
সুদেষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
১.মৃগয়া
সাঁঝ প্রদীপের নীচে চোখ রাখলে কে যেন বলে যায়,” মোর্ প্রীতম আয়ো রি”। অঙ্গে তাৎক্ষণিক নুপুর বেজে ওঠে।যেন তাচ্ছিল্যভরে জাদু করে অগুনতি হৃদস্পন্দন তখন জলছবি আঁকছে। বিহঙ্গ প্রবল হয়ে উড়ে যেতে চাইছে বিহ্বলতা। অথচ কপাটে শিকল!
বর্ষণে বর্ষণে কেটে যায় যৌবন।প্রেমিকের ছদ্মবেশে ঢুকে পড়ে পুরুষ,গায়ে তার রক্তকরবীর চাঁদোয়া…
এরপর ছিন্ন ভিন্ন স্বপ্নের আলিঙ্গনে যৌনচাষের জন্য অছ্যুৎ হয়ে পড়ে থাকে পাংশুটে জমিন। নারীত্ব ও পৌরুষত্ব লিপ্ত কেবল বাঘবন্দি খেলায়। কে কাকে কৃপা করে রাধেশ্যাম!
বর্ষনের তীব্রতা বেড়ে ওঠে বজ্রপাতে। জ্বলে পুড়ে যায় বজ্রের আগুনে মাঠ ,ঘাট ,পথ ,প্রান্তর। মাঝরাতে জেগে থাকে শুধু বুকের পাঁজর কটা।কোনোদিন কেউ তবু ভালোবেসে খোঁপায় গুজে দিয়েছিল কস্তুরী মৃগ। সুগন্ধ একইরকম প্রবল ঋতু পরিবর্তনের গন্ডি পেরিয়েও। সে মৃগ গন্ডি পেরিয়ে ছুটে চলেছে মৃগয়া,ধীর পদক্ষেপে…
সন্ধ্যা
বিষাদঋণ জমানো নিমসন্ধ্যাকাল
বাতাস মরমরিয়া, বর্তমানে ঘাই মারে নীরববেলা অতীতের সুক্ষ্ম বিনিময় অরুন্ধতী হয়,
আকাশে ভাসে…
যতবার আকাশপানে চাই ততবার তৃপ্তির রেশ রেখে মিলিয়ে যায় কিছু মুখ। তারা আর ফিরে আসে না ঠিকই কিন্তু তাদের স্থান রত্নখচিত মুহূর্তের চোরাকুঠুরীতে।
কিছু দাগ তবু কেউ কেউ রেখে যায় ধূর্ত শিকারির।শিকারের পরবর্তী তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে পলায়ন করে সেঁধিয়ে যায় অন্ধকার গর্তে। দূরত্ব বহু গুণ প্রিয় হয়ে ওঠে সান্নিধ্যের চেয়ে।
ক্ষণিকের এই অসতবৃত্তি শিখিয়ে যায় ভবিষ্যতের একাধিক পঠন- পাঠন।
আর যারা থেকে যায় তারা জোনাকির পাঠানো আলোলিপি,তা দিয়ে লিখে ফেলা যায় সংক্ষিপ্ত বিবরণে একটা গোটা জীবন। এই জোনাকির আলো জমিয়ে বাঁচাতেই তো সুখ…
বিচ্ছেদ
আদতে পুষে রাখা অদ্বৈত কথালাপ
ওড়ে ছাই ,জমে ভস্ম।
রাখব না, রাখব না, করেও থেকে যায়…
থেকে যায় ঝরা পাতার গান, থেকে যায় ছেড়ে যাওয়া মাস্তুলের স্বরলিপি …
কান পাতলেই ভেসে আসে পরিচ্ছন্ন বিচ্ছেদ;
অভিযোগহীন, নিস্পাপ বিচ্ছেদ
মেঘলাযাপন
ঝুপ করে রাত নামলেই মৃত জোনাকির পোড়া ডানায় ঘুম পাড়ি দেয়,
সে ঘুমের সরণী বেয়ে অবশ স্মৃতিরা থমকে দাঁড়ায় তেমাথার মোড়ে;
অবুঝ ওরা
কেউ কী তবে মেঘ রোদ্দুর লুকোচরীর সাক্ষী হয়েই থাকবে?
অবিচল, অসম্পৃক্ত
আজও তেপান্তরের মাঠ পেরোলেই রেলগাড়ীর মতো পেড়িয়ে যায় কেউ
আর আমি সেই থেমে থেকে যাই শেষ স্টেশনে;
ফেরা হয় না …
“মনে পড়ে আমাকে?”…
জিজ্ঞেস করতেই আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে যায়,
বিশমিল্লার সানাই লবণাক্ত হয়ে ছুঁয়ে যায় মন,
ইবাদতে মগ্ন থাকে মেঘমল্লারের স্বরলিপি
হারিয়ে যায় …
জোছনা
জোছনাজল মেখে নদী বুনোহাঁস
আয়নার সামনে জানান দেয় শূন্যতা
চলে যেতে চেয়ে চলে গেছে যারা
একদিন সূর্যাস্তে ম্লান জবাটি।
ছাদে দাঁড়ালে একসময়
বিদায়বেলা গাঁথা হতো তালুতে,
খুঁজতে গেলেই ঝর্না,
থৈ থৈ উঠোন
কিছু বুনোহাঁস ছবি হয়ে যায় ,
পথে পড়ে থাকে গোটাকতক ঘাসের মেদুরতা সংসার
ভৈরো ধরে কেবল একদল ঘুমহীন কাক…