
মীরা মুখোপাধ্যায়-এর কবিতা
ম্যাগনোলিয়া পয়েন্ট
যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেখানে এখন
অপার্থিব আলোছায়া, ম্যাগনোলিয়া ফুটে
স্নিগ্ধ করে রেখেছে সন্ধ্যাকে
আমি না, তোমার পাশে অন্য কেউ
হয়তো সূর্যাস্ত দেখছে নতুবা তোমাকে।
বেহালা পেরিয়ে যে ট্রাম হারিয়ে যাচ্ছে
অন্ধকার শহরের দিকে আমি তাতে উঠে পড়ি।
ম্যাগনোলিয়া পয়েন্টের পাশে
লোহার রেলিং ঘেরা খাদ
সেখানেও অন্ধকার……
শুধু তোমাকে রেখেছে আগলে আলোছায়া আর
অন্য কেউ ,অন্য দুটি হাত
রুটি -রুজি
অন্ধকার চিতাবাঘের মতো লাফ দিয়ে নেমে আসে
সীমান্তের ঘিঞ্জি শহরে
একটা ছোট্ট ঘর, তক্তপোষ,রান্না খাওয়া ….
কুলুঙ্গি আলো করে পুরোনো লক্ষীর পট।
ছোটো ছেলে অঙ্ক করে দরজার ওপাশে
ওকে যে দাঁড়াতে হবে !
কাজল পরতে পরতে মায়া ভাবে আজ
কাস্টমার এলে তাকে বলবে কটা টাকা বেশি দিতে
ছেলেটাকে ছাত্রবন্ধু কিনে দিতে হবে
মৃত্যু ও কবিতা
মৃত্যুর কোনো কবিতা হয় না
সে এক সপাট গদ্য
আমি মাঝে মাঝে মৃত্যুর পাশ দিয়ে হেঁটে আসি,
তার নিঃশ্বাসের বরফকুচি আমার গায়ে লাগে
সেখানে ছন্দ নেই অলংকার নেই।
মৃত্যুকে পার হয়ে এলে তারপর
কবিতার কথা মনে হয়
তখনই বৃষ্টি নামে
বাড়ি
আমার চারপাশে শুধু দুঃখ আর গলিঘুঁজি!
একটা ল্যাম্পপোস্ট থেকে অন্যটার দূরত্ব
এতো বেশি যে প্রায়ই আমি বাড়ি ফিরতে পারি না।
শীতের রাত্রি নামলে নির্জন রাস্তায়
দু এক ফালি আলো এ ওর সাথে কাটাকুটি খেলে
আমাদের শহরে এতো ছায়া জমলো কবে !
অন্ধকার হাতড়াতে হাতড়াতে ক্রমে আমি
জমাট শূণ্যতার মধ্যে নেমে পড়ি, আর
সেখানেই বাড়ি বানানোর কথা ভাবি
প্রেম
তোমাকে দেখেছি বলে বৈশাখে বৃষ্টি নেমেছে
ওড়নার ঢেউ থেকে উড়ে গেছে ভালোবাসা পাখি
আমি তো এখানে আগে বেড়াতে আসিনি
নামহীন বৃষ্টিকে আজ হঠাৎ কী বলে যে ডাকি!
তুমি কিছু বলছো না, দুরন্ত স্রোতের দিকে চেয়ে
কার কথা ভাবছো তা একবারও জানতাম যদি….
হয়তো কিছুই করা হয়ে উঠতো না,অথবা
গভীর ক্ষত আড়াআড়ি হৃদয় অবধি…..
ভিজে ফসলের মতো সেই ক্ষতে ঠোঁট রাখে
জ্যোৎস্নার রাত
তোমাকে ভেজাবে বলে নদীটি এঁকেছে পাশে
অবিকল দশম প্রপাত
লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড
স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক
মীরাদির কবিতা অনিবার্য এক পাঠ উদযাপন! অপূর্ব ব্যজনা খেলে যায় শব্দের মোহে, কে বলেছে রূপকের খোঁজে চলে যেতে হয় দূরে! বেঁচে থাকা উদ্দীপক হয়ে জাগরুক থাকে আমাদের সব উঁচুনীচু অনুভূতির খাঁজে খাঁজে। মীরাদি জানেন, এই আলোর সন্ধান জানা বলেই অবলীলায় লিখে ফেলেন -“মৃত্যুকে পার হয়ে এলে তারপর/কবিতার কথা মনে হয়/তখনই বৃষ্টি নামে”…আহা! অপরূপ! কবিতার কথা মনে হলে বৃষ্টি নামছে – এভাবে সহজের গভীরে কবিতাচেতনাকে অবস্থান করাতে পারার ম্যাজিকই তো মীরাদির কবিতা। আবার -“তোমাকে ভেজাবে বলে/নদীটি রেখেছে পাশে/অবিকল দশম প্রপাত”…কী আশ্চর্য শব্দশৈলীতে স্ফুরণ ঘটে যাচ্ছে ‘প্রেম’-এর, যাকে বুঝতে গিয়ে মানুষ সভ্যতার এতটা পথ উদভ্রান্তের মত হেঁটে এল!
অসামান্য এক অভিজ্ঞতা!