রিয়া ঢোল-এর কবিতাগুচ্ছ

শেষ অধ্যায়
( শ্রীঅলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শ্রদ্ধাস্পদেষু )

মেঘের উপর জানলাটা দিয়ে দিলাম।
আলোকরঞ্জিত দিন আজ শেষ।
আমরা কৃতজ্ঞ পাঁচের কাছে
নির্জন কবিতার কাছে সে জ্বেলে দিয়েছে
অমৃত আলো।
যে সত্তা কারাগারে বন্দী, পারছিনা মুক্ত করতে।
নিঃসঙ্গ।
কবিতা দিয়ে মুখ ধুয়ে নিচ্ছি তখন।
অঘ্রাণের শিখা নিভে গেলে
আর আসেনা রঞ্জন।
শূন্যতা ভাবতেই ঘিরে ধরে যৌবনবাউল।
তলে তলে টের পায় মায়া পৃথিবী।
এভাবেই কবিতা কান্না চেপে রাখবে।
সে জানেনা কী বলতে হবে, কী করে বলতে হবে?

আস্তাবল

শুধু মুক্ত ঘ্রাণ, প্রতি নিঃশ্বাসে আস্থা,আরও একটু আলো
নতুন আর কী বা চাইব কান্নাকাটির শঙ্খচিলে ভেসে?
আমি একটু আকাশকে ছুঁতে চাই এটুকুই।
ঊর্ধ্বমগ্ন আওয়াজ নির্ভীক তেজে বলেছিল
যুদ্ধটা আজ বড়ই কঠিন। ঘড়ির কাঁটাও টিকটিক
শব্দে এই কথাই বলেছিল। তবু জানি হয়তোবা
ক্ষমাহীন করাল গহ্বরে একমাত্র তুমিই সৃষ্টির
আশ্বাস। কথালিপি দিয়ে চিনেছি তোমায়।
কফি হাউসে খোলা জানলায়
তাই ধাপে ধাপে সাজিয়েছি ইচ্ছের গুপ্ত জোনাকি।
ওরা আলো দেয় বিন্দু বিন্দু
আমার প্রশ্বাসে জাগ্রত হয় ক্ষুধা।
সংশয় বুক চেরে তোমার, পাছে প্রাসাদের
কড়িবরগা হঠাৎ ভেঙে পড়ে।
বেরিয়ে এসো, গড়ো ইমারত। আস্থাবলে।

প্রাণ পদাবলি

তারপর সমস্ত অন্ধকার কেটে যায়।
ছড়িয়ে থাকে ধীর সুস্থ প্রশান্ত নদীজল।
সুরিয়ালিস্ট আতঙ্কের নীল ফিসফিসানির রঙ
আস্তে আস্তে ফিকে হয়, ঘুরে ফিরে গায় অচিন পাখির গান।
মন্থন ছাড়া উদগীরণ হয় না, হয় না চোখে জল
আসেনা শপথ। সেখানে তুচ্ছ হয় কালকেতু ফুল্লরার কিরাত কাহিনি। রক্তে ভাসে না লালকুমড়োর ফালি
জীবনে -যৌনতায়-অবিস্মৃতে গড়ে স্বপ্ন,
গড়ে আস্ত রঙে আবৃত জগৎ।
কাঁপা কাঁপা তরঙ্গদৈর্ঘ্য ভেসে ওঠে মাহেন্দ্র বেলায়।
প্রেম শক্তি জোগায়, রক্ষক হয়
শুরু হয় তাঁর অনন্ত দেবী দর্শন
প্রাণ পদাবলিতে।

বিপ্রলম্ভ

রক্তে ভেজা সেই দিন কলেজ,পুরস্কার আমি ও
একাকীত্ব। শহুরে আলখাল্লায় লুকিয়ে পড়া
আর্তি আমিই দেখেছি। কান্না ঝরার মাতালপোনা
বৃষ্টির ও চুল্লির যে জ্বলন্ত কার্বনের সঙ্গম
সেও আমিই দেখেছি। এরপর কত বিচ্ছেদ
কত আদিম গুল্মলতা, তবে কয়েকটি আমার ঐকান্তিকে
বড় কাঁদায়।
বিবাদ রহস্য প্রেম এতসব ছিল
তারও বেশি বন্ধু
শব্দহীনতার এক পরিপূর্ণ বাড়ি।
বেহাগের বিশ্রম্ভালাপে আকুতি।
আনন্দ-তারা রেস্তোরাঁ থেকে শপিং মল
চেতলার
আনাচে-কানাচে ঝরে পড়েছিল
তার তেলচিটে স্মৃতিরা।
বেড়া ভাঙে, ভাঙে আমাকেও
নীলচে কালচে আকাশেও সখ্যের স্বপ্ন ফুরায়।