পর্ণশবরীর কথকতা ৩ এবং ৪

পর্ণশবরীর কথকতা ৩ এবং ৪

এমন ভোরে এ শহর নিষ্পাপ শিশুর মতো দেয়ালা করে। আড়ভাঙার আগে আরো একটু আদিম সরলতাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা। এ শহরে এখনো কিছু স্বপ্নের মতো বাসা আছে ভোরের প্রথম আলোয় যাদের চেনা যায়। মূহুর্তখানিক অপেক্ষা করতে সাধ হয় এমন বাসার কাছে।

নীলকণ্ঠলতার বঙ্কিম চলনে আঁকা তার সীমারেখাখানি, দুয়োরানির যত্নে সাজানো। পুরাতন শেওলা মাখা দেওয়াল বেয়ে কিছু কচি-কিশলয় তিরতির কাঁপে কিশোরীর নব-অঙ্কুরিত স্তনবৃন্তের মতো। এসময়ের বাতাস আলাদা।

ঘরের শীতল আঁধারে সাদা থান পরা বৃদ্ধা মা শুয়ে। চব্বিশ পরগণার গ্রামের সোঁদা বাতাস আর পুকুর-জলের ঠাণ্ডা এখনো লেগে রয়েছে সেই অশীতিপর শরীরে। সেই গন্ধ আর স্পর্শে পুরাতন একখানি তালপাতার পাখা বাঁধা লয়ে হাতে ঘুরে চলে।

এই ঘর, এই আঁধার, শীতল স্পর্শ, আলোচালের গন্ধ আমায় মায়ার ছায়াটুকু দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। যা নেই, যার অর্থ এ শহরের অজানা তার কল্পনার জলে আমি পায়ের আঙুলখানি ডুবিয়ে নিজেকে ভুলিয়ে রাখি। এটুকু স্নানের ভাগ দয়া করে ঈশ্বর আমায় দিয়ে রেখেছেন এখনো।

বেলা বাড়ে, বাড়ে আলো; ক্রমে ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসে স্বপ্নের চাদরখানির ঘনত্ব। ছেলেটি নিজে হাতে মায়ের দোরখানি রাঙিয়ে যায় সস্তা হলদে রং গুলে। বড়ো মায়া লেগে থাকে সে রং লেপনে, আমি তার উষ্ণতা পাই দূর থেকে। বাহিরের রোদমাখা ঘাসে পা ডুবিয়ে ডাক দেয় মাকে, ভিতর থেকে সাড়া আসে কি আসে না- উঠে চলে যায়। এদিকে আমি ভাবি নানা কথা, এলোমেলো-অগোছালো…
ভাবি, মাস পড়লে সাদার মধ্যে হলুদ ছোপানো একখান নরম সুতির কাপড় ছোটো ঘরটির দোরে রেখে আসব। মা যদি জলে ধুয়ে গায়ে ওঠান.. চোরের মতো মায়ার আচ্ছাদনগুলি খুঁজে বেরানো এখনকার স্বভাব আমার। যেটুকু সবুজ-শ্যাওলা-শীতল-কাঁঠালপাতার ছায়া খুঁজে পাওয়া যায় সেটুকু নিজের ছোটো দু’খানি হাত ঘিরে বেড় দিতে লোভ হয়।

এ শহর আমার নয়, শুধু বেঁচে থাকা শেষতম মায়া আর ছায়ার বিন্দুগুলি আমায় শ্বাসবায়ু জোগান দেয় আজকাল।

ঘর অথবা পর কারও হতে না পারা আমি শুধু দোয়েল অথবা ফড়িঙের জীবনের লোভে আবছা হয়ে আসা ট্রাম-লাইন ধরে হেঁটে ফিরি।

উত্তুরে হাওয়া গায়ে মাখা মেয়েটি সদ্য কদিন হল এই অস্থায়ী বাসস্থান পেয়েছে। এখনো তার সারা শরীরে পাহাড়ি নরম সবুজ শ্যাওলা আর মস-ফার্ণের বুনো গন্ধ। নাকের পাটার চারপাশে এখনো জমে আছে বিন্দু বিন্দু কুয়াশা। ওখানে তার সখিত্ব ছিল সমস্ত পাখিদের সঙ্গে। শীতকালীন উড়ন্ত একাকী চিল, বর্ষাকালীন বাঁশপাতি কিংবা টিয়াদের ঝাঁক আর মুখচেনা নাম-না-জানা বেশ কিছু পরিযায়ীদের দল; এরা সবাই জানত মেয়েটিকে। জানত বিষণ্ণ মনের মেয়েটি একলা চুপচাপ লোহার রেলিং ঘিরে দাঁড়িয়ে থেকে আকাশ-পাতাল ভাবেই শুধু, আর কিছু নয়। একটা গোল হলুদ বেড়াল আদুরে হাই তুলে মধ্যে মধ্যে পায়ের কাছে এসে বসত তার। এসময়ে কাঞ্চনমালার গল্প শেষে জারুলে ফুলে গাছ ভরবে সে জানে।

এদিকে এসে মেয়েটি আকাশের দিকে চাইলে আনমনে। যেমনটা তার স্বভাব। প্রখর রৌদ্র নির্মম তাপে তার শরীরের সঙ্গে মিশে থাকা কুয়াশার গন্ধটুকু শুষে নিতে চাইলে; আবছা হয়ে আসা দৃষ্টিতে ধরা দিলে কালো লোমশ দীর্ঘ ডানার অগুন্তি বাঁদুর। মুখে একটা অস্পষ্ট অন্ধকারের আঘাতে ভয় পেলে সে, চোখ নামিয়ে নিলে মাটির দিকে। চোখ নামিয়ে নেওয়াই চিরকালীন স্বভাব তার। ভয়, লজ্জা কিংবা সংকোচে চোখ নামিয়ে উত্তর খোঁজে সে। সময় পেরিয়ে যায়, খেয়াল থাকে না।

অন্ধকারের আঘাত তারপর থেকে তাকে বহুবার ভাবিয়েছে এই অস্থায়ী বাসস্থানটির কথা। ভেবেছে কিছুই স্থায়ী কি? এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ ভাগগুলিতে সময়ে সময়ে পায়ে ধুলো মেখে হেঁটে বেরিয়েছে সে। কত বছরের কথা সেসব…. কেউ মনে রেখেছে, বেশিরভাগই ভুলেছে তাকে। যদিও এ-ই নিয়ম। সে-ও কি সকলকে মনে রাখতে পেরেছে? মনে রাখতে চেয়েছে? যেখানে নিজের ঘরকে খুঁজেছে সে-ও তো আসলে অস্থায়ীই। নিজের বলে যে এই বিশ্বে কিছু হয় না এই অভ্রান্ত নির্মম সত্যটি ধীরে ধীরে আত্মিকরণের চেষ্টা করেছে সে। উপনিষদ পাঠে মন শান্ত হয় আজও তার। সংস্কৃতের বদলে বরং অনুবাদ কিংবা ভাবানুবাদ অথবা রবীন্দ্রনাথকে ধরে বোঝার চেষ্টা করে অস্থায়িত্বের মধ্যে স্থিরতার নির্দেশগুলিকে। এভাবে বাঁচতে শিখতে হয়। বয়স আর সময় নিজের মতো বয়ে যায়। অন্ধকার আর আলো ক্ষেত্রবিশেষে শিখিয়ে যেতে থাকে জীবনের কথা;

“বিরাট সৃষ্টির ক্ষেত্রে
আতশবাজির খেলা আকাশে আকাশে,
সূর্য তারা লয়ে
যুগযুগান্তের পরিমাপে।
অনাদি অদৃশ্য হতে আমিও এসেছি
ক্ষুদ্র অগ্নিকণা নিয়ে
এক প্রান্তে ক্ষুদ্র দেশে কালে।..”

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes