
রুদ্রদীপ চন্দ-র কবিতা
শ্মশান–বন্ধুর লেখা ১
জলের দাগ থেকে শ্বাস উঠে আসে। ভেবেছ কখনো স্বজন উঠোন অপেক্ষায় থাকে কতদিন? চাঁদ ওঠে, চাঁদ ভেঙে যায়।
তোমাকে খেলাব বলে যে বীণমন্ত্র দিয়েছিলে কানে, তাকে ঘিরে তেলাকুচো লাল, লতায় জড়ায়… এখন, অযত্নের ঘরে হাসি হয়ে ঝুলে আছ শুধু…
ওটুকুও ছিঁড়ে নেব শিকড় সমেত। চলে যাব। কোনো এক সুদূরে রেখে যাব এক উজ্জ্বল ক্ষত। কিছু ক্ষত বিধিমতে অক্ষত হয়।
শ্মশান–বন্ধুর লেখা ২
দেখি, খাক হয়ে পুড়ে যায় মায়া। পুড়ে যায় জন্মদাগ, লালিত রাত্রি। পোড়ো… আজীবনের সঞ্চয় শুধু রেখে দাও পাশে, রেখে দিও কিছু ভোরের শরীর।
এত ছাই, এত এত দপ করে জ্বলে ওঠা শিখা ভিড় থেকে গান ডেকে আনে। ছেঁড়া ফুল হয়ে লুটিয়ে পড়ল ঢেউ, বুকে যার এঁকেছিলে ভাঙাচোরা সাঁকোর ইতিহাস। সাঁকো আছে, শুধু শুকিয়ে গিয়েছে জল…
সনকার ঘাট জুড়ে পানা জমে আছে।
শ্মশান বন্ধুর লেখা ৩
হেলায় ভস্ম প্রায়। ধোঁয়া-পাকে কী দ্রুত মিলাও!
বেহায়া শ্মশান থেকে স্তম্ভিত শোক দূরে সরে যায়। মাতাল-বেলা তবুও মনে পড়ে কারো। ডুকরে ওঠা গান … দেবীর কাঠামো হয়ে ফিরে ফিরে আসে। ঘাটে।
এখন অপেক্ষা শুধু ইতিউতি চায়ে, চারণ অতীতে। পোড়া সময়ের এইপারে… বসে শুধু রূপোলি আঁশের এক মাছ। অধরা থাকবে না বলে মেখে নিচ্ছে তুমি-লেখা ছাই অকাতরে।
শ্মশান বন্ধুর লেখা ৪
আদিম অভ্যেসে নিভে যাও। ডোমের বাচ্চার কালো কার যেন, সেভাবেই নাভি-লোক আগুন সহায়। এসো… বুক জুড়ে স্নান হয়ে থাকো। ক্ষয়ে যাওয়া রঙেরা দেখো শশ্মান বন্ধুর কাঁধ হয়ে যায়।
প্রহর পেরোলে সব প্রলাপের মতো লাগে। এত আলো! কী প্রচন্ড হাস্য-উতরোল।
দেখো, স্থিত বাড়ির উঠোন। যে উঠোন সন্তান মৃত জেনেও নিজেকে নিকোয়। গাঢ়তম লালে কপাল রাঙালো এই…
শুধু মাঝে মাঝে হাওয়া দিলে, পাতা ছোঁয়া জল ছড়িয়ে ছড়িয়ে যায়… কাঁপ ধরে মগ্ন, নিরুচ্চার মন্ত্রের গলায়।