
নীলোৎপল গুপ্ত-র কবিতা
(১)
চৈতন্যপ্রপাত
ঘুম ভেঙে উঠে যাই উপরেই তারাদের বাড়ি
দু’দন্ড বসি না তবু, পলাতক, এমনই আনাড়ি
আলোর আড়াল খুঁজি, শূন্যমধ্যে, আঁধার শীতল
এ-চিন্তা কাঠামো এক, বাহ্যত, আসলে দ্বিতল
কৃষ্ণগহ্বরে ঢুকি, সরাসরি, আকর্ষণজনিত কারণে
পুড়ে যায় তনুমন ঢোকামাত্র বিপুল জারণে
চৈতন্য তবু থাকে জাগ্রত ফাঁকা গহ্বরে
ফলে কিছু স্মৃতি জমে স্বাভাবিক বোধের জঠরে
সেই বোধ সঙ্গে নিয়ে আকস্মিক ঘুম ভাঙার ফলে
ঊর্ধ্ব থেকে নেমে এসে সরাসরি পড়েছি ভূতলে।
(২)
ছুঁয়েছি দর্পণের আলো
নক্ষত্রে পতিত আছো যুগপৎ জল ও দ্রবণে
সে-সব গুহ্যরূপ ঈষৎ বিম্বিত দেখি
আজি এ সন্ধ্যায়
তথাপি পতনশব্দ দূরগামী, পশেনি শ্রবণে
শুধু স্মৃতি, ছিন্নতন্তু, ইতস্তত
আকাশে ছড়ায়।
ছুঁয়েছি দর্পণের আলো, আলগোছে
রাখি তর্জনী
মুহূর্তে উত্থিত যত কুহক-চূড়ায়
ভিন্নপথে সরে গেছি
নিগূঢ় ইঙ্গিতটুকু কেন যে বুঝিনি
বিষাদ তরলবস্তু, নিশিদিন
অন্ধকারে ধায়।
(৩)
পুকুর
কুহক-কথার ভেতরে নিচু সিঁড়ি
সিঁড়ির প্রান্তে এক গভীর পুকুর
পুকুরে মছের খেলা, মুখ-তোলা একটা শালুক
পাপড়িতে লেগে-থাকা জল—কাঁপে আলো
জ্বলে আর নিভে যায় বাসুকির চোখের মতন।
কুহক-কথার ভেতরে নিরন্তর জলশব্দ হয়
আখ্যান পিছনে রেখে অর্থ পেরিয়ে যায় ধ্বনি
ওপরে আমরা তার কিছু বুঝি, কিছু বা বুঝি না
শুধু মাঝেমধ্যে গহনের তল থেকে
চিতল-বোয়াল উঠে এসে
ঘাই মেরে জলকে কাঁপায়।
(৪)
তন্মাত্র পূর্ণ আমি
ফুলের সৌরভে কাঁপি ইতিউতি উথলায় মন
পানপাত্রে ওষ্ঠ ধরি হৃদিপদ্মে আকন্ঠ চুমুক
চুমুকে বিশ্ব টানি তারাভর্তি তীব্র মহাকাশ
বিস্ফারিত গতিচক্র খণ্ড খণ্ড ছড়ায় উদরে
ব্রহ্মাণ্ড পাকস্থলী সব অন্ন করে পরিপাক।
যখনই ছড়াই শূন্যে চরাচরজুড়ে রাখি হাত
তন্মাত্র পূর্ণ আমি আমাতেই ঊনকোটি প্রাণ
পতঙ্গ ধুলিকণা একই সঙ্গে জল ও পাথর
উল্লাসে নৃত্য করে রক্তরস লোহিত তরলে
তখনই তোমাতে আমি আমার ভিতরে তুমি তাই।
(৫)
বীজ
যে-পথে টেনেছো সেই অন্ধকার ভবিতব্য জেনে
উঠি-নামি কুয়োমধ্যে, অহরহ, টানা ও পোড়েনে।
অবশেষে ঝাঁপ দিই, সেই গর্তে, যার শেষে আলো
সেই তো শঙ্খের মতো মুখ দিয়ে আমাকে বাজালো।
বেজে উঠি ওষ্ঠমুখে, নাদশব্দে ছড়াই ভুবনে
বীজ কিছু পড়ে থাকে ছত্রখান গলিত দ্রবণে।
সাতকান্ডের পরে এইবার কাহিনিটি শোনো
তুমি ভাবছো মরে গেছে, ওরা কিন্তু মরেনি এখনো।
সে-আদিম কাল থেকে নিষ্ফল সে-বীজের প্রাণ
ওই দ্যাখো ডানা মেলে আকাশে আকাশে ধাবমান।