
আমি কীভাবে যাবো?
কেন ঘোড়ায় চেপে।
ঘোড়ায় চেপে? তাহলে তো সকলে জেনে যাবে।
কেউ জানবে না। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখব।
তুমি ব্যবস্থা করে রাখবে, মানে?
এত মানে মানে কোরো না।
পাগলীর গলার স্বর পূর্বাপেক্ষা আরো কঠিন হল।
রাজকন্যা তুতলিয়ে বলে উঠল, কী আছে সেখানে?
এতো প্রশ্ন নয়। যাবে কিনা এখনও কিন্তু বললে না।
আমি কি করব ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি আমায় আগে বার হতে দাও। তারপরে দেখি কি করা যায়।
না, বাইরে বের হলে আর তোমাকে খুঁজে পাবো না।
পাবে, আমি কথা দিচ্ছি আমি কোত্থাও যাবো না। আমার একজন সহচরী আসার কথা আছে। হয়ত বাইরে সে অপেক্ষা করছে। দ্বার বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারছে না।
না, কেউ কোত্থাও নেই।
ও আসবে বলেছে। ওর সঙ্গে আজ আমার এক জায়গায় যাওয়ার কথা আছে। ওকে বলি যদি আমার সঙ্গে যেতে চায়।
না কেউ যাবে না, শুধু তুমি আর আমি।
সেই মন্দিরে গিয়ে আমি কী করব?
আজ সেখানে বলি হবে।
বলি!
হ্যাঁ, নরবলি। আজ কৌশিকী অমাবস্যা জানিস তো?
আ- আজ অমাবস্যা? কৌশিকী অমাবস্যা!
হ্যাঁ, সেখানে মন্দিরে নরবলি দেওয়া হবে। নর রক্ত চায় দেবী। তাই তোকে যেতে হবে।
আমাকে নিয়ে যেতে এসেছ? আমাকে বলি দেবে মায়ের কাছে।
পাগলী উধাও হয়ে গেছে চোখের পলকে। রাজকন্যা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে নরমুন্ডমালিনী বীভৎস কদাকার এক দেবী।
এই দেবীকেই তো পূজো করে সকলে। তার প্রতিষ্ঠা তো সেই অরণ্যে। অন্ধকার জঙ্গলের ভিতরে তার মন্দির। সামনে পাতা আছে যূপকাষ্ঠ। সেখানে প্রতি কৌশিকী অমাবস্যাতে নরবলি দেওয়া হয়।

এবারে কি তাহলে তাকে বলি দেওয়া হবে?
দেবী নাকি দৈববাণী করেছেন এবারে তার রাজ রক্ত চাই।
রাজবংশের রক্ত পান করে তিনি তৃপ্ত হতে চান।
রাজকন্যা বহুদিন আগে শুনেছিল, একজন ত্রিকালজ্ঞ সাধুপুরুষ এসে জানিয়েছিলেন এই নরবলি প্রথা বন্ধ করতে।
কিন্তু রাজকুলপুরোহিত জানিয়ে দিয়েছেন সেটা সম্ভব নয়, এটা বংশানুক্রমিক ভাবে হয়ে আসছে। প্রতি বছর কৌশিকী অমাবস্যা রাতে দেবী মর্ত্যে আসেন। নিজে হাতে তিনি নর রক্ত পান করে তৃপ্ত হন।
তাই নাকি? এ কী কথা বলছেন আপনি? যিনি পৃথিবীর রক্ষয়র্ত্রী সকল প্রাণী যার সন্তান তুল্য সেই জগৎ মাতা কি কখনও তার সন্তানের রক্ত পানে তৃপ্তি লাভ করে পারেন?
এমন বাসনাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
কখনো যদি তার বাসনা হয় রাজরক্ত পানের, তখন?
পুরোহিত এ কথা শুনে নড়ে চড়ে বসলেন। বল্লেন, কী বলছেন আপনি?
কেন, হতেও তো পারে। দেবী যদি কখন স্বপ্নাদেশ করেন কিম্বা দৈব বাণী শোনান?
কে বলতে পারে একদিন স্বয়ং পুরোহিতকেই না যূপকাষ্ঠে বলি প্রদত্ত হতে হয়।
কে বলতে পারে সবই যদি সেই পাগলিনীর ইচ্ছা হয়।
পাগলিনী?
এই কি সেই পাগলিনী?
রাজকন্যার সর্বাংগ কাঁপতে লাগল।
এবারে সেই পাগলিনী অট্টাহাস্য করে এগিয়ে এল রাজকন্যার দিকে।
রাজকন্যা এক পা এক পা করে যতটা সম্ভব পিছিয়ে গেল কিন্তু এরপরে আর সে পিছনে সরতে পারল না। দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে।
সে নিরুপায় হয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চীৎকার করতে গেলে পাগলী ছুটে এসে তার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল, করো কী? এমন কাজ কেউ করে। লোকে ছুটে আসবে তো?
ক্ ক কে তুমি?

দ্বিতীয়বার চমকে তুতলে উঠল চিত্রলেখা।
পাগলি বলল, কিন্তু তুমি আজ সেখানে না পৌঁছালে তো একজনের চরম সর্বনাশ হয়ে যাবে।
আর তাকে কোনোদিন খুঁজেও পাবে না।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু খুলে বলো।
এরপরে পাগলিনীর মুখ থেকে যা শুনল তাতে তার হাত পা অসাড় হবার উপক্রম হল।
রাজকনায় ভয়ে চীৎকার করে উঠল। সেই শব্দে নিজেরই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
জানালা দিয়ে প্রভাতের প্রথম কিরণ এসে পড়েছে তার শয্যায়।
এটা সত্যি নয়, স্বপ্ন। এটা ভেবে সে যেন একটু স্বস্তি পেল।
পরক্ষণে সত্যিটা ভেবে আবার সে আতংকিত হয়ে পড়ল।
আবার সেই চিন্তা।
বাইরে এসে দেখল সখি মেঘমালা এল কিনা। কাল তো বলে গেল সকাল হলেই চলে আসবে।
নাহ, এই দুঃসহ ভার সে আর বইতে পারছে না।
চিত্রলেখা হাঁটু ভেঙ্গে বারান্দার এক কোণে বসে পড়ল।
মাথাটা চিন্তার ভারে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
সকালের পেলব আলোক রশ্মি তার মাথার উপরে আশীর্বাদ হয়ে পড়ল।

পঞ্চদশ পর্ব

বাইশ

সন্ধ্যায় চিত্রকূট পাহাড়ে

পূর্ব সিংভূম জেলার একদিকে দলমা পাহাড়, বাকী তিন দিক ঘনজঙ্গলে ঘেরা। দুর্গম এক জায়গা।
শাল, শিমূল, মহুয়া, কুল, পলাশ গাছ আর নানা লতাগুল্মে ভরা জঙ্গল। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে সুবর্ণরেখা। বহু দূর থেকে তার কলধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
নদীর তীর ধরে এগিয়ে চলেছে একটি অশ্ব। রাজকন্যা সেই অশ্বের উপরে বসে আছে। অশ্ব চালনা করছে সখী মেঘমালা। নিস্তব্ধ বনভুমি। ঘোড়ার খুর পাথুরে পথে আওয়াজ তুলছে। সেই আওয়াজ বড় বেশী করে কানে বাজছে।
সরু একখানি পায়ে চলা পথ নীচ থেকে ক্রমে উপরের দিকে উঠে গেছে। দূরে ঢেউ খেলান দলমা পাহাড়। তার নীচেয় আছে এক জলাশয়। জলাশয় অতিক্রম করলে পাহাড়ের ভিতরে অনেক উপর থেকে গড়িয়ে পড়ছে ধারাগিরি জলধারা।
এখন ভরা ভাদ্র। বাতাস জলীয়বাষ্পপূর্ণ। জলদ গম্ভীর মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। শ্রাবণের ধারায় বন জঙ্গল চীর সবুজ। দুর্ভেদ্য এবং ঘন। বনের ভিতর দিয়ে চলাচলের পথঘাট পিচ্ছিল এবং পথের দুইধারে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা এবং পত্রাবলীতে পথ যেন আটকে রেখেছে। ডাল পালা সরিয়ে তবে পথ চলতে হয়। স্থানীয় মানুষেরা তাই এ পথে চলতে গেলে কাটারি, লাঠি নিয়ে পথে বের হয় এই সময়।
কারণ এ পথে জন্তু জানয়ারের থেকেও বিপজ্জনক হল ভয়ংকর সব বিষাক্ত সাপ। বর্ষায় সাপের উপদ্রব ভয়ানক রকম ভাবে বেড়ে যায় আর জঙ্গল পরিষ্কার করতে হয় পথ চলার জন্যে।
আদিবাসী ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের হাতে পর্যন্ত কাটারি এবং লাঠি ধরা থাকে। এরা জানে কোথায় সাপের গর্ত আছে। কখন সাপে শংখ লাগতে দেখেছে। দেখেছে শত শত সাপ জড়াজড়ি করে পড়ে থাকতে। আদিবাসী সমাজে তুক তাক ঝাড়ফুঁক চলে সাপে কাটলে। তার মাতামহ মাতামহীরা জানে কোন সাপে কাটলে কোন গাছের শিকড়ে বিষ নামান যায়।
মেঘমালা এদের সন্তান এসব অঞ্চল তার চেনা। তাই সে আগেই বড়ো একটা দা এবং শক্তপোক্ত লাঠি নিয়ে চলে এসেছে।
আজ ঘোর অমাবস্যা। চারিদিক ঘন অন্ধকারে ব্যপ্ত হয়ে আছে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পথ চলতে চলতে ঝিল্লীর রব আর রাতচরা পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না।
রাজকন্যার ভয়ের উদ্রেক হল। সে চলতে চলতে কত বার না বলেছে, আর কতদূর?
ভয়ার্ত তার কন্ঠস্বর।
বহুদূরে শৃগালের ডাক শোনা গেল। তাদের সম্মিলিত হুক্কা রব থেমে গেল সারমেয় বাহিনীর তীক্ষ্ণ চীৎকারে।
জঙ্গলের পথ ধরে ক্রমে তারা উপরের দিকে উঠে এল।
নীচের দিকে জঙ্গল যতটা ঘন আর দুর্ভেদ্য উপরের দিকে ততটা নয়।
রাজকন্যা ফিস ফিস করে বলল, আর কতটা উপরে উঠতে হবে?
মেঘমালা বলল, আমরা প্রায় এসে গেছি।
এদিকেই কি সেই মন্দির?
হ্যাঁ এদিকে আদিবাসীদের একটা থান আছে ঠিকই কিন্তু আমরা সেই মন্দিরে যাচ্ছি না।
তাহলে আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমরা এখন একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
কে সে?
রাজকন্যা ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেসা করল।
রাজগুরু পই পই করে বারণ করে দিয়েছেন সন্ধ্যার পরে আজ রাজবাড়ির কেউই যেন বাইরে না থাকে। আর সেই কিনা এই ভুলটা করল?
মেঘমালা কি অন্য কোনো চাল চালছে?
নাহ, তাই বা হবে কেন? এসব কথা মাথায় আনাও পাপ।
হয়ত মেঘমালা জানেই না,কূল পুরোহিতের এই নির্দেশ।
রাজকন্যা এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে এক জায়গায় এসে থামল।
মেঘমালা বলল, ঘোড়া থামাও।
রাজকন্যা তাকিয়ে দেখল সামনে একটা প্রকান্ড মেহগনি গাছ। অন্ধকারময় সদেই স্থান।
তার গোড়ায় একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।

অন্ধকারের ভিতরেও রাজকন্যা বুঝতে পারল যুবক দীর্ঘদেহী এবং সুঠাম চেহারার অধিকারী।
এর আগে সে সোমদেবকে দেখেছে। তাই তাকে চিনতে কষ্ট হল না।
মেঘমালা এগিয়ে এসে বলল, অন্ধকারেও কি তাকে চেনা যাচ্ছে?
রাজকন্যা বলল, কিন্তু সোমদেব এখানে কী করছে?
আমিই তাকে আজ এখানে আসার কথা বলেছি।
তুমি বলেছ? এই রাতে, একাকী নির্জন অরণ্য ভূমিতে? কিন্তু কেন?
দাঁড়াও বলছি।
ঘোড়া থেকে নীচেয় নেমে এল চিত্রলেখা এবং মেঘমালা।
মেঘমালা বলল, সখী, তোমাদের সামনে ঘোর দুর্দিন। আজ এখনি যদি তুমি সোমদেবের সঙ্গে পালিয়ে না যাও তাহলে আজ রাতেই তাকে মরতে হবে।
কী বলছ!
রাজকন্যা শিহরিত হল। তার হাত পা ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগল।
রাকজন্যা যখন দেখল সেই গাছের গুঁড়ির সঙ্গে বাঁধা হয়েছে সোমদেবকে। সে শিহরিত হল। বুঝতে পারল মেঘমালার আশংকা সত্যি হতে চলেছে।

মেঘমালা বলল, আর কিছুক্ষণ বাদেই রক্ষীরা এসে তাকে নিয়ে যাবে দেবীর কাছে।
কোথায়!
অস্ফুটে উচ্চারণ করল রাজকন্যা।
দেবী রংকিণীর পুরানো মন্দিরে। সেই বনের ভিতরে যেখানে নরবলি হয় সেই স্থানে।
আজ কৌশিকী অমাবস্যা মনে আছে!
কিন্তু সখী সোমকে নিয়ে এখন এই রাতে আমি কোথায় যাবো, আর কীভাবেই বা যাবো।
চারিদিকে নগররক্ষীরা পাহারারত।
তাদের চোখ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া,-
আর কোনো উপায় নেই। হয় সোমকে দেবীর পায়ে বলি হতে হবে নচেৎ,-
ত হয় না, সখী। আমি যাই পিতার কাছে গিয়ে স্বীকার করি, তিনিই পারেন সোমকে রক্ষা করতে।
কী বলবে মহারাজের কাছে? বলবে, এই বন্দী আমার প্রাণেশ্বর! আমি একে ছাড়া বাঁচব না।
যদি তাই বলি?
পিতা কি আমার ক্রন্দন শুনবেন না?

তুমি জান না, তোমাদের এই প্রণয়ের কথা জানাজানি হওয়াতেই মহারাজ গোপনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুব নিকট জনের কাছ থেকে মহারাজ এই কথা জানতে পেরেছেন।
তাই নাকি?
হ্যাঁ, এমনকি আমিও জানতে পারিনি। আজ একটু আগেই জানতে পারলাম।
তাই তো সময় নষ্ট না করে দ্রুত পৌঁছে যাই আর তোমাকে নিয়ে আসি।
রাজকন্যা শংকিত হতে হতে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। যে করেই হোক আজ সোমকে বাঁচাতে হবে।
সে মেঘমালাকে বলল, বলো, এখন কী করবে?

ওদের এই জাতীয় কথোপকথনের ভিতরে ঘোড়ার পায়ের শব্দ কানে এলো।
রাজকন্যা বলল, সর্বনাশ! রক্ষীরা এসে গেছে বোধ হয়।
তাহলে উপায়!
ওরা তো আমাদের ঘোড়া চিনতে পারবে। এখানে ঘোড়া দেখলেই নিশ্চিত হবে। আমাদের এক্ষুণী এই স্থান ত্যাগ করতে হবে।
কিন্তু সোমদেব? তাকে না নিয়ে কোথায় যাবো বলতে পারো? এতে যদি আমার মৃত্যু হয় তাও রাজী আছি।
সোমকে ঘাতকের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমি কোত্থাও যেতে পারি না।
এমন অবুঝের মতো কাজ করো না। শোনো,-
তুমি বরঞ্চ পালিয়ে যাও সখি। আমার কপালে দেবী যা লিখে রেখেছেন তাই হবে। যদি তিনি আমার ভাগ্যে বিবাহ লিখে রাখেন তাহলে আজ রাতেই সোমের সঙ্গে আমার বিবাহ হবে।
চিত্রলেখা পাগলের মতো আচরণ করছে এখন।
বলছে, আর যদি মৃত্যু লেখা থাকে তাহলে তাই হোক আমাদের নির্মম পরিণতি।
মেঘমালা বলল, রাজকন্যা এসো তাহলে আমরা জঙ্গলে আত্মগোপন করি। কী হয় দেখি, তেমন সুযোগ যদি পাই মুসাফিরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাব।
চিত্রলেখাকে নিয়ে দ্রুত মেঘমালা সেই স্থান ত্যাগ করে ঘন জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করল।

চিত্রলেখা অন্ধকারের ভিতরে দেখল দুইজন রক্ষী ঘোড়া থেকে নামল।
এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে নিয়ে সোমদেবকে যে গাছের গুঁড়ির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল সেই গাছের কাছে এলো।
প্রথমে ওর মুখের বাঁধন খুলে দিল।
সোম প্রাণ ভরে শ্বাস নিল।
রাজকন্যা ভয়ে চোখ বন্ধ করল। দেবী রংকিনীকে এক মনে ডাকছে, মা মাগো, তুমি রক্ষা করো সোমকে।
গলা থেকে বিষাদক্ষিণ্ণ বাতাস বেরিয়ে এলো।
সে এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে, কেন সোম নিরুত্তর ছিল।
তাই সোম তাদের কথার কোনো সাড়া শব্দ দিতে পারেনি।
এরপরে রক্ষীরা তার হাত এবং পায়ের বাঁধন খুলে তাকে ঘোড়ার পিঠে উঠতে নির্দেশ দিল।
সোম শুধু একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল।
হয়ত বুকের গভীর থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এল।
সোম ঘন অন্ধকারের ভিতরে চারিদিক তাকিয়ে চিত্রলেখা আর মেঘমালাকে খুঁজতে লাগল।
ঘোড়া একেবারে তাদের খুব কাছ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
চিত্রলেখা সোমের গায়ের গন্ধ অনুভব করল।
ওদের ছেড়ে চলে গেছে চিত্রলেখা মেঘমালার হাত চেপে ধরল।
অন্ধকার রাত না হলে ওরা যতটা দূরে আছে সেই জায়গা থেকে ওদের ঠিক দেখতে পাওয়ার কথা ছিল।
খুব সাবধানে ওরা পরবর্তী ঘটনার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল।

সোমদেব নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হল। সে জানত এদের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া ততটা সহজ হবে না।
রক্ষি দুইজন সামনে এগিয়ে চলল।
কিছুক্ষণ বাদে চিত্রলেখা আর মেঘমালা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ল।
ঘোড়ার পিঠে চেপেই ওদের দূর থেকে অনুসরণ করতে লাগল।
চিত্রলেখার ঘোড়া খুবই সাবধানী আর বশংবদ।
অনেক যুদ্ধের সাক্ষী সে। তাই সে চিত্রলেখার ইশারা বুঝতে পেরে খুব ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।
তার পায়ের শব্দ যতটা সম্ভব গোপন করার জন্যে মেঘমালা এক ধরণের রাতচরা পাখিদের গলা নকল করে ডাকতে লাগল।
তাদের দুইজনের হাতে বড় বড় দুটো পাতা ভর্তি শাখা ধরা আছে এমন ভাবে যাতে তাদের এবং ঘোড়ার মুখ আড়াল করা যায়। রক্ষীরা ঘাড় ঘোরালেও যাতে তাদের বুঝতে না পারে। এমনিতেই তো পথ জঙ্গল আর ডালপালায় ঢাকা। সাবধানে পথ করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।
একেবারে নিঃশব্দে ওরা তাদের অনুসরণ করতে লাগল।

মেঘমালা দেখল অনেকটা চড়াইয়ে উঠে আবার নীচের দিকে কিছুটা নেমে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে ওরা রংকিনী দেবীর থানে যাচ্ছে।
এই সব পথঘাট কিছুই অজানা নয় মেঘমালার নিকট।
চিত্রলেখা পাগলিনীর কথাগুলো এক এক করে মিলিয়ে নিচ্ছে।
রক্ষীরা সোমদেবকে একেবারে রংকিণী দেবীর মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়াল।
ঘন অন্ধকারে ব্যপ্ত চারিদিক। কেবল মাত্র মন্দির প্রাঙ্গণ আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে আছে। পাথরে নির্মিত মন্দিরের সামনে দীপ জ্বলছে। সেই প্রদীপের আলো জঙ্গলের অন্ধকার সামান্যই দূর করতে সক্ষম।
চিত্রলেখা উল্টোদিকের জঙ্গলে অপেক্ষা করছে।
গর্ভগৃহে উপবিষ্ট মাতা রংকিণী। তার সামনে একটা দীপাধারে প্রজ্জ্বলিত আলোকে আলকিত গর্ভগৃহ। প্রদীপের আলো এসে পড়েছে মায়ের মুখে। রক্ত বেশ দেবীর, চোখ দুটি রূপোর পাতে তৈরী। আজ তাকে পরানো হয়েছে লাল রেশম বস্ত্র। কূল পুরোহিত এবং আরো দুইজন পুরোহিত ব্যস্ত পূজোর কাজে। আছে রাজপরিবারের কয়েকজন। রাজা জগৎদেব আসবেন কিছুটা সময় বাদে। গভীর রাতে শুরু হবে পূজো। রাজ পরিবারের বধূদের পালকিতে চাপিয়ে আনা হবে ঠিক পূজো শুরু হওয়ার সামান্য কিছু আগে তারপরে পূজো সমাপ্ত হলে অঞ্জলি দিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবারে তাদের পূজোতে আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা রাজ পুরোহিত বার্তা দিয়েছেন এবারে ঘোর অমঙ্গল নেমে আসতে পারে পরিবারের উপরে।
তাই এবারে পূজো হচ্ছে খুবই গোপনে এবং মাকে সন্তুষ্ট রাখা জন্যে দেওয়া হবে নরবলি। ছাগ কিম্বা মহিষ নয়, রীতিমতো নর রক্ত চেয়েছেন দেবী নিজেই ।
এটা স্বপ্নাদেশ।
তাছাড়া এবারে দ্বিতীয় প্রহরে লাগছে অমাবস্যা। এই ঘন জঙ্গল পথে রাজ পরিবারের মহিলাদের আনাটা শ্রেয় হবে না বলে মনে করলেন মহারাজ। তারা আসবেন ভোরের দিকে।
মেঘমালা দেখল রক্ষী দুইজন সোমদেবকে ঘোড়ার পিঠের উপর থেকে নেমে আসার নির্দেশ দিল।
সোম ধীরে ঘোড়া পিঠ থেকে নেমে পড়ল। চোখে মুখে বিহল্বতা। বুঝতে পারছে সামনে ঘোর বিপদ। কিন্তু তাকেই যে বলির জন্যে আনা হয়েছে সেটা অনুমান করতে পারছে না হয়তো বা। তারপরে তাকে মন্দিরের পাশে একটা গোপন কুঠুরির ভিতরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে শেকল তুলে দিল।

রক্ষী দুইজনের ভিতরে বাদল রইল বাইরে পাহারায়। আর মুরলী আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল।
মেঘমালা জানত মুরলী বনের কোন পথ ধরে যাবে এবং কোথায় যাবে।
রাজকন্যাকে বলল, সখী তুমি এই স্থানে অপেক্ষা করো। আমি একটু বাদেই চলে আসছি। আর এই নাও অস্ত্র যদি কেউ আসে নিজেকে রক্ষা কোরো।
মেঘমালা কোমরে গোজা অসিখানি এক টানে বের করে রাজকন্যার হাতে তুলে দিল।
আমি কীভাবে নিজেকে রক্ষা করব? আমি তো তরবারি চালাতেই জানি না।
ভয় নেই আমি আশেপাশেই আছি। তাছাড়া এই বনে বাঘ ভালুক কিছু নেই। থাকলে শিয়াল আর হায়না আছে। তারা ঘোড়া দেখলে কাছে আসবে না। তবু অস্ত্র থাকলে মনে জোর বারে।
তুমি যে নিরস্ত্র হয়ে গেলে।
আমার অস্ত্রের কী দরকার? আমি তো কারো সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছি না।
তাহলে কোথায় যাচ্ছ?
ফিরে এসে জানাব। এখন সময় নেই। দেরী হলে পাখি পালিয়ে যাবে।
মেঘমালা ঘোড়ার পিঠ থেকে দ্রুত নেমে অন্ধকার বনের ভিতরে অদৃশ্য হল।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes