শিবু মণ্ডল -এর কবিতাগুচ্ছ

শিবু মণ্ডল -এর কবিতাগুচ্ছ

অমৃতের লোভে

শীতের করাল হাত থেকে, কুয়াশার কুজ্ঝটিকা থেকে ছাড়া পেয়ে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে দিন আমাদের পাষাণ বুকে। এদিকে পৃথিবীতে যত গুহা আছে তার বরফ গলে বেরিয়ে এসেছে সন্ন্যাসীর দল অমৃতের লোভে! পূর্ণকুম্ভের ওই তিন ফোঁটা অমৃত ছাড়া জাগতিক আর কিছুই চাইনা তাদের। নাগরিক দুঃখ-কষ্ট যাতনা-পাপ পিষে দিয়ে, মোহের ইট কাঠের উপর দিয়ে এগিয়ে চলেছে প্রদর্শনী অজগরের রহস্যের মতো। দু’মেয়ের দুটি হাত ধরে আমি ভিড় থেকে দূরে উঠে গেছি একটি দালান বাড়ির ছাদে।

দূর থেকে দেখি তাদের মৌন কারিকুরি, শুনি ধর্মের ধ্বনি! ধর্মের কাছে যেতে ভয় করে। দূর থেকেই তাদের বর্ণ দেখি, গন্ধ নিই, একটা দূরত্ব বরাবরই বজায় রাখার চেষ্টা করি অমৃতের লোভ থেকে। আমি মেয়েদের হাতদুটি ধরে থাকি। মেয়ের বয়সি যত মেয়ে আছে সবাইকে দূর থেকে দেখি। দূর থেকে তাদের বর্ণ দেখি, বাতাসে ভেসে আসা তাদের গন্ধ নিই দু’চোখ বুজে। দু’মেয়ের হাত ধরে ঘরপোড়া অন্ধের মতো রাস্তা পেরোতে থাকি। আমি দূরে যেতে থাকি তাদের স্পর্শের লোভ থেকে বাকি যারা আমার মেয়ের মতো।

কিছুতেই গন্ধকে আটকাতে পারি না; সে চলে আসে পিছু পিছু। এই মায়াগন্ধ, এই মোহটান মৃত্যুর পরেও আমাকে সোঁদা মাটির কথা মনে করাবে, পৃথিবীর কথা মনে করাবে, মনে করাবে আমাদের আদি জননীর কথা। আমি ফিরে ফিরে আসবো সেই অমৃতের টানে মহাজগতের কোনও এক অন্ধ গুহা থেকে…

একা ও বহু

সম্পর্কের মায়া নিচু স্বরেই বাজে কি? অনেককেই তো দেখি পুকুরের জলের মতো মায়ারঙ্গে ঘোলা হয়ে থাকে। তার স্বাদ উপভোগ করে। আবার অনেককে দেখি সংসারে থেকেও যেন মানুষটি সেই সংসারের কেউ নয়। তার ভাব এতটাই উদাসীন যেন মনে হয় সে সারা বিশ্বসংসারের। সবাই তার কাছে যেন একই সত্ত্বা বলে মনে হয়। মনে হয় সেই মানুষটি অনেক অনেক জন্মান্তরের পরেও আজো এই পৃথিবীতে মানুষ রূপে জন্মেছে। কত কত জন্ম ধরে কত দেশ ও মানুষের সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে সে। সেই সব স্মৃতি ও সেই জন্মের সংস্কার প্রচ্ছন্নভাবে আছে তার মধ্যে। এখনও পর্যন্ত যতগুলো জন্ম হয়েছে তার ততগুলো মা পেয়েছে, ততগুলো বাবা পেয়েছে, ততগুলো ভাইবোন, স্ত্রী, প্রেমিকা, বন্ধু, শত্রু, আত্মীয় – এই সংসারে যতরকম সম্পর্ক হয় সব পেয়েছে। জন্মে জন্মে সে যত স্ত্রী ও প্রেমিকা সে পেয়েছিল ততগুলো নারীর সাথে তার এই জন্মে প্রেমানুরাগে দেখা হতে পারে আবার দেখা নাও হতে পারে। তেমনি যত বন্ধু ও যত শত্রু সে জন্মে জন্মে পেয়েছে তত ভালোবাসা ও দ্বন্দ্বে সে জড়াতে পারে আবার নাও পারে। এতে বোঝা যায় যত সামনে যাবে, আরও যতগুলো আগামী জন্মের দিকে যাবে সে তত তার জীবন জটিল হবে। সে একা হতে পারবে না কখনো। তবে বহু হতে হতে উদাসীন থেকে উদাসীনতর হতে পারে সে। আবার যদি পিছনে ফিরে দেখা যায়। যেতে যেতে সম্পর্কগুলো ক্রমশ হ্রাস পেতে পেতে হ্রাস পেতে পেতে সে একা হবে নিশ্চিত। সেই একাকীত্বে একটা ভয় থাকবে। সেই একাকীত্বে একটা দোলাচল থাকবে নিশ্চিত। সেই ভয় ও দোলাচল থেকে মুক্তি পেতেই কি সে বহু হতেছে ক্রমশ…

নষ্টচন্দ্র

ছেলেটি যখন জন্মায় তার মাকে ধাইমা বলেছিল- ‘পোলারে সামলাইয়া রাখিস্‌। এই পোলার পালাইয়া যাইবার খুব সম্ভাবনা ! চাইরদিকে চোর ঘুর ঘুর করবো। ভাবের চোর! যদি তাগো পাল্লায় পড়ে তবে আর ধইরা রাখতে পারবি না ওরে।’ ছেলেটি তেমন কোনও চোরের পাল্লায় পড়ল না ঠিকই তবে এক রাতে জ্যোৎস্না দেখে সে চোর হয়ে গেল। বলা ভালো চাঁদের আলো তাকে চৌর্যবৃত্তি শিখিয়ে দিল। সে চাঁদের আলো দেখলেই সামনে যা কিছু দেখত সব চুরি করে নিত। কাক পক্ষীটিও টের পেত না।

সেইদিন পাড়ার একটি প্রাণীও তখন জেগে নেই। গোটা কয় গৃহস্থ ঘরে হ্যারিকেনের আলো। আখার আগুন প্রায় নিভু নিভু। ঘুমোতে যাবার আগে শেষ ধোঁয়ারেখা রান্নাঘরের ঝুলে আটকে গেছে। বনবিভাগের পাথুরে রাস্তা ধরে সে দক্ষিণ দিকে হেঁটে যায়। ডানদিকে খেলার মাঠে একটা ফুটবল থেকে দর্শকের উল্লাস ধ্বনি নিয়ে এক গোলপোস্ট থেকে অন্য গোলপোস্টে ছুটে বেড়াচ্ছে ছেলেটি। সে বল হচ্ছে , সে মাঠ হচ্ছে, সে খেলোয়াড়, সে দর্শক! সে একই সাথে জয় ও পরাজয়ের সম্পূরক। চাঁদের আলোতে সবকিছু এত স্পষ্ট দেখা যায়! সে সামনে যা পাচ্ছে লুটে নিচ্ছে। জোছনার প্লাবনে পাথুরে পথ ও চোরকাঁটা মাঠ একাকার।

সে নৈর্ঋতে তাকিয়ে থাকে। অনেক অনেক দূরে দৈত্যের মতো আলো জ্বলে আছে। বিশাল বিশাল অন্ধকার কুয়ার মতো কিছু দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। সে জানে ঐগুলি হল তেলের ট্যাঙ্ক। আসাম থেকে পাইপলাইনে করে সেখানে তেল এনে জমা করা হয় নাগরিক প্রয়োজনে। সেগুলোর ঠিক পরেই আরেকটি আলোর পুঞ্জ নীহারিকার মতো লম্বা হয়ে ছড়িয়ে আছে। সেখানে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে ট্রেন এসে দাঁড়ায় আবার চলে যায়। ছেলেটি সেই হুইস্‌ল শুনতে পায়। আর পরবর্তী হুইস্‌ল শোনার জন্য হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে বসে সেদিকে কান পেতে রাখে। এর মধ্যেই তার কানে আসে টিনের চালের মৃদু ঠন্‌ ঠন্‌ শব্দ। মনে পড়ে পাড়ার বন্ধুরা গৃহস্থের বাড়িতে ছোট ঢিল ছুঁড়ে দেখছে জেগে আছে কিনা। আজ নষ্টচন্দ্রের রাত! আজ এর ওর বাড়ির ফল মূলটা চুরিতে দোষ নাই। ছেলেটিই শুধু দলছুট হয়ে একা বসে আছে একলা চরাচরে পরবর্তী হুইসল শোনার অপেক্ষাতে…

দুই যুগ পার করে এসেও ছেলেটি খুঁজতে থাকে সেদিনের সেই চুরি করা সম্পদগুলি যা সে তার বন্ধুদের সাথে কোনোদিন ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিতে পারেনি। আজ আরেক ভাদ্রের শুক্লপক্ষে সে সেগুলি নিয়ে বসে আছে! আজও সে একাই। এর ভাগ সে কাকে দেবে!

স্লেটের মতো আয়তাকার এই মাঠে

বিকেলের রোদ যখন পশ্চিমের নীলগিরি বাগানে লুকোচুরি খেলে শিশুরা তখন মাঠে জমা হয়। খেলতে খেলতে তারা কখনো কখনো সেই গর্তটির কাছে চলে আসে; গর্তে ঝাঁপ দেওয়া শেখে; জাম্প করে পেরিয়ে যাবারও কসরত করে কেউ কেউ; না পেরে আবার গর্তেই পড়ে যায়। বাবার হাত ধরে খেলতে আসা সদ্য দৌড়তে শেখা শিশুটি এসব দেখে ভীষণ মজা পায়; হাততালি দেয়। তারপর সেই শিশুটিও বাবার হাত ছেড়ে গড়িয়ে নেমে পড়ে সেই গর্তে, আবার উঠে পড়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে। এদিকে বিকেলের রোদ আবাসনের নিমগাছের ডালে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে নমনীয় হয়ে ওঠে। নমনীয় হতে হতে সূর্য যখন লাল কুসুমের আকার ধারণ করে আর তা দেখে যখন আমার গোধূলিকে ভোর বলে ভ্রম হয় তখনই কোন ফাঁকে যে শিশুরা ফিরে যায় ঘরে আমি খেয়াল করি না। স্লেটের মতো আয়তাকার এই মাঠে শিশুদের এই পাঠ নেবার দৃশ্যটিও আমি কোনও ক্যামেরায় ধরে রাখতে পারলাম না।

স্লেটের মধ্যে লেখাগুলো পড়া হয়ে গেলে, শেখা হয়ে গেলে আমাদের শিক্ষক তা মুছে দিয়ে আবার অন্য কিছু লিখে দেয়; আমরা আবার সেগুলো পড়ি, শিখি, আবার মুছি। স্লেটের চারদিকে ঘিরে থাকা মার্জিনে আমাদের ঘরবাড়ি, মানুষের জন্ম-মৃত্যু, প্রেম-ভালবাসা-সম্ভোগ, স্নেহ-মায়া, ঈর্ষা ও দলাদলি; সবকিছুরই নোট থেকে যায়, থেকে যায় সঙ্কেত। মার্জিনের একপ্রান্তে সূর্য ওঠার পরে ছায়া রঙের মতো মহিষের যে দলটি মাঠ পেরিয়ে খাবারের সন্ধানে হেঁটে এসেছিল মার্জিনের অপর প্রান্তে সূর্য অস্ত গেলে সেই দলটি আবার ফিরে যায় মালিকের ঘরে। এভাবে আবহমান কাল ধরে তাদের যাতায়েতের কারণে একটি ধুলোপথ গড়ে উঠেছে স্লেটের কোণাকুণি। আপাত দৃষ্টিতে সরলরেখা মনে হলেও এখানেও আছে ছোট ছোট বাঁক মানুষের ভাষার মতো, আছে ধুলোবালির উড়ে গিয়ে আবার স্তিমিত হওয়া মানুষের কথার মতো। আছে এক রাখালের লাঠির ভঙ্গিমা ছায়াপথ জুড়ে…

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes