
সা বি না ই য়া স মি ন -এর কবিতা
।। শর্ত ।।
সকাল বিকেল সন্ধ্যে এমনকী গভীর রাতও
আমার কাছে নিঃশর্ত ছিল।
শুধু দুপুর টুকু ছিল শর্তে মোড়া।
আমার এই জোড়া হাত, পৃথিবী ধরে রাখতে চায় মুঠোয়।
তাইতো সঁপে দিলাম আমার চার আঙ্গুল কপাল সময়ের ডালায়।
সেই কপাল ফুটো করে ঢুকে পড়ল মহানদী।
যা কিছু লেখা ছিল সেখানে, ধুয়ে মুছে গেল সব।
ভালোবাসা এবং শর্ত একসাথে হাঁটতে পারে না কখনো।
উপাসনার জন্যও দরকার একটি শর্তহীন জীবনের!
এক বিস্তীর্ণ জলরাশি এবং পূর্ণিমা চাঁদ
আরো একটু এগিয়ে গেলেই পেয়ে যাব গন্তব্য, সূর্য উঠবে।
ভরসা ও প্রত্যাশা জিইয়ে রাখি।
জীবনের মাঠ পুরোটাই একটা যুদ্ধক্ষেত্র। অস্ত্র তুলছি কার বিরুদ্ধে?
শত্রু ! শত্রু কে ? কারা?
আরেকটু গভীরে যাও। যাও আরো গভীরে। গেলেই দেখবে
নিজের সারা শরীরে মেখে রয়েছ লোভ, হিংসা ক্রোধ ঘৃণা !
কে? কে বলল ? কে বলল কথাগুলো ?
শত্রুমুখ, বড্ড চেনা মুখ !
নিজেকে আমরা সবাই এতো ভালোবাসি, যা কিছু ভাবনা কাজ কৃতিত্ব সব
নিজের জন্য কেবল ! নিজের ভিটেমাটি শিকড়বাকড় ছাড়া বাকি সব
অবাঞ্ছিত অপাংক্তেয় অনধিকার স্বীকৃত।
সংরক্ষণ। তালিকাভুক্তকরণ। অর্গানিক উপভোক্তা উপকরণ
সবই বাগাড়ম্বর।
তাহলে
এই যে তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে বার বার ছুটে যাওয়া। –
তোমার জন্য জান কবুল আর মান কবুল বলে পিছু ধাওয়া –
তোমার জন্য তাজমহল, ইবাদতখানা, মঙ্গলঘট, গাঙ্গারতি ভোগ বিতরণ –
এসব মিথ্যে ? বানানো?
শত্রুমুখ ! বড্ড চেনা মুখ !
ক্ষমতার আস্ফালন – দানব দানব দাবানল খেলা। খোলা দরজার পাশে –
শত্রুমুখ ! বড্ড চেনা মুখ !
গলির বাঁকে বাঁকে যে রূপকথার জন্ম হল এতোদিন –
এবং স্লোগানে স্লোগানে পোস্টারে পোস্টারে ব্যানারে ফেস্টুনে
ভরা কোটাল মরা কোটালের যে গল্প বলা হল এতোদিন –
এবং সারিবদ্ধ ক্ষুধার্তের সামনে দানাশস্যের যে পসরা
সাজিয়ে রাখা হল এতোদিন –
সে সব ত্রিপল কথার ধাঁধা কেটে গেলে একদিন এসো।
পূর্ণিমার ভরা চাঁদের আলোয় মাঝরাতে বিস্তীর্ণ জলরাশি সাক্ষী রেখে তুলসী তেজপাতা
লবঙ্গ দারুচিনি সহযোগে গরম চা খেতে খেতে প্রখর লেলিহান সূর্য ওঠা দেখব দুজনে।
শত্রুমুখ ! বড্ড চেনা মুখ !
তবু…
অন্ধকার এবং কুয়াশা না কাটলে খুব ভালো ঠাহর হয় না কোনোকিছু !
কালবেলা
হৃদয়ের খুব কাছাকাছি,
দিগন্ত পারাবার ছুঁয়ে আছে গহিন কালবেলা,
ছুটছে জীবন কোন্ দিশায় কে জানে !
রাত যত গাঢ় হয়, গাঢ় হয় প্রত্যাশা,
এমন করে যেতে দেবনা তোমায়, আরো কিছুদিন থাকো পাশে,
আরো কিছুদিন পথ চলি একসাথে।
চার হাত মিলেছিল যেখানে, সেখানে এখনো পলাশ ফোঁটে,
শুধু দেখতে পাইনা আমরা কেউ। যে যার নিরাপদ দূরত্বের
পাহারাদার সেজে জীবন তুলে রেখেছি অনিশ্চিত আনাগোনার ফাঁক ফোঁকরে।
এমন তো কথা ছিলনা। ছিল কি ?
অন্ধকারের আড়ালে লুকিয়ে আছে
আমাদেরই মতো বিবর্ণ এক জোড়া পলাশ ফুল, কতকাল গুঁজে দাওনি খোঁপায়।
কতকাল তোমাকে দেখিনি ভালো করে। তুমিও দেখোনি আমাকে।
সময়ের প্রলেপ যতবার মুছি আরো ঝাপসা হয় সব।
ঝাপসা সময়ের দরবারে এ কোন্ আগন্তুক প্রহর গুণছে কেবল !
এতোখানি অচেনা নিজেকে লাগেনি কখনও আগে!
লেগেছিল কি ?
॥ নিষেধ আজ্ঞা ॥
তুমি নিষেধ আমার সাক্ষরলিপিতে
আমি নিষেধ তোমার সাক্ষরলিপিতে
আমরা আসলে নিষেধের আজ্ঞাবাহক।
নিষেধ কেন? কেউ জানে না।
নাজানাই থাকে রহস্যের চাদরে।
রহস্য ভেদ করে কেউ একজন নিষেধ মানেনি বলে
এই তুমি আমি আমরা মুখোমুখি।
তাকিয়ে থাকি। চুমু খাই।
হাতাহাতি মারামারি কিছুই বাদ যায় না আমাদের।
নিষেধ শুধুই ধ্বংসই করে। সরলীকরণ মুছে দেখ
সৃষ্টির মূলেও রয়েছে নিষেধের লম্বা হাত।
লম্বা হাত ছুঁয়ে ফেলে সেই সুফল। সফল হয় অভিযান।
মায়া ও মোহ দুই শরীর এক আত্মা। নিলাম হয় অভিসার।
নিষেধকেন্দ্রিক গণ্ডির একপ্রান্তে ঈশ্বর অন্যপ্রান্তে শয়তান,
দুজনেই হাসে, অঙ্ক কষে,
মানুষ মাত্রেই ভুল করবে। আজ না হয় কাল।
আগুন এবং মাটির সম্পর্ক সদা পরিবর্তনশীল,
সবর্দা বিনিময়প্রকরণযোগ্য।
নিষেধ আমাদের উদার হওয়া রুখে দেয়,
তেমনই সৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাও রুখে দেয় নিষেধ আজ্ঞা !
লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক