বনমালী মাল-এর ছোটগল্প ‘ কালা জাদু– সাদা জাদু’

বনমালী মাল-এর ছোটগল্প ‘ কালা জাদু– সাদা জাদু’

–আমাকে পেছনে ফেলে যাসনা রে…
–আর একটু… ওইতো দেখা যাচ্ছে…
–আজ কিন্তু আমি সামনে দাঁড়াবো…
–আচ্ছা! কাল নোংরা নালা থেকে সুন্দর নির্মল একটা পালক…
–আরে একটু তাড়াতাড়ি পা চালা…
–লোকটার শরীরের কোনো অংশই কিন্তু কেউ দেখতে পায়নি।
–সে তো আমাদের মতন সাধারণ লোক নয়!
–হ্যাঁ। সে ত ঠিক…
–নাহলে একটা রোগা প্যান্তা ছাগলকে সে ময়ূর বানাতে পারে!
–নাহলে একটা খালি সাদা জল ভর্তি গ্লাস চোখের নিমেষে…
–আর বলিসনা। ভাবতেই আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে…

মহকুমা শহরের সীমানা এখানটায় শেষ… পূর্ণচ্ছেদ দেওয়া যায় না। কর্পোরেশন বলে, সীমানা নিয়ে বিবাদ আছে। তবে অনুমান ভুল হলেও, দু’ দশ মিটার এদিক সেদিকের বেশি হবে না। মহকুমার শেষ সীমানায় ডাহি জমি। তারপর আরো অনেক বন্দ ডাহি। ক্যালানো। হাঁ কাড়া। জলসেচ ব্যবস্থা হয়েছিল কোথাও কোথাও। বিরাট এলাকা জুড়ে খরার দেবতা তাণ্ডব নৃত্য করছেন। যে কটা জলসেচ হয়েছিল, সেটা দৈন্যতা খেয়ে খেয়ে এখন শুধু বালি উগরাচ্ছে। যেখানে হয়নি, সেখানে এখুনি একটা আবড়া ছেলেই মনে হয়, ফিনকি ধরে মুতে দিয়ে গেল।
–আঃ… শালা কত হালকা হলাম বে…
–নাড়াগুলা উপড়ে নিয়ে ঘর চল, দেখবি কিছু না কিছু হয়ে গেছে।
–ভালো ধানের বীজ হয়ে যেতে পারে কিংবা এক মুঠা মোহর!
–কিন্তু… কী করে এসব হচ্ছে বল দিখি!
–তুই থাম ত। তোর এত সব জেনে লাভ কী বে?
–অাবে তরা চুপ কর না বে…
–কী জিনিস মাইরি! যা ইচ্ছা তাই করছে!
–আর বলিস না… একটা আস্ত মানুষকে মঞ্চে ডেকে পাথর বানি দিল!
–তারপর সেই পাথরের উপর মন খুশি কথা লিখছে ঠুঁকে ঠুঁকে…
–আবার বলছে, এসব আমারই কথা!

কয়েকদিন থেকেই এক জাদুকর এসে আস্তানা নিয়েছেন। এই ডাহি মাঠের এক প্রান্তে তাঁর মঞ্চ। সন্ধ্যায় নয়, তিনি জাদু দেখান দিন দুপুরে। যে যার কাজ ফেলে ভিড় করে লোকজন চলেছে সেইদিকে।

শুধু বর্ষায় চাষ হয় এখানে। বাকি দিনগুলিতে মোষ চরে ধুলো উড়িয়ে। এখন জাঁকিয়ে শীত। সীমানার কাছেই একটা কুটির। চালের খড় পচে হেজে দক্তা পাতার মতন হয়ে গেছে। বাতাসের ক্ষোভ ফেটে পড়লে মুঠো চেপে গুঁড়িয়ে দিয়ে যাবে যেন। কুটির থেকে বেরিয়ে আসে একজন। সামনের একটা আলে বসে পড়ে উৎকর্ণ হয়ে। বাইরের বয়স আন্দাজ সত্তরের ঘরে। সব চুলে পাক ধরেছে। খালি গা থাকার জন্য বুকের এক সময়ের চওড়া উপত্যকায় এক গাছি কাঁচা পাকা চুল। সে এখন ওখানেই স্থির বসে থাকবে জাদু দেখে ফেরা মানুষের পাল পেরোনো অব্দি। নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকা আগন্তুকদের নাড়া ভাঙার শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসছে।

–ধোঁয়া মাখিয়ে চারধার কেমন আবছায়া করে দিল!
–একটা শিশু হঠাৎ করে লোক হয়ে গেল!
–সে ত বুঝলুম, কিন্তু লোকটা আবার তক্ষুনি শিশু হয়ে মঞ্চে হামাগুড়ি দিতে লাগল!
–মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় ভাই!
–কাল মঞ্চে আরো অদ্ভুত সব দৃশ্য দেখাবে…
–কাল তো যেতেই হবে…

প্রতিটি সংলাপ, তাদের অবাক হওয়ার সুর, নাড়ার শিরদাঁড়ায় লাথি খাওয়া একা বসে থাকা লোকটাকে আগের থেকে আরো বেশি কান খাড়া আর চোখ মিয়ানো অথচ মনোযোগী করে তোলে। একটার পর একটা ছায়া হামাগুড়ি দিয়ে লোকটার পিঠ পেরিয়ে গেল। লাথি খেয়ে নাড়ার পেটের জল ছিটকে বেরিয়ে আসছে লোকটার পিঠে। ব্রহ্মতালুতে। প্রতি রাতে এখানে, মানে এই এলাকার চারপাশে দিন দিন কত ছায়া আর ব্রহ্মতালু বিক্রি হয়। একদিন নাকি ব্রম্ভতালুর চেয়ে ছায়ার দাম বেশি কেন এই নিয়ে দুই শেয়ালের মধ্যে ঝগড়াও বাঁধে।
–সবার কাছে ঘিলু খুব সুস্বাদু। ঘিলু বুদ্ধি নিয়ে খেলা করে। অতএব ঘিলুর দাম বেশি হওয়া উচিত।
–মানুষ যতক্ষণ বেঁচে থাকে, ঘিলুর দাম থাকে। মরে গেলে তা অনর্থক। কিন্তু মরে গেলেও ছায়া অনেক কাজে আসে।
পিঠ আর ব্রহ্মতালুর জল শুকিয়ে গেল। কয়েকটা বক তাদের ঠোঁটে মেঘ নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। ছায়া এখন বাসী। লোকটা কত কালের ক্লান্তি নিয়ে কুটিরের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে–
ভেঙে ঘুম রাজহাঁস, দেখে যেন রাজহাঁস
শামুকে বুলিয়ে পালক জাদুকর হাঁসফাঁস।
মঞ্চের ঘোর লেগে ধোঁয়া মেখে যায় কাল
কাগজের ফুল থেকে হয়নাকো চাল ডাল।।

লোকটার আগে আগে তার ছায়া হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে গেল কুটিরে। অবাক হয়ে যায়নি সে। শান্ত নির্লিপ্ত চোখে মেনে নিচ্ছে সব। কুটিরে ফিরে গিয়ে দেখে এক টুকরো মেঘ ঘরের ভেতর অটল দৃপ্ত ভঙ্গিতে মুথুন ছুঁয়ে বসে আছে। এটাও তাকে মেনে নিতে হবে। সে বুঝতে পারে, জীবনের ক্ষয়িত আশা ওই নাড়াগুলোর মতন দাঁড়া ঝুঁকিয়ে ক্রমে নেতিয়ে লেপ্টে পড়বে।

দু’ দিন। তিন দিন। পাল পাল লোক। জাদুকর। ঝলমলে মঞ্চ। অবাক চোখ। ফাটা হাঁ কাড়া মাঠ। নেতিয়ে পড়া নাড়া এখন আর চোখা চোখা শব্দ তোলে না। লোকটার একভাবে বসে থাকা। তার পিঠে ছায়ার জন্ম। পিছলে প’ড়ে ছায়ার মৃত্যু। আর প্রতিদিন সে বিষন্ন মনে ফিরে গিয়ে দেখে টুকরো টুকরো মেঘ জমা হয়েছে তার কুটিরের ভেতর। একটা ছোটো পাহাড় মেঘেদের সাথে গোপন আঁতাত করেছে যেন।

মাটির ঢেলা ভাঙা পায়ের শব্দ। ফাটল বাঁচাতে গিয়ে তাদের চলার তাল কাটছে। কেউ কেউ এতটাই স্তম্ভিত যে কথা বলছে না। কেউ কথা বলে বিস্ময়কে ক্ষয়ে যেতে দিতে চাইছে না। কেউ আবার বিস্ময় প্রকাশ করছে কথায় কথায়। মুখে চোখে।
বেরিয়ে এসে আলে বসেছে লোকটা। তার কুটিরে জায়গা দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে আসছে। টুকরো টুকরো মেঘ এখন স্বৈরাচারী হয়ে শাসানির চাউনি নিয়ে তাকায়।
–আজ কতো লোক, একদম থিক থিক করছিল!
–কালো পোশাকে জাদুকর! ভাবা যায়!
–শামুকটা ভিড়ের সামনেও মুখ বের করল!
–জাদুকর কিন্তু খুব দয়ালু…
–হ্যাঁ। মঞ্চে সবার সামনে রক্তপাত করেনি!
–কৌশলে শামুকের মাথাটা নিয়ে হওয়ায় উড়িয়ে দিল!
–আমিতো সামনেই ছিলাম, জাদুকরের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি!
–সে তো হবেই! এমন অসাধ্য সাধন করতে পারেন যিনি…

ছায়াগুলো দুলুনি খেতে খেতে লোকটার পিঠে আছড়ে পড়ল। আঁকিবুকি লুটোপুটি। পিছলে গেল। লোকটা উঠে দাঁড়াল এবং বিড়বিড় করতে করতে কুটিরের দিকে হাঁটা দিল। মুখে বিষন্ন হাসি–
ভেঙে ঘুম রাজহাঁস, দেখে যেন রাজহাঁস
শামুকে বুলিয়ে পালক জাদুকর হাঁসফাঁস।
মঞ্চের ঘোর লেগে ধোঁয়া মেখে যায় কাল
কাগজের ফুল থেকে হয়নাকো চাল ডাল।।

আজ কুটির দখল করেছে মেঘেরা। একটুও ফাঁক নেই। জবরদস্তি কুটিরে ঢুকে লোকটা যেন আরো বেফাঁদে পড়ে গেছে। এত কালো মেঘ একসাথে কখনো দেখেনি সে। মহকুমা শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একটা লোক আজ এমনভাবে খুন হবে! কালো দলা পাকানো মেঘ আজ তাকে সবথেকে দুর্বল দেখছে। যেন তারা কত নাক্ষত্র বছর অপেক্ষা করে আজ এমন সুযোগ পেয়েছে। আজ এখুনি রক্তপাত না ঘটিয়েই একটা লোক মেঘে মিশে যাবে!

মহকুমা শহরে একটি সংবাদ মাধ্যমে আলোচনা চলছে।
–আমাদের সঙ্গে আছেন মাননীয় বিধায়ক মহাশয়। আছেন বিরোধী দলনেতা। আর রয়েছেন পরিবেশবিদ। এবং আছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
আমাদের প্রাণের শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি কুটিরে এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। মৃত্যু পরবর্তী রিপোর্ট মতে এক পাহাড় প্রমাণ মেঘ চাপা পড়ে নাকি তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
পরিবেশবিদ:
কী করে একটি কুটিরের মধ্যেই এত মেঘ জমা হল, তা নিয়ে আমাদের ভেবে দেখতে হবে। প্রকৃতির ভারসাম্য যে নষ্ট হচ্ছে সে বিষয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। কিন্তু এত জায়গা ছেড়ে ওই কুটিরেই এমন কালো মেঘের জমা হওয়া– এটার কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক কারণ পাওয়া যাচ্ছে না।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ:
দেখুন, কোনো মানুষ একটি জিনিস পাওয়ার আশায় যদি বুক বেঁধে থাকেন অথচ দিনের পর দিন হতাশ হন, তবে ইলিউশন হিসেবে তিনি কালো মেঘের একটা সিম্বলকে সামনে পেতে পারেন, যা তাঁকে সর্বক্ষণ হন্ট করে বেড়াচ্ছে। হতে পারে আসলে তাঁর মৃত্যু অন্য কোনো কারণে হয়েছে, অথচ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ওই মেঘ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি।
বিরোধী দলনেতা:
আমরা শাসক দলের কাছে বারবার সুপারিশ করেছি, যাতে একটিও মানুষের ঘর কাঁচা না থাকে। পাকা ঘর হলে এই মেঘের চাপে মৃত্যুটি আটকানো যেত। এর দায় শাসক পক্ষকেই নিতে হবে। এই নিয়ে ওই মাঠের প্রান্তেই বিশাল লোকের জমায়েত ক’রে গত কয়েকদিনে আমরা তাবড় নেতাদের দিয়ে সভাও করেছি।
বিধায়ক:
দেখুন, আমাদের সরকারের আমলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। এই ক’দিন ধরেই ওই মাঠের এক প্রান্তে আমাদের দল সভা করেছে। জীবন কীভাবে আরো সুন্দর আর সহজ করে তোলা যায়, সেই নিয়ে আমাদের সরকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখছে না।

খবর দেখে পরদিন সকালে কত লোক ওই কুটিরের সামনে ভিড় করে। আজ জাদুকরের মঞ্চে তারা আর যাবে না। ছায়ায় ছায়ায় লুটোপুটি। কেউ একটাও টুঁ শব্দ করছে না। অবাক বনে গেছে তারা। কোনোদিন এত অবাক হয়নি। তাদের মুখে চোখে নির্ভেজাল অবাক হওয়ার তৃপ্তি আজ। ছায়াগুলো লেপ্টে লেপ্টে ফাটা হাঁ কাড়া মাঠ পার হচ্ছে।

মেঘের তলায় চাপা পড়ে থেঁতলে আছে লোকটা। জাদুকরের ভেলকিবাজির থেকে এই দৃশ্য ঢের বেশি রোমাঞ্চকর।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes