
বর্ণজিৎ বর্মন-এর কবিতা
গুচ্ছ কবিতা
দাম
দাম সেই মেঘকে দাও
যে মেঘ বৃষ্টি নামাবে
ভিজিয়ে দেবে হৃদয় মরুভূমির আনাচে কানাচে
বীজ থেকে চারা গাছ হবে
ফল ফুল হবে
শিশুদের মুখে হাসি ফুটবে উজ্জ্বলন্তী হবে ধরাধাম
দাম তাকেই দাও
যে ফুল সুগন্ধি ছাড়াই কাননে কাননে
বাস স্ট্যান্ড
বাস স্ট্যান্ডের ভিতরে ফুল স্টপের কোন জায়গায় নেই
গম গম করে ওঠে যাত্রীদের আওয়াজ
চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে শূন্যস্থানের শব্দ
তোমরা বলবে এ কেমন কথা ? বিশ্বাসযোগ্য নয়!
তোমার আর আমাদের বিশ্বাসের সেতুতেও কিন্তু শূন্যস্থান শব্দ করেই যাবে
আমরা একটা বাস স্ট্যান্ডের কথা বলছিলাম
যেখান থেকে আমরা সবাই যাত্রা শুরু করি
আর শেষ কোথায় করি কেউ জানিনা
সেখান থেকে শূন্যের আবির্ভাব
অভিমান
মেঘ আর বৃষ্টির কতটা অভিমান হলে
নদীর বুকে খরা দেখা দেয়
ফাল্গুনী তুমি কি তা জানো!
সমস্ত আসন্ন দিনগুলি বেমালুম অনির্বাচিত থেকে যায়
সভা ডাকি, জনগণ আসে
সই করে রেজুলেশন খাতায়,
তারা কি বুঝল সই এর অর্থ কি?
তারা কি বুঝল “বন্ধুগণ” শব্দটার মধ্যে
কতটা দূরত্ব লুকিয়ে আছে
না তারা কিছুই বুঝল না শুধু একটু অভিমান করে কফিনের দরজাটা বন্ধ করে দিল
রূপ
রূপের পর্দাটা খসে পড়ে না কোনদিন যতদিন তুমি থাকো
ফালাকাটার চা বাগানের বাতাস ধুপগুড়ির গায়ে এসে যখন লাগে
তখন শালিক জোড়া ও নিজেকে সুখী মনে করে
আসলে রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে বাতাস এল
বাতাসের তো কোন জাত নেই
কোন ধর্ম নেই
কোন রাজনীতিক দল নেই
কোন পতাকা নেই
তাই সে সবখানেই সব সময় চলে আসে
বিনা নিমন্ত্রণে বর্ষা হোক বা হেমন্তে
যা কিছু মুছে যাবার নয়
দেখো
প্রত্যেকটা ভোরের গায়ে লেখা আছে অরুন্ধতী আলো
প্রত্যেকটা ভোরের গায়ে লেখা আছে মায়ের আর্তনাদ
দেখো
তুমি যা বলছ সব সঠিক নয়
সব বেঠিকও নয়
এইভাবে চলে যাচ্ছে দুর্বাসা মুড়ির অভিশাপগুলো
আমরা পাপ বিদ্ধ হয়েও হচ্ছি না
দধীচি মুনির হাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে
আমরা সমৃদ্ধ হচ্ছি
কিন্তু দধীচি মুনির নামে কয়জন তপ করি
কথা
তোমার কথাগুলো আমার কাছে ডি কোড হয় বলে
উত্তর গুলো ফিরে যায় তোর্সার স্রোতে
অন্ধকার ডুবে যায় আলোর দেশে আলো হয়ে ওঠে
সমস্ত শৃঙ্খলা বোধের জানালাগুলো
আমি রাজহাঁস হয়ে পুকুরের জলে খেলা করি তখন
চাঁদ
সিঙিমারি নদীর জলে গোধূলির চাঁদ খেলা করে
পেটের খিদে যেমন মনকে দোলা দেয়
তেমনি জলকে চাঁদ দোলা দিচ্ছে অহরহ
শিল দুয়ার পাড়া থেকে ভেসে আসছে
অর্ধেক সিদ্ধ হওয়া ভাতের গন্ধ
টোটো ভর্তি মানুষ সিতাই অথবা চৌরঙ্গী ক্লাবের দিকে রওনা দিচ্ছে
আর কেউ কেউ শীতলকুচির যাত্রী-
পেটে চাঁদ ঢুকলে
এই দৃশ্যগুলো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
আনমনা হয়ে চেয়ে থাকে বাংলার দরিদ্র শালিক
অদূর ভবিষ্যতের দিকে
নিমন্ত্রণ
সেবার বর্ষায় কাঠুরে পাখিকে নিমন্ত্রণ করেছিলাম
ফিঙ্গে পাখির বোনের বিয়েতে
সে সযত্নে এসেছে, সঙ্গে বেনারসি শাড়ির গিফট প্যাকেট
এসে বাসর ঘরের শখের খাট
এর তিনটে পা খেয়ে নিয়েছে
কাক তা দেখে অবাক হয়ে গেছে
এখন নিমন্ত্রণ এর লিস্ট বানাতে গেলে অনেকবার ভাবতে হয়
চশমা
চশমাটা খুলে রাখতেই একটা
বিড়াল এ বাড়ি থেকে সে বাড়িতে লাফিয়ে চলে গেল
চশমাটা খুলে রাখতেই
আমাবস্যার পাপ লেগে গেল!
পথিক-
আরে মশাই আপনি কি রাজনীতির কথা বলছেন?
আজ্ঞে না ।
আচ্ছা বলুন তো চশমা আর রাজনীতির মধ্যে কি সম্পর্ক?