সব্যসাচী সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ

সব্যসাচী সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ

জোকার ও বসন্ত


পড়ব না পড়ব না করেও আবার একটা প্রেমে পড়ে গেল জোকার। মধ্যরাতের ডান দিকে বা বাঁ দিকে ঠিক যেখানে বিপজ্জনক সব হালুম ওত পেতে থাকে, সেই সব গলি ধরে শুরু হল তার পরিভ্রমণ। সে আবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিখুঁত ভাবে কামিয়ে ফেলল দাড়ি, বদলে ফেলল শ্যাম্পুর ব্র্যান্ড এবং ডাইনির সঙ্গে সম্ভাব্য ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে তৈরি করল নিজস্ব একটা আইফেল টাওয়ার।
প্রেমটা জমুক না জমুক, মাঝে মাঝেই নিস্তরঙ্গ দুপুরে সেই টাওয়ারের মাথায় উঠে নীলাভ একটা আলোর নীচে চুপ করে বসে থাকে জোকার। তার পর উঁকি দেয় নীচে। দেখতে থাকে, বাঁকানো সিঁড়ির কোথায় দাঁড়িয়ে হাঁফাচ্ছে ডাইনি, তার পরে উপরে উঠে আসছে আশ্চর্য এক অনিশ্চয়তার লোভে…


অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে ট্রেন চলে যাওয়ার কু ঝিকঝিক। শাঁখ বাজিয়ে সন্ধে দিচ্ছে কেউ। এইরকম একটা সময়ে হাজার হাজার মাইল দূরে ডাইনির ড্রইংরুমে উঁকি মারতে পছন্দ করে জোকার। কখনও সে দেখতে পায় এলোচুলের এক ডাকিনীকে, কখনও বা চোখে পড়ে চোখের কোণে ধেবড়ে থাকা কাজল। আলতো লেগে থাকা কয়েকটা ফোটা বৃষ্টি।
জোকার কী দেখতে পায় আর কী দেখতে চায়, এই কয়েক লাইন ছাইপাঁশে বোঝানো যাবে না। কিন্তু বহু বছর পরে সে আবার মনের মধ্যে চড়ুইয়ের কিচিরমিচির শুনতে পায়। এই বসন্তে নিশ্চিন্তে পা বাড়ায় সর্বনাশের দিকে।


সবাই যখন পাশে বসে এ তার, সে তার পিঠ চাপড়াচ্ছে, তখন প্রেমের গভীরতা মাপবে বলে সাদার্ন অ্যাভিনিউ ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে ডাইনির মুখটা দেখতে চেষ্টা করছিল জোকার। ঠিক এইরকম কিছু যে হতে পারে, জানত ডাইনি। সে প্রেমে পড়েনি, পড়তে চায় না। শাড়ি ও স্লিভলেস সামলে, দূরের অভিজাত সাঁতার ক্লাবের আলো দেখছিল সে। ধূসর রঙের বিশ্বস্ত একটা পাথর সে উড়ু উড়ু মনের সামনে সাজিয়ে রেখেছে। যাতে সেখানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায় তুখোড় প্রেমিক।
জোকার তুখোড় নয়, নদী ভালোবাসে। ডাইনি পাহাড়। কে কী ভালোবাসে, এর পর আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, বাড়ি ফেরার পথেই ডাইনি আবিষ্কার করে, আইসক্রিমের মতো গলে গলে পড়ছে সেই বিশ্বস্ত পাথর…

প্রেমটা না টিকলে কিসস্যু এসে যাবে না জোকারের। সে কাঁচি দিয়ে যে কোনও সন্ধেবেলা এক টুকরো চাঁদ কেটে বিছানার কোণে নিয়ে আসবে। তার পর সেই আলোয় হুইস্কির বোতল খুলবে। অক্সিডাইজ়ড যে সব গয়না সে ডাইনির জন্য কিনেছিল, সেগুলোর কী হবে? তুলে রাখবে আলমারিতে? ফেলে দেবে? এসব গুছিয়ে বলার জন্য জোকারের জন্ম হয়নি। মেঘলা রঙের স্ক্রিনসেভারের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্যও নয়।
তা হলে কীসের জন্য বাঁচা? অনেক আলোকবর্ষ দূরে জানালার খড়খড়ি ফাঁক করে বাইরে তাকানো সেই রহস্যময়ীর জন্য!

আঙুলের ফাঁক দিয়ে অনেক কিছুই গলে গিয়েছে জোকারের। প্রেম ভেঙেছে, প্রেমে পড়েছে, আবার ভেঙেছে। কিন্তু লন্ঠন আর নিস্তব্ধতা ছাড়া কিছুই সে মনে রাখেনি। বরং সূর্যাস্তে লেকের ধারে ডাইনির সঙ্গে বাদাম ভাজার লোভে রোজ ঘুম ভেঙেছে তার।
কুয়াশা জোকারের পাশের বাড়ি থাকে। আর ডাইনি ৫৭ নম্বর ধোঁয়াশা অ্যাভিনিউতে। এই দুইয়ের মাঝখানে কখনও সার্কাসের তাঁবু পড়ে, কখনও বা ফিসফিস করে কথা বলে কেউ। নেতিয়ে পড়া চাউমিনের মতো শুয়ে থাকে নিঃসঙ্গতা।
এসব নিয়ে জোকার উদাসীন থাকে। আবার একটা খুনখারাপি পরকীয়ার খোঁজে সে গড়িয়াহাটের দিকে হেঁটে যায়…

এ ভাবে বললে হয় না, ডাইনিকে বহুবার বলেছে জোকার। আঙুলের চাপে লিখে দিলেই সব হয়ে গেল? দ্যাখো, পাখি ডাকছে, ভোরের আলো ফুটছে আর অবৈধ সব নদী-নালা পেরিয়ে আবার জন্ম হচ্ছে একটা রূপকথার।
চমকপ্রদ সেই গল্প। অভূতপূর্ব সব বাঁক থাকবে প্লটে। যা তুমি একদিন তোমার লেখার টেবলে বসে ভেবেছিলে, কিন্তু কোনওদিন চার লাইনের বেশি এগোতে পারোনি…।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    ফজলুল হক 4 years

    এ সময়ের অনন্য কবি সব্যসাআী সরকারের কবিতাগুচ্ছ পড়ে খুব ভালো লেগেছে। আপাতসরল কাব্যভাষার এই কবির কবিতা আরও পাঠকপ্রিয়তা লাভ করুক, এ প্রার্থনা ।

  • comment-avatar
    Dr. Rajatkanti Sinhachaudhuri 4 years

    খুব সুন্দর কবিতাগুচ্ছ।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes