
অরিজিৎ চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ
পাখির উড্ডয়ন কৌশল
সদর দরজার পেছনে বোলতা বাসা বেঁধেছে।
ভাবছি সকাল হলেই ভেঙে দেব বাসাটিকে।
ভাবছি সকাল হলেই একটা হাতবোমা বানিয়ে ফেলবো।
তারপর মানুষের আচরণের সঙ্গে মিলযুক্ত
শিম্পাঞ্জির তিনটি আচরণ উল্লেখ করে
তোমাকে বলবো আর কোনো কষ্ট নেই।
ব্যালকনি থেকে ঝূঁকে দেখবো ব্যক্তিগত
ভগ্নপথিক… সুতরাং মুহূর্তের জটিলতা…
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যপদ্ধতি…
মৌমাছিরা যদিও লাল রঙের প্রতি বর্ণান্ধ হয়।
বই
—–
পরিত্যক্ত গ্ৰন্থাগারের ভিতর
তোমার জরায়ু রাখা আছে।
নীলটুকু ঝরেঝরে সবুজ উড়েছে!
পূর্বপুরুষের লুকনো পিউপায়
জটিল পাঠক তাকে রমণের মতো টানতো
আর শব্দের ডানা থেকে
নেমে আসতো স্থির ও স্থাবর ছাপাখানাগুলি
জীবন
প্রতিষ্ঠা পাইনি বলে তুমি যত উপেক্ষা দিয়েছো– আমি তাকে বুকে নিয়ে ঈর্ষার মরাই বানিয়েছি। আর উপমাবিনীত সেই মেঠো পথে নিঃশব্দে তুলেছি মাথা। চোখের তারায় ঘড়ির কাঁটা ঘুরে গেছে। পাখিরা এসেছে খুঁটে খাবে বলে সকল জমানো অভিমান!
পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ গেয়ে চলে অপেক্ষার গান
প্রতিসরণ
আদর্শ প্রক্ষেপক রূপে যৌনকল্পনা কী জিনিস অবসাদ জানে না। তাই সংযোজন অপেক্ষা সম্ভাবনা আবিষ্কার করেছে জীবন
একটি হলুদ বর্ণের অপেক্ষায় লাল আলো পড়লে যেমন দেখায়… তোমার আমার দূরত্বে হত্যার সমূহ সম্মুখীন কবি ও ট্রামলাইনের মতো
হেঁটেছে নিশ্চুপ!
বিশ্বাস করবে কিনা জানিনা। আমিও পেয়েছি
সেই নিখোঁজের সুখ
শিকার
ঘুম আসছে না।
ভাবছি উবু হয়ে বসে চোখের
বিরহে কথা বলবো। কিন্তু কথা
বলতে পারলাম কই? অতর্কিতে
গোকুলে ঢুকে পড়েছি। শেষ ট্রেনে
বাড়ি ফেরার মতন উৎকণ্ঠা।
চেনা অপেক্ষার চোখেও ঘেমেছে রাত!
উঠোনে নার্সিসাস!
কিভাবে তাড়াবো তাকে?
পৃথার অদ্ভুত আয়নায় স্পর্শাতুর ছবি…
বিষ-পিঁপড়ে
কোনোকিছু গোপন রইল না। ঊনকোটী-তীর্থে দেখা হলো। ভাবলাম বৃষ্টি ছুঁয়েছে শ্রাবণের জল ভরা মাঠ। সাপ ও বেজির লড়াই প্রচন্ড যন্ত্রণা মেখে চুপি চুপি মুখ তোলে! দেখি কৌতুকী ওষ্ঠরেখা—
সহ্যে নিতে পারলে সর্ব সহা এসব। ঠিক পাপও নয় পুণ্যও নয়… কবি কিংবা দার্শনিকের মতো।
তোমাকে চৈতন্যডোবা ভেবে….
কবিতা হারিয়ে গেলে আর কি
কবিতা ফিরে আসে?
এই মরচে রঙের বিকেলে
এ্যান্টিসেফটিকের গন্ধ, ঘরে ফেরার গান, মঙ্গল প্রদীপের মতো মনে হয়।সমুদয় নির্জনতা অর্ধচন্দ্রের ম্লান আলোয় ঘিরে ধরে তাকে। আমি এক উপদ্রুত ব্যাধি অনুভব করি।
অ্যাম্বুলেন্সের নীল আলো মৃত্যু এড়িয়ে ছুটে যায়… নিমতলা শ্মশানের ঘাটে গাঁজার
আড্ডায় জ্যোৎস্নার নিবৃত্তি খুঁজে পাই পুনরায়…
বাড়িতে ফেরেনি যারা, বাড়িতে ফিরবে না যারা কোনদিন…তারাও কি দাঁড়িয়ে থাকে গন্তব্যের ইশারায়? যেন ফেলিনির ছায়াছবি হয়ে
তোমার কাঁপা কাঁপা অশ্রু ঝরে পড়ে…
অন্ধকার লাঠি হাতে রাস্তা পার হয়।
২.
সম্পর্ক বসে থাকে দুঃখিত বাসস্টপে।
তার গন্তব্যে কোন গতিধারাা নেই,
বলো আমি কি করি এখন?
ধ্রুবকের কোন ধ্রুবতারা আকাশে ওঠেনি আজ অসীম সংখ্যার ধারনায় আচরণের কল্পনা নিশ্চুপ বিজ্ঞানের মতো একা, প্রভু আতঙ্কিত হই, কভু মানুষই মাভৈঃ…
তবু অসীম দূরত্বের ভূত ও ভগবান
অচিন পাখির ঘরে অতীতের ধ্যান করে…
তুমিও নিজেকে লেখ ডাইরির না-লেখা পাতায়!
কবিতা হারিয়ে গেলে তোমাকে কি
ফিরে পাওয়া যায়?
রেটিনার অন্ধবিন্দু মিটিমিটি তারাদের খোঁজে
সাঁঝবিহানের দীর্ঘ নিকায় সসীমের আরাধনা করে
আমিও তির্যক তোমার ওপরে ঈষৎ ঊষ্মার
শৃঙ্গার ছুঁড়ে দিই
কলোনির ঘরে লোডশেডিং-এর ক্ষুধা
আলোপ্রার্থী হয়…
এমন বিঘ্ন দিনে বিঘ্ননাশক শুধু তোমার হৃদয়!
৩.
রমণের গোধূলি থেকে দু-একটি ঝরে পড়া ফুল হাতে তুলে নিয়ে ভাবি তোমার অপত্য হিংসায় এতো রডোড্রেনড্রন ফুটে আছে? আহা জীবনের কাছে এমন ভৌতযাপনের যদি প্রভা হয়ে যাই, প্রদীপের শিখার নিচে কেঁপে ওঠা কালোছায়া… আদিবাসী হাড়িয়ার পোড়া কলসের মতো ওই স্তনে আজো পুনরায়, পুনরায় আজো যদি বাল্যকাল ফিরে পাই… নিরুক্ত উদাসীন চাঁদে চাঁদমারি শুরু হবে জানি। আমার গৃহের পেখম নিঝুমের নগ্নতায় তোমাকেও তুলে দেবে নিদালির ধানছড়া খানি!
৪.
তারপর অতিমৃদু লন্ঠনের আলোয় অনুলোম বিবাহের কাহার এসে দাঁড়াবে অনিবার্য লগনের গায়ে… দশমী দুয়ার খুলে চলে যাবে তুমি
জাগরী নক্ষত্র পটে তালগাছ ধরবে বাতাস…আর আমাদের তীব্র গেঁয়ো অভিমান তোমাকে শোনাবে এক কীটদষ্ট অনন্তের গান
ভীষণ সেই নির্ঘন্টের পাশে পেট্রোলবাহী ট্রাকের ঝোলানো শিকলটির মতো নিজেকে মনে হবে নচিকেতা ব্রক্ষ্মাকে জানতে আসেনি! মৃত্যুর পর কি হয় দেখতে এসেছিল…
হে কবি “পৃথিবীর কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ গেয়ে চলে অপেক্ষার গান”। আমিও তোমার কবিতার অপেক্ষায় থাকি।
কতটা ক্ষরণ হলে বিরহ গাঁথা সন্ধ্যা প্রদীপের মতো নিস্পৃহ ছায়ায় খোঁজে নিঃশব্দ শব্দের শিশির পতন। আপ্লুত হলাম। অন্তরালের অবগুণ্ঠন খুলে শুভদৃষ্টিটুকু বাকি। জয় হোক ❤️
খুব ভালো লাগলো। বিস্মিত হলাম।
কত যুগ পরে অনুভবেরা দীপ্ত আলোর বন্যায়
ভাসিয়ে দিল, লেখো শুধু লেখো।
অনেকদিন পর কিছু ভালো ভিন্ন ধারার কবিতা পড়লাম
স্বতন্ত্র ভাষার অনবদ্য প্রকাশ